১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর, জন লিস্ট নামে এক ব্যক্তি নিউ জার্সির নিজ বাড়িতে স্ত্রী, মা ও তিন সন্তানকে নির্মমভাবে খুন করেন। এরপর তিনি গা ঢাকা দেন, আর পুরো আমেরিকা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
পরিবারের সবাইকে হত্যা করে লিস্টের পালিয়ে যাওয়া
পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা করেন লিস্ট—৮৪ বছর বয়সি মা আলমা, স্ত্রী হেলেন ও তিন সন্তান প্যাট্রিসিয়া, জন এবং ফ্রেডরিক। খুনের প্রায় এক মাস পর বাড়ি থেকে তাঁদের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়, তবে ততদিনে লিস্ট পালিয়ে গিয়েছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর লিস্ট একটি চিঠি লিখে যান, যেখানে তিনি নিজেই স্বীকার করেন যে, পরিবারকে হত্যা করেছেন। তদন্তে উঠে আসে, লিস্ট পেশায় একজন হিসাবরক্ষক ও স্কুলশিক্ষক ছিলেন। পরিবারের সবাইকে খুন করে তিনি কলোরাডোতে পালিয়ে যান, সেখানে নতুন পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন এবং নতুন করে বিয়েও করেন।
১৭ বছর পর ধরা পড়লেন লিস্ট
১৯৮৮ সালে, অর্থাৎ ঘটনার ১৭ বছর পর, আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় লিস্টের ছবি দেখে তাঁর এক প্রতিবেশী পুলিশকে খবর দেন। এরপর পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে এবং তদন্ত শুরু হয়।
হত্যার ভয়ংকর পরিকল্পনা
জিজ্ঞাসাবাদে লিস্ট জানান, খুনের দিন সকালে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে তিনি তিনটি বন্দুক বের করেন। এরপর স্ত্রী হেলেনকে প্রথমে গুলি করে হত্যা করেন এবং দেহটি বলরুমে নিয়ে যান। এরপর তিনতলায় গিয়ে মাকে গুলি করেন।
স্ত্রী ও মাকে খুন করার পর লিস্ট বাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকেন সন্তানেরা ফেরার জন্য। একে একে তিন সন্তান বাড়ি ফিরলে, তাঁদেরও গুলি করে হত্যা করেন তিনি। তারপর তাঁদের দেহ বলরুমে নিয়ে যান।
হত্যার পেছনের কারণ কী?
লিস্ট দাবি করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি মনে করতেন, দারিদ্র্য তাঁদের জীবন ধ্বংস করে দেবে এবং পরিবারকে স্বর্গে পাঠানোর এটিই একমাত্র উপায়। তাই তিনি তাঁদের হত্যা করেন।
তবে তদন্তকারীদের মতে, আর্থিক সমস্যা ছিল একটি অজুহাত। লিস্ট হয়তো অন্য কোনো কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন।
বিচার ও শাস্তি
হত্যাকাণ্ডের ১৭ বছর পর ধরা পড়ার পর আদালত তাঁকে পাঁচটি খুনের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ২০০৮ সালে নিউ জার্সির কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনা আজও আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পারিবারিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে পরিচিত।