মোদীর থাইল্যান্ড সফর: ওয়াট ফো মন্দিরে ঐতিহাসিক সাক্ষাত

মোদীর থাইল্যান্ড সফর: ওয়াট ফো মন্দিরে ঐতিহাসিক সাক্ষাত
সর্বশেষ আপডেট: 07-04-2025

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বর্তমানে তাঁর দুই দিনের থাইল্যান্ড সফরে রয়েছেন এবং এই সময়কালে তাঁর কর্মসূচী সাংস্কৃতিক, কূটনৈতিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী মোদী থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পাইতংতার্ন শিনওয়াত্রার সাথে ব্যাংককের প্রাচীনতম ও সম্মানিত ওয়াট ফো মন্দির (Wat Pho Temple) পরিদর্শন করেন।

ওয়াট ফো মন্দিরের ইতিহাস: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর থাইল্যান্ড সফরের সময় রবিবার রাজধানী ব্যাংককের প্রাচীনতম ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওয়াট ফো (Wat Pho) মন্দির পরিদর্শন করেন। থাই প্রধানমন্ত্রী পাইতংতার্ন শিনওয়াত্রার সাথে তিনি এই ঐতিহাসিক স্থানের মহিমার সাক্ষী হন। ওয়াট ফোকে ‘শায়িত বুদ্ধের মন্দির’ নামেও পরিচিত, এবং এটি থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ স্থাপত্য, আধ্যাত্মিকতা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের জীবন্ত উদাহরণ। প্রায় ২০ একর জুড়ে বিস্তৃত এই মন্দির ব্যাংককের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম মন্দির, যার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৬শ শতকে।

ওয়াট ফো: শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রাচীন কেন্দ্র

রাজা রাম প্রথমের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরকে আগে ওয়াট ফোটারাম বলা হতো। এটি কেবলমাত্র পূজা স্থল নয়, বরং শিক্ষা ও ঐতিহ্যগত থাই চিকিৎসার কেন্দ্রও ছিল। এখানে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানই হতো না, বরং থাই ভেষজ ঔষধ, চিকিৎসা পদ্ধতি ও যোগের শিক্ষাও প্রদান করা হতো। রাজা রাম তৃতীয় মন্দির চত্বরের ব্যাপক বিস্তার করেন এবং এটিকে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলেন। তাঁর শাসনামলে এখানে অসংখ্য স্তূপ, মণ্ডপ ও শিল্পকর্ম যুক্ত হয়, যার মধ্যে ‘শায়িত বুদ্ধ’ প্রতিমা বিশেষ আকর্ষণ হয়ে ওঠে।

৪৬ মিটার লম্বা ‘শায়িত বুদ্ধ’ প্রতিমা

ওয়াট ফো মন্দিরের সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ হল ৪৬ মিটার লম্বা ও ১৫ মিটার উঁচু শায়িত বুদ্ধের প্রতিমা। এই প্রতিমা সোনার পাত দিয়ে সজ্জিত এবং বৌদ্ধ অনুসারীদের জন্য গভীর আস্থার কেন্দ্র। বুদ্ধের শান্ত মুদ্রায় শায়িত রূপ দেখে ভক্ত ধ্যান, মুক্তি ও করুণার অনুভূতি লাভ করেন। তাঁর পাদদেশে ১০৮টি শুভ চিহ্ন খোদাই করা আছে, যা বুদ্ধের জীবন ও দর্শনকে উপস্থাপন করে।

১০০০-এর বেশি বুদ্ধ প্রতিমার ভাণ্ডার

এই মন্দিরে মূল প্রতিমার পাশাপাশি ১০০০-এর বেশি বুদ্ধের প্রতিমাও অবস্থিত, যার মধ্যে অনেক দুর্লভ ঐতিহাসিক শিল্পকর্মও রয়েছে। এখানে বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সাথে থাই শিল্প, স্থাপত্য ও চিকিৎসা ঐতিহ্যের অনন্য মিশ্রণ দেখা যায়।

ভারত-থাইল্যান্ড সাংস্কৃতিক সম্পর্কের প্রতীক

প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর ভারত ও থাইল্যান্ডের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর সফরকালে বলেন, ওয়াট ফোর মতো ঐতিহাসিক স্থান শুধু ধর্মীয় স্থল নয়, বরং সেই সেতু যা ভারত ও থাইল্যান্ডকে সাযুক্ত সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্ত করে। ওয়াট ফোতে এই ঐতিহাসিক সফর কেবল রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে নতুন শক্তি প্রদান করে।

Leave a comment