খ্যাতনামা ও প্রভাবশালী গল্প: নকল তোতা

🎧 Listen in Audio
0:00

খ্যাতনামা ও প্রভাবশালী গল্প, নকল তোতা

একদা কথার কথা, ঘন জঙ্গলে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। সেই বৃক্ষে অনেক তোতা বাস করত। তারা সবসময় এদিক-ওদিকের কথা বলে যেত। তাদের মধ্যে একটি ছিল মিঠু নামের তোতা। সে খুব কম কথা বলত এবং নীরব থাকতে পছন্দ করত। সবাই তার এই অভ্যাসের উপহাস করত, কিন্তু সে কখনো কারও কথা খারাপভাবে নিত না। একদিন দুটি তোতা পরস্পর কথা বলছিল। প্রথম তোতা বলল – “আমাকে একবার খুব ভালো আম পেয়েছিলাম। আমি সারাদিন খুব মজা করে তা খেয়েছিলাম।” এর উত্তরে দ্বিতীয় তোতা বলল – “আমাকেও একদিন আম পেয়েছিলাম, আমিও খুব মজা করে তা খেয়েছিলাম।” সেখানেই মিঠু তোতা নীরবে বসে ছিল। তখন তোতাদের প্রধান তাকে দেখে বলল – “আরে, আমাদের তোতাদের কাজই হলো কথা বলা, তুমি কেন চুপ করে থাকো?” প্রধান আরও বলল – “তুমি তো আমার কাছে আসল তোতা মনেই হচ্ছ না। তুমি নকল তোতা।” এতে সব তোতা তাকে নকল তোতা-নকল তোতা বলে ডাকতে লাগল, কিন্তু মিঠু তোতা তবুও চুপ ছিল।

 

এই সব চলতেই থাকল। পরে একদিন রাতে প্রধানের স্ত্রীর হার চুরি হয়ে গেল। প্রধানের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে এলো এবং সব কথা বলল। প্রধানের স্ত্রী বলল – “কেউ আমার হার চুরি করে নিয়েছে এবং সে আমাদের দলেরই কেউ একজন।” এটা শুনে প্রধান অবিলম্বে সভা ডাকল। সব তোতা সভার জন্য একত্রিত হল। প্রধান বলল – “আমার স্ত্রীর হার চুরি হয়ে গেছে এবং আমার স্ত্রী চোরটিকে পালিয়ে যাওয়ার সময় দেখেছে।” সেই চোর তোমাদের মধ্যেই কেউ একজন। এটা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। প্রধান আরও বলল যে, সে তার মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিল, কিন্তু তার ঠোঁট বাইরে দেখা যাচ্ছিল। তার ঠোঁট লাল ছিল। এখন সমগ্র দলের দৃষ্টি মিঠু তোতা এবং হিরো নামের আরেকটি তোতার উপর ছিল, কারণ দলে কেবলমাত্র তাদের দুজনের ঠোঁট লাল ছিল। এটা শুনে সবাই প্রধানকে চোরের সন্ধান পেতে বলতে লাগল, কিন্তু প্রধান ভাবল যে, এরা দুজনই আমার নিজের। আমি কিভাবে তাদের বলব যে, তোমরা চোর? তাই প্রধান একটা কাকের কাছে সাহায্য চাইলো।

আসল চোরের সন্ধান পেতে কাককে ডাকা হল। কাক লাল ঠোঁটওয়ালা হিরো এবং মিঠু তোতাকে সামনে ডাকল। কাক দুই তোতাকে জিজ্ঞাসা করল যে, তোমরা দুজনে চুরির সময় কোথায় ছিলে? এর উত্তরে হিরো তোতা জোরে জোরে বলতে লাগল – “আমি সেদিন খুব ক্লান্ত ছিলাম। তাই খাবার খেয়ে আমি সেই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেছিলাম।” সেখানেই মিঠু তোতা খুব কম আওয়াজে উত্তর দিল। সে বলল – “আমি সেই রাতে ঘুমাচ্ছিলাম।” এ কথা শুনে কাক আবার জিজ্ঞাসা করল – “তোমরা দুজনে তোমাদের কথা প্রমাণ করার জন্য কি করতে পারো?” এতে হিরো তোতা আবার বেশ জোরে বলল – “আমি সেই রাতে ঘুমাচ্ছিলাম। আমার ব্যাপারে সবাই জানে। এই চুরি মিঠুই করেছে। তাই সে এত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে?” মিঠু তোতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। সভায় উপস্থিত সব তোতা চুপ করে এ सब দেখছিল। মিঠু তোতা আবার কম আওয়াজে বলল – “আমি এই চুরি করিনি।”

এ কথা শুনে কাক হেসে বলল যে চোরের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রধানের সাথে সাথে সবাই অবাক হয়ে কাকের দিকে তাকাতে লাগল। কাক বলল যে চুরি হিরো তোতা করেছে। এতে প্রধান জিজ্ঞাসা করল – “আপনি কিভাবে বলতে পারেন?” কাক হেসে বলল – “হিরো তোতা জোরে জোরে বলে তার মিথ্যা সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করছিল, যখন মিঠু তোতা জানে যে সে সত্যি কথা বলছে। তাই সে তার কথা ধীরস্থির ভাবে বলছিল।” কাক আরও বলল – “তাছাড়া হিরো তোতা খুব বেশি কথা বলে, তার কথায় বিশ্বাস করা যায় না।” এর পর হিরো তার অপরাধ স্বীকার করল এবং সবার কাছে ক্ষমা চাইলো। এটা শুনে সব তোতা হিরো তোতাকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা বলতে লাগল, কিন্তু মিঠু তোতা বলল – “প্রধান মশাই, হিরো তোতা তার ভুল স্বীকার করেছে। সে সবার সামনে ক্ষমাও চেয়েছে। এটা তার প্রথম ভুল, তাই তাকে ক্ষমা করা যায়।” এ কথা শুনে প্রধান হিরো তোতাকে ক্ষমা করে দিল।

এই গল্প থেকে আমরা শিক্ষা পাই - কখনো কখনো বেশি কথা বলে আমরা আমাদের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলি। তাই প্রয়োজনের সময়ই কথা বলা উচিত।

আমাদের চেষ্টা হলো একইভাবে আপনাদের সকলের জন্য ভারতের অমূল্য সম্পদ, যা সাহিত্যকলা গল্পে রয়েছে, তা সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ধরণের প্রভাবশালী কথামালা গল্পের জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com

Leave a comment