কাঠমিস্ত্রি ও সোনার কুঠার: এক অসাধারণ গল্প

🎧 Listen in Audio
0:00

কাঠমিস্ত্রি ও সোনার কুঠারের গল্প, বিখ্যাত গল্প | অনবদ্য গল্প subkuz.com এ!

প্রস্তুত রইল বিখ্যাত ও উৎসাহবর্ধক গল্প, কাঠমিস্ত্রি ও সোনার কুঠার

অনেক আগে একটা শহরে কসম নামে এক কাঠমিস্ত্রি থাকত। সে প্রতিদিন জঙ্গলে কাঠ কাটতে যেত এবং সেগুলো বিক্রি করে যে টাকা পেত, তা দিয়ে নিজের খাবার কিনত। তার দৈনন্দিন জীবন বহু বছর ধরে এভাবেই চলছিল। একদিন কাঠমিস্ত্রি জঙ্গলে একটা নদীর ধারে একটা গাছের ডাল কাটতে গাছে উঠল। গাছের কাঠ কাটতে কাটতে তার কুঠার নিচে পড়ে গেল। দ্রুত সে গাছ থেকে নেমে এসে তার কুঠার খুঁজতে লাগল। তার মনে হচ্ছিল নদীর আশপাশে তার কুঠার পড়ে থাকবে এবং খুঁজে পাওয়া যাবে। বাস্তবে তেমন কিছু হয়নি, কারণ তার কুঠার গাছ থেকে সরাসরি নদীতে পড়ে গিয়েছিল। নদীটি ছিল বেশ গভীর এবং তীব্র স্রোতের।

আধা থেকে এক ঘন্টা কাঠমিস্ত্রি তার কুঠার খুঁজতে থাকল, কিন্তু কুঠার না পেয়ে তার মনে হতে লাগল যে এখন আর তার কুঠার কখনোই ফিরে আসবে না। এতে সে বেশ দুঃখে পড়ে গেল। কাঠমিস্ত্রি জানত তার কাছে এত টাকা নেই যে সে নতুন কুঠার কিনতে পারবে। এখন সে তার অবস্থা দেখে নদীর ধারে বসে বসে কাঁদতে লাগল। কাঠমিস্ত্রির কান্নার শব্দ শুনে সেখানে নদীদেবতা এলেন। তিনি কাঠমিস্ত্রিকে জিজ্ঞাসা করলেন, "ছেলে! কী হয়েছে তুই এত কাঁদছিস কেন? তুই কি এই নদীতে কিছু হারিয়ে ফেলেছিস?" নদীদেবতার প্রশ্ন শুনে কাঠমিস্ত্রি তাকে তার কুঠার পড়ে যাওয়ার গল্প শোনাল। নদীদেবতা পুরো কথা শুনে কুঠার খুঁজে পেতে কাঠমিস্ত্রির সাহায্য করার কথা বললেন এবং সেখান থেকে চলে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর নদীদেবতা নদী থেকে বেরিয়ে এলেন এবং কাঠমিস্ত্রিকে বললেন যে আমি তোমার কুঠার নিয়ে এসেছি। নদীদেবতার কথা শুনে কাঠমিস্ত্রির মুখে হাসি ফুটে উঠল। তখন কাঠমিস্ত্রি দেখল যে নদীদেবতা তার হাতে সোনার রঙের কুঠার ধরে আছেন। দুঃখের মাঝে কাঠমিস্ত্রি বলল, "এই সোনার রঙের কুঠার আমার আদৌ নয়। এই সোনার কুঠার অবশ্যই কোনো ধনী ব্যক্তির ছিল।" কাঠমিস্ত্রির কথা শুনে নদীদেবতা আবার অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর নদীদেবতা আবার নদী থেকে বেরিয়ে এলেন। এবার তাদের হাতে রুপার কুঠার ছিল। এই কুঠার দেখেও কাঠমিস্ত্রি খুশি হয়নি। সে বলল, এটিও আমার কুঠার নয়। এটি অন্য কোনও ব্যক্তির কুঠার হবে। আপনি এটাই এই কুঠার দিয়ে দিবেন। আমাকে তো আমার নিজের কুঠার খুঁজতে হবে। এবারও কাঠমিস্ত্রির কথা শুনে নদীদেবতা সেখান থেকে চলে গেলেন।

পানিতে গিয়ে দেবতা এবার বেশ দেরি করে বেরিয়ে এলেন। এখন দেবতাকে দেখেই কাঠমিস্ত্রির মুখে বড় একটা হাসি ছিল। সে নদীদেবতাকে বলল যে এবার আপনার হাতে লোহার কুঠার আছে এবং মনে হচ্ছে এটিই আমার কুঠার। এমন একটা কুঠার গাছ কাটার সময় আমার হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল। আপনি এই কুঠার আমাকে দিয়ে দিন এবং অন্যান্য কুঠারগুলো তাদের আসল মালিকের কাছে পৌঁছে দিন।

কাঠমিস্ত্রির এত সততা ও নিঃস্বার্থতা দেখে নদীদেবতা বেশ ভালো লাগল। তিনি কাঠমিস্ত্রিকে বললেন যে তোমার মনে আদৌ লোভ নেই। তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে সোনার কুঠার তৎক্ষণাৎ নিয়ে নিত, কিন্তু তুমি তেমন কিছুই করোনি। রুপার কুঠারও তুমি নিতে অস্বীকার করেছ। তোমাকে শুধু তোমার লোহার কুঠারই চাই। তোমার এত পবিত্র ও সৎ হৃদয় দেখে আমি বেশ প্রভাবিত হয়েছি। আমি তোমাকে উপহার হিসেবে সোনা ও রুপা দুটোই কুঠার দিতে চাই। তুমি তোমার লোহার কুঠারের সাথে এগুলোও তোমার সততার উপহার হিসেবে রেখে দাও।

এই গল্প থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে - সততার চেয়ে বড় ধন এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই। ভালো ঈমানের মানুষের চারপাশে প্রশংসা হয়।

বন্ধুরা subkuz.com এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত ও বিশ্বের সাথে সংযুক্ত সকল ধরণের গল্প ও তথ্য সরবরাহ করে থাকি। আমাদের লক্ষ্য হলো এভাবেই আকর্ষণীয় ও উৎসাহবর্ধক গল্প সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এমনই উৎসাহবর্ধক গল্পের জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com

Leave a comment