মৃত্যু এই সংসারের সবচেয়ে বড় এবং অপরিহার্য সত্য। জীবনের সাথে সাথে মৃত্যুরও অস্তিত্ব আছে, যা প্রত্যেক প্রাণীর নিয়তি। আমাদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গ্রন্থগুলি এই সত্যকে স্বীকার করে মৃত্যুর পরের জীবন এবং সেই যাত্রার বর্ণনা করে যা আত্মাকে এই সংসার থেকে অন্য লোকে নিয়ে যায়। এমনই একটি প্রাচীন গ্রন্থ হল গরুড় পুরাণ, যা মৃত্যু এবং মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।
গরুড় পুরাণে এ কথাও উল্লেখ আছে যে, মৃত্যুর আগে ব্যক্তির সামনে কিছু অদ্ভুত এবং রহস্যময় দৃশ্য দেখা দেয়, যা মৃত্যুর সতর্কতা হিসেবে দেখা হয়। আসুন জেনে নিই গরুড় পুরাণ অনুসারে মৃত্যুর আগে মানুষের কী কী ৫টি জিনিস চোখে পড়ে, যা তার অন্তর্দৃষ্টি এবং আধ্যাত্মিক অবস্থার ইঙ্গিত দেয়।
১. নিজের ভালো এবং খারাপ কাজ মানুষের চোখে পড়তে থাকে
গরুড় পুরাণ অনুসারে মৃত্যুর কাছাকাছি আসতে আসতে ব্যক্তি তার পুরো জীবনের কাজের ঝলক দেখতে পায়। জীবনে করা ভালো এবং খারাপ কাজগুলি কোনো চলচ্চিত্রের মতো তার চোখের সামনে দিয়ে যায়। যখন ভালো কাজগুলি মনে পড়ে তখন ব্যক্তি শান্তি ও স্বস্তির অনুভূতি পায়, অন্যদিকে খারাপ কাজগুলি মনে পড়লে ভয়, উদ্বেগ এবং আত্মগ্লানি মনকে গ্রাস করে।
এই অভিজ্ঞতা ব্যক্তির শেষ সময়ে তার মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে এবং তার আত্মার যাত্রার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়। এই দৃশ্যগুলি তার জীবনের কাজের হিসেব অনুযায়ী তার পরবর্তী যাত্রা নির্ধারণে সাহায্য করে।
২. অদ্ভুত ছায়া দেখা দিতে থাকে
মৃত্যুর কাছাকাছি আসতে আসতে ব্যক্তি তার এবং তার আশেপাশের ছায়ায় পরিবর্তন দেখতে পায়। গরুড় পুরাণে উল্লেখ আছে যে, মানুষ ধীরে ধীরে নিজের ছায়া হারাতে থাকে এবং তার জায়গায় কিছু রহস্যময় এবং অজানা ছায়া দেখা দিতে থাকে। এটাকে ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হয় যে আত্মা শারীরিক দেহ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছায়ার এই ভ্রম এবং পরিবর্তিত রূপ ব্যক্তিকে মানসিকভাবে অস্থির করে তুলতে পারে, কিন্তু এটি মৃত্যুর অপরিহার্য প্রক্রিয়ার অংশ।
৩. মৃত মানুষের আত্মা দেখা দিতে থাকে
মৃত্যুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির তার প্রিয়জনদের অথবা কখনও কখনও এমন মানুষের আত্মা দেখা দিতে থাকে যাদের সাথে তার সম্পর্ক প্রেম অথবা শত্রুতা উভয়ই প্রকারের হতে পারে। গরুড় পুরাণ বলে যে, এই অভিজ্ঞতা ব্যক্তির মানসিক ও আধ্যাত্মিক অবস্থাকে প্রতিফলিত করে। যদি আত্মাগুলি ইতিবাচক মনে হয় তবে এটি ব্যক্তির জন্য সান্ত্বনা এবং শান্তির উৎস হয়, অন্যদিকে যদি আত্মাগুলি ভয় উৎপন্ন করে তবে ব্যক্তি চাপ ও ভয়ে ভরে যায়। এই আত্মাগুলির দেখা দেওয়া ইঙ্গিত করে যে মৃত্যুর সময় কাছাকাছি এবং আত্মা পরের লোকের যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
৪. यমদূতদের প্রকাশ
মৃত্যুর কাছে আসতে আসতে ব্যক্তির यমরাজের দূত यমদূত দেখা দিতে থাকে। গরুড় পুরাণ অনুসারে এই यমদূতরা মৃত্যুর আদেশ নিয়ে আসে এবং মৃতের আত্মাকে মৃত্যুর পরের লোকে নিয়ে যায়। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য থেকে ব্যক্তি বুঝতে পারে যে তার জীবনের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসছে। यমদূতদের প্রকাশ সাধারণত ব্যক্তির মনে ভয় এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করে।
রাতের বেলায় এই অভিজ্ঞতা আরও তীব্র হয়ে ওঠে, কারণ সেই সময় আধ্যাত্মিক শক্তি আরও সক্রিয় থাকে। यমদূতদের আগমন মৃত্যুর অপরিহার্যতার ইঙ্গিত দেয়।
৫. পূর্বপুরুষদের সাথে জড়িত স্বপ্ন দেখা দিতে থাকে
মৃত্যুর আগে মানুষের তার পূর্বপুরুষ বা পিতৃপুরুষদের সাথে জড়িত ছবি এবং স্বপ্ন দেখা দিতে থাকে। গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে যে, মৃতপ্রায় ব্যক্তির এমন স্বপ্ন দেখা দেয় যেখানে তার পূর্বপুরুষ বা মৃত আত্মাগুলি তাকে নিজেদের কাছে ডাকে। কখনও কখনও সেই স্বপ্নগুলি পুরানো স্মৃতি এবং ঘটনার পুনরাবৃত্তির মতো মনে হয়, যা ব্যক্তির মনকে আধ্যাত্মিকভাবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করে। এই স্বপ্নগুলি মৃত্যুর পরের যাত্রার জন্য মানসিক ও আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগ্রত করে।
গরুড় পুরাণের এই শিক্ষা থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?
গরুড় পুরাণ আমাদের বলে যে মৃত্যু কেবল শারীরিক অবসান নয়, বরং এটি আত্মার নতুন যাত্রার সূচনাও। মৃত্যুর কাছে ব্যক্তির সামনে যতগুলি দৃশ্য আসে, সেগুলি তার আত্মার শান্তি বা অশান্তির প্রতিফলন। ভালো কাজ ও খারাপ কাজ, ছায়ার পরিবর্তিত রূপ, মৃত মানুষের আত্মা, यমদূতদের আগমন এবং পূর্বপুরুষদের সাথে জড়িত স্বপ্নের আগমন- এগুলি সবই এমন ইঙ্গিত যা মৃত্যুর কাছাকাছি আসার সতর্কতা দেয়।
এই জ্ঞান আমাদের জীবনকে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। আমাদের কাজগুলি শুদ্ধ করা, সত্য ও পুণ্য কাজকে উৎসাহ দেওয়া এবং মৃত্যুর পরের জীবনের প্রস্তুতি করা-ই হলো সच्चा আধ্যাত্মিকতা। গরুড় পুরাণের এই রহস্যময় বর্ণনাগুলি আমাদের বলে যে জীবন অমূল্য এবং এটিকে সঠিকভাবে জীবনযাপন করতে হবে, যাতে মৃত্যুর ভয় না থাকে এবং আত্মার শান্তি হয়।