জাতক কথা: গৌতম বুদ্ধ এবং ডাকাত অঙ্গুলিমানের গল্প। প্রসিদ্ধ হিন্দি গল্প। পড়ুন subkuz.com-এ !
উপস্থাপিত করা হল প্রসিদ্ধ জাতক কথা: গৌতম বুদ্ধ ও অঙ্গুলিমান
মগধ দেশের জঙ্গলে এক দুর্ধর্ষ ডাকাতের রাজত্ব ছিল। সেই ডাকাত যত লোককে হত্যা করত, তাদের প্রত্যেকের একটি করে আঙুল কেটে মালা বানিয়ে গলায় পরত। এই কারণে ডাকাতকে সবাই অঙ্গুলিমান নামে জানত। মগধ দেশের আশেপাশের সব গ্রামে অঙ্গুলিমানের আতঙ্ক ছিল। একদিন সেই জঙ্গলের কাছেই এক গ্রামে মহাত্মা বুদ্ধ এসে পৌঁছলেন। সাধুর বেশে তাঁকে দেখে সবাই খুব ভালোভাবে অভ্যর্থনা জানাল। কিছুক্ষণ সেই গ্রামে থাকার পরেই মহাত্মা বুদ্ধের একটু অদ্ভুত লাগল। তখন তিনি লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনাদের সবাইকে এত ভীত ও সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে কেন?’
তখন সবাই একে একে অঙ্গুলিমান ডাকাতের দ্বারা করা হত্যা ও আঙুল কাটার কথা বলল। সবাই দুঃখ করে বলল যে, যে-ই ওই জঙ্গলের দিকে যায়, তাকে ধরে ওই ডাকাত মেরে ফেলে। এ পর্যন্ত সে ৯৯ জন লোককে মেরেছে এবং তাদের আঙুল কেটে মালা বানিয়ে গলায় পরে ঘুরে বেড়ায়। অঙ্গুলিমানের আতঙ্কের কারণে এখন সবাই ওই জঙ্গলের পাশ দিয়ে যেতেও ভয় পায়। এই সব কথা শোনার পর ভগবান বুদ্ধ সেই জঙ্গলের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যেই ভগবান বুদ্ধ জঙ্গলের দিকে যেতে লাগলেন, তখন লোকেরা বলল যে, সেখানে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। ওই ডাকাত কাউকে ছাড়ে না। আপনি জঙ্গলে না গিয়েই কোনোভাবে আমাদের ওই ডাকাতের থেকে মুক্তি দিন।
ভগবান বুদ্ধ সব কথা শুনেও জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পরেই বুদ্ধ ভগবান জঙ্গলে পৌঁছলেন। জঙ্গলে মহাত্মার বেশে একা একজন লোককে দেখে অঙ্গুলিমান খুব অবাক হল। সে ভাবল, এই জঙ্গলে আসার আগে লোকজন অনেকবার ভাবে। যদি আসেও, তাহলে একা আসে না এবং ভয়ে ভয়ে থাকে। আর এই মহাত্মা তো কোনো ভয় ছাড়াই একা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অঙ্গুলিমানের মনে হল, এখনই একেও শেষ করে এর আঙুল কেটে নিই। তখনই অঙ্গুলিমান বলল, ‘অ্যাই! সামনের দিকে এগিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? এবার তো থাম।’ ভগবান বুদ্ধ তার কথাগুলো অগ্রাহ্য করলেন। তখন রেগে গিয়ে ডাকাত বলল, ‘আমি বললাম থাম।’ তখন ভগবান ঘুরে দেখলেন, লম্বা-চওড়া, বড় বড় চোখের একজন লোক, যার গলায় আঙুলের মালা, সে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।
তার দিকে দেখার পর বুদ্ধ আবার হাঁটতে লাগলেন। রাগে কাঁপতে কাঁপতে অঙ্গুলিমান ডাকাত তাঁর পিছনে তলোয়ার নিয়ে দৌড়াতে লাগল। ডাকাত যত দৌড়াচ্ছিল, কিন্তু তাঁকে ধরতে পারছিল না। দৌড়াতে দৌড়াতে সে হাঁপিয়ে গেল। সে আবার বলল, ‘দাঁড়া, নাহলে আমি তোকে মেরে ফেলব এবং তোর আঙুল কেটে আমি ১০০ জন লোককে মারার প্রতিজ্ঞা পূরণ করব।’ ভগবান বুদ্ধ বললেন, ‘তুমি নিজেকে খুব শক্তিশালী মনে কর, তাই না? তাহলে গাছ থেকে কিছু পাতা আর ডাল ভেঙে নিয়ে এসো।’ অঙ্গুলিমান তাঁর সাহস দেখে ভাবল, যখন বলছে, তখন করেই দেখি। সে কিছুক্ষণ পরেই পাতা আর ডাল ভেঙে নিয়ে এসে বলল, ‘এই যে, নিয়ে এসেছি।’
তখন বুদ্ধজি বললেন, ‘এবার এগুলোকে আবার গাছের সঙ্গে জুড়ে দাও।’ এটা শুনে অঙ্গুলিমান বলল, ‘তুমি কেমন মহাত্মা, তুমি জানো না যে, ভাঙা জিনিসকে আর জোড়া যায় না।’ ভগবান বুদ্ধ বললেন, ‘আমি তো তোমাকেই এটাই বোঝাতে চাইছি যে, যখন তোমার কাছে কোনো জিনিস জোড়ার ক্ষমতা নেই, তখন তোমার কোনো জিনিস ভাঙারও অধিকার নেই। যখন কারও জীবন দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তখন মারারও কোনো অধিকার নেই।’ এই সব শুনে অঙ্গুলিমানের হাত থেকে অস্ত্র পড়ে গেল। ভগবান বুদ্ধ বললেন, ‘তুই আমাকে থামতে বলছিলে, আমি তো সেই কখন থেকে স্থির হয়ে আছি। অস্থির তো তুই।‘ অঙ্গুলিমান বলল, ‘আমি তো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, তাহলে আমি কীভাবে অস্থির হলাম, আর আপনি তো তখন থেকে চলছেন।’ ভগবান বুদ্ধ বললেন, ‘আমি সবাইকে ক্ষমা করে স্থির হয়ে আছি, আর তুই সবাইকে মারতে তাদের পিছনে দৌড়ানোর কারণে অস্থির হয়ে আছিস।’
এইসব শুনে অঙ্গুলিমান ডাকাতের চোখ খুলে গেল এবং সে বলল, ‘আজ থেকে আমি আর কোনো অধর্মের কাজ করব না।’ কাঁদতে কাঁদতে অঙ্গুলিমান ডাকাত ভগবান বুদ্ধের পায়ে পড়ে গেল। সেই দিনই অঙ্গুলিমান খারাপ পথ ছেড়ে একজন বড় সন্ন্যাসী হয়ে গেল।
এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে - সঠিক পথ পেলে মানুষ খারাপ পথ ছেড়ে ভাল পথ বেছে নেয়।
বন্ধুরা, subkuz.com একটি এমন প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত এবং বিশ্বের সাথে যুক্ত সব ধরনের গল্প এবং তথ্য প্রদান করে থাকি। আমাদের প্রচেষ্টা হল, এই ভাবেই আমরা যেন আরও আকর্ষণীয় এবং প্রেরণাদায়ক গল্প আপনাদের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিতে পারি। এইরকমই আরও অনুপ্রেরণামূলক গল্প-কাহিনীর জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com