বিখ্যাত ও প্রভাবশালী গল্প, শহরের ইঁদুর ও গ্রামের ইঁদুর
একদা দুটি ইঁদুর অতি মিলেমিশে বন্ধু ছিল। একটি ইঁদুর শহরে বাস করত আর অপরটি গ্রামে, কিন্তু উভয়েই একে অপরের খবর আনাগোনা করা ইঁদুরদের মাধ্যমে জেনে নিত। একদিন শহরের ইঁদুর তার বন্ধুর সাথে দেখা করার ইচ্ছা পেল, তাই সে তার বন্ধুকে গ্রামে আসার কথা তার বন্ধুর মাধ্যমে গ্রামের ইঁদুরকে জানিয়ে দিল। গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুর আগমনের সংবাদ শুনে বেশ খুশি হল। সে তার বন্ধুর আগমনের প্রস্তুতি শুরু করল। পরদিন শহরের ইঁদুর তার বন্ধুকে দেখতে গ্রামে এল। গ্রামের ইঁদুর বেশ উৎসাহের সাথে তার বন্ধুর আতিথেয়তা করল। দুজনে অনেক কথা বলল। কথার মাঝে গ্রামের ইঁদুর বলল, ‘শহরে তো অনেক দূষণ হয়, তাই না? কিন্তু এখানে গ্রামের পরিবেশ বেশ পরিষ্কার।’
এই সব কথা বলার পর দুই ইঁদুরেরই ক্ষুধা পেয়ে গেল। গ্রামের ইঁদুর বেশ ভালোবাসার সাথে তার বন্ধুকে কিছু ফল, রুটি ও ডাল-ভাত খেতে দিল। দুজনে একসাথে বসে খুব মজা করে খাওয়া-দাওয়া করল। খাওয়ার পর তারা গ্রামের ঘুরে দেখার জন্য বের হল। দুজনে গ্রামের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করল। গ্রামের সবুজের দৃশ্য দেখিয়ে গ্রামের ইঁদুর শহরের ইঁদুরকে জিজ্ঞাসা করল, ‘শহরেও কি এমন সবুজের দৃশ্য আছে?’ শহরের ইঁদুর এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না, কিন্তু তার বন্ধুকে শহরে আসার আমন্ত্রণ জানালো। সারাদিন ঘুরে বেড়ানোর পর দুজনে রাতে খাওয়ার জন্য বসল। গ্রামের ইঁদুর আবার তার বন্ধুকে ফল ও শস্য খেতে দিল। দুজনে খেয়ে শুতে গেল।
পরদিন সকালে গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুকে নাস্তায় আবার ওই একই ফল ও শস্য খেতে দিল। এটা দেখে শহরের ইঁদুর রেগে গেল। সে গ্রামের ইঁদুরকে বলল, ‘তোমাদের এখানে কি সব সময় একই খাবার খাওয়া হয়? এগুলো ছাড়া আর কিছু খাবার নেই?’ শহরের ইঁদুর তার বন্ধুকে বলল, ‘চলো এখনই শহরে যাই। সেখানে দেখবে কত আরামের জীবন আর কত রকমের খাবার আছে।’ গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুর সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হল। দুই ইঁদুরই শহরের দিকে রওনা হল। শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। শহরের ইঁদুর একটি বড়ো বাড়ির গর্তে বাস করত। এত বড়ো বাড়ি দেখে গ্রামের ইঁদুর অবাক হয়ে গেল। তারপর সে দেখল টেবিলে নানা রকম খাবার রাখা আছে। দুজনে খাওয়ার জন্য বসে গেল।
গ্রামের ইঁদুর একটি পনিরের টুকরো খেল। সে পনির খুব পছন্দ করল এবং তা তৎক্ষণাৎ খেয়ে ফেলল। এখনও দুজনে খাচ্ছিল তখনই তাদের বিড়ালের ডাক শোনা গেল। শহরের ইঁদুর গ্রামের ইঁদুরকে দ্রুত গর্তে ঢুকে যাওয়ার জন্য বলল। সে বলল, ‘বন্ধু দ্রুত গর্তে ঢুকে যাও, নাহলে বিড়াল আমাদের ধরে নেবে।’ তারা দুজনে দৌড়ে গর্তে ঢুকে গেল। গ্রামের ইঁদুর বেশ ভয় পেয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর বিড়াল চলে গেল এবং দুজনে বের হল। শহরের ইঁদুর গ্রামের ইঁদুরকে সাহস দিয়ে বলল, ‘এখন আর ভয় নেই বন্ধু, বিড়াল চলে গেছে। এ সব তো জীবনের অংশ, সাধারণ ব্যাপার।’ এরপর তারা আবার খাওয়া শুরু করল। এখন গ্রামের ইঁদুর রুটি খেতেই শুরু করেছিল যে দরজায় আওয়াজ হল এবং একটা ছেলে একটি বড় কুকুর নিয়ে ভিতরে ঢুকতে লাগল।
গ্রামের ইঁদুরের ভয় আরও বেড়ে গেল এবং সে এ ব্যাপারে শহরের ইঁদুরকে জিজ্ঞাসা করল। শহরের ইঁদুর গ্রামের ইঁদুরকে প্রথমে গর্তে ঢুকে যাওয়ার জন্য বলল। তারপর গর্তে লুকিয়ে গ্রামের ইঁদুরকে জানালো যে কুকুরটি বাড়ির মালিকের, যে সবসময় এখানে থাকে। কুকুর চলে যাওয়ার পর দুই ইঁদুর গর্ত থেকে বের হল। এবার গ্রামের ইঁদুর আগের চেয়েও বেশি ভয় পেয়ে গেল। শহরের ইঁদুর গ্রামের ইঁদুরকে কিছু বলার আগেই গ্রামের ইঁদুর যাওয়ার অনুমতি চাইল। গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুকে বলল, ‘তোমার এত সুস্বাদু খাবারের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, কিন্তু আমি এখানে প্রতিদিন আমার জীবন ঝুঁকির মধ্যে রেখে থাকতে পারব না বন্ধু। সুস্বাদু খাবার এক জিনিস আর জীবনের মূল্য অন্য জিনিস।’ এই বলে গ্রামের ইঁদুর শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে রওনা হল। গ্রামে পৌঁছে সে শান্তির নিশ্বাস ফেলল।
এই গল্প থেকে আমরা শিক্ষা পাই- ঝুঁকিপূর্ণ আরামের জীবনে কখনো শান্তি মিলবে না। সরল কিন্তু নিরাপদ জীবনই সুখী জীবন।
আমাদের চেষ্টা হলো একইভাবে আপনাদের জন্য ভারতের অমূল্য সম্পদ, যেগুলো সাহিত্য ও গল্পে আছে, সেগুলো সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ধরণের প্রভাবশালী গল্পের জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com