মহাদেবী বর্মা ছিলেন হিন্দি সাহিত্যের একজন অতুলনীয় কবি, লেখিকা ও শিক্ষাবিদ। তাঁকে হিন্দি কবিতার ছায়াবাদী যুগের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর রচনায় কেবলমাত্র কোমল অনুভূতি ও সৌন্দর্যের চিত্রায়নই নয়, তাতে সামাজিক চেতনা ও নারী স্বাধীনতার ঝলকও পাওয়া যায়।
জীবন পরিচয়
মহাদেবী বর্মার জন্ম হয় ২৬ মার্চ ১৯০৭ সালে উত্তরপ্রদেশের ফর্রুখাবাদ জেলায়। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক সম্পন্ন ও শিক্ষিত পরিবারে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা হয় ইন্দোর ও প্রয়াগরাজে। প্রয়াগ মহিলা বিদ্যাপীঠ থেকে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং পরবর্তীতে সেখানেই প্রধান শিক্ষিকা ও কুলপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সাহিত্যিক অবদান
মহাদেবী বর্মার সাহিত্যিক অবদান অত্যন্ত ব্যাপক ও প্রভাবশালী। তাঁর কবিতাগুলি প্রধানতঃ বেদনা, প্রেম, সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতায় পরিপূর্ণ। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল "নিহার," "রশ্মি," "নীড়জা" এবং "সান্ধ্যगीত"। এই সংগ্রহগুলিতে তাঁর কোমল অনুভূতি ও নারী বেদনা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। গদ্য সাহিত্যেও তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। "শৃঙ্খলার কড়ি" নামক তাঁর গ্রন্থটি ভারতীয় নারীর যন্ত্রণা ও সমাজে তাঁদের অবস্থান তুলে ধরে। এছাড়া "অতীতের চলচ্চিত্র" ও "স্মৃতির রেখা" ইত্যাদি রচনা তাঁর আত্মজীবনীমূলক সাহিত্যের অংশ।
নারী জাগ্রত ও সমাজ সংস্কার
মহাদেবী বর্মা কেবলমাত্র সাহিত্যিকই ছিলেন না, তিনি একজন সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। তিনি নারী স্বাধীনতা ও সবলীকরণের জোরালো পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁর মতে, নারীকে পুরুষের সমান অধিকার ও সম্মান পাওয়া উচিত। তাঁর রচনাগুলিতে ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থা নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করা হয়েছে।
সম্মান ও পুরস্কার
তাঁর অসাধারণ সাহিত্যিক অবদানের জন্য মহাদেবী বর্মাকে বহু প্রতিষ্ঠিত পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ১৯৫৬ সালে তিনি পদ্মভূষণ এবং ১৯৮৮ সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং সাহিত্য অকাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
মৃত্যু
মহাদেবী বর্মার মৃত্যু হয় ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ সালে। তাঁর জীবন ও সাহিত্য আজও হিন্দি সাহিত্য প্রেমীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।