সোনার বনের লম্পট সিংহ ও পিঁপড়েদের গল্প

🎧 Listen in Audio
0:00

সোনার বনে লম্পট সিং নামে এক খেয়ালী সিংহ রাজা ছিল। সে ছিল খুবই রাগী এবং নির্বোধের মতো সিদ্ধান্ত নিত। এমন কোনো দিন ছিল না যেদিন সে বনের পশুপাখিদের জন্য সমস্যার কারণ না হত। লম্পট সিং-এর ব্যবহার সবসময় বিশৃঙ্খল ও উদ্ধত থাকত। তার অভ্যাস এবং খেয়ালিপনা বনের বাকি পশুদের জন্য অসহ্য হয়ে উঠেছিল।

লম্পট সিং-এর মন্ত্রী ছিল ভোলু খরগোশ, যে ছিল খুবই বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ। ভোলু অনেকবার রাজাকে তার অভ্যাস सुधारানোর জন্য অনুরোধ করেছিল, কিন্তু কোনো না কোনো কারণে সে প্রতিবারই প্রত্যাখ্যাত হত। ভোলু বনের বাকি পশুদের মতো লম্পট সিং-এর স্বৈরাচারিতায় বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল।

মিষ্টির লোভে পিঁপড়েদের আক্রমণের পরিকল্পনা

একদিন লম্পট সিং-এর হঠাৎ মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হল। সে তৎক্ষণাৎ তার ভৃত্যদের মিষ্টি নিয়ে আসার আদেশ দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভৃত্যরা রাজপ্রাসাদে সুস্বাদু মিষ্টি নিয়ে এল। লম্পট সিং পেট ভরে মিষ্টি খেল এবং মুখ না ধুয়েই ঘুমিয়ে পড়ল।

মিষ্টির মিষ্টি গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল, এবং সেই গন্ধ পিঁপড়েদের কাছে পৌঁছাল। গন্ধ শুঁকে পিঁপড়েরা লম্পট সিং-এর দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু, একজন বয়স্ক দাদী পিঁপড়ে যে লম্পট সিং-এর স্বভাব সম্পর্কে ভালোভাবে পরিচিত ছিল, সে সবাইকে সতর্ক করে বলল, "যদি লম্পট সিং জেগে যায়, তবে আমাদের কঠিন শাস্তি হতে পারে, তাই আমাদের বিপজ্জনক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়।"

কিন্তু পিঁপড়েরা মিষ্টির লোভে ছিল। একটি ছোট পিঁপড়ে, যার মুখ থেকে জল পড়ছিল, বলল, "দাদীমা, চিন্তা করো না, আমরা এত সাবধানে মিষ্টি খাব যে মহারাজ জানতেও পারবে না। যদি সে জেগেও যায়, তবে আমরা সাথে সাথে পালিয়ে যাব।"

সিংহের রাগ: লম্পট সিং-এর গর্জন এবং পিঁপড়েদের শাস্তি

পিঁপড়েরা লম্পট সিং-এর গোঁফে মিষ্টি খেতে শুরু করল, এবং এরই মধ্যে কিছু পিঁপড়ে সিংহের নাকেও ঢুকে গেল। এতে সিংহের সজোরে হাঁচি এল এবং তার ঘুম ভেঙে গেল। লম্পট সিং গর্জন করে উঠল এবং পিঁপড়েরা পালাতে শুরু করল। তার গর্জন শুনে অনেক পিঁপড়ে ভয়ে মারা গেল এবং বাকি পিঁপড়েরা পালিয়ে গেল।

ক্রোধে উন্মত্ত লম্পট সিং তার মন্ত্রী ভোলু খরগোশকে ডেকে আদেশ দিল, "যাও, পুরো বনে ঘোষণা করে দাও যে কাল থেকে যেন একটাও পিঁপড়ে এই বনে না দেখা যায়। সব পিঁপড়ে আজ সন্ধ্যার মধ্যেই এই বন ছেড়ে চলে যাক।"

ভোলু এর বিরোধিতা করে বলল, "মহারাজ, এটা একটা ছোট ভুল, আর এর জন্য এত বড় শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।" কিন্তু লম্পট সিং তার একটিও কথা শুনল না।

ভোলুর বুদ্ধিমত্তা এবং সমস্যার সমাধান

ভোলু খরগোশ বুঝতে পারল যে এখন সিংহকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই। সে সরাসরি পিঁপড়েদের কাছে গেল এবং তাদের লম্পট সিং-এর আদেশের কথা জানাল। পিঁপড়েরা এবং বাকি পশুরা খুব রেগে ছিল। সবাই লম্পট সিং-এর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাল।

এবার ভোলু একটা চাল চালাল। সে পিঁপড়েদের বলল, "আমরা এমন কিছু উপায় বের করি, যাতে পিঁপড়েরা এই বন থেকে না যায় এবং সাথে সাথে লম্পট সিং-এর থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।"

ভোলুর পাতাললোকের পরিকল্পনা

ভোলু তারপর একটি খুব চতুর উপায় বের করল। সে সব পশুদের বলল যে পিঁপড়েদের যাওয়ার পর তাদের লম্পট সিংকে পাতাললোকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত। পরের দিন ভোলু লম্পট সিং-এর কাছে গেল এবং তাকে বলল, "মহারাজ, আপনার দেওয়া শাস্তির পর পিঁপড়েরা পাতাললোকে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে তাদের না আছে খাওয়ার চিন্তা, না আছে কোনো কাজ করার। সবাই সেখানে আরাম করছে।"

লম্পট সিং এই কথা শুনে লোভী হয়ে উঠল এবং পাতাললোকের রাজা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল। ভোলু তাকে বিশ্বাস করাল যে সে তাকে পাতাললোকে নিয়ে যাবে।

লম্পট সিং-এর পরিণতি: একটি চতুর পরিকল্পনা

রাতে ভোলু লম্পট সিংকে নিয়ে পাতাললোকে যাওয়ার জন্য বের হল। ভোলু তাকে একটি কুয়োর কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, "এইটা হল পাতাললোকের রাস্তা, আপনি এর মধ্যে নেমে যান, সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।"

লম্পট সিং খুশিতে কুয়োতে ঝাঁপ দিয়ে তার নতুন জীবনের আশা করল। কিন্তু যেই সে কুয়োতে পড়ল, ভোলু বলল, "মহারাজ! এটা পাতাললোক নয়, যমলোকে যাওয়ার রাস্তা।"

এই গল্প থেকে আমরা শিখি যে

অবিচারের শেষ আছে: যখন কোনো শাসক বা ব্যক্তি অত্যাচার করে, তখন অবশেষে তার শাস্তি হয়।

বুদ্ধিমত্তার শক্তি: বুদ্ধি এবং চতুরতার সাথে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

সহযোগিতার শক্তি: সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সঠিক কৌশলের মাধ্যমে যেকোনো সংকট সমাধান করা যায়।

```

Leave a comment