অহংকারী অজগর ও পিঁপড়ের গল্প

🎧 Listen in Audio
0:00

এক সময়, এক জঙ্গলে একটি বিশাল অজগর বাস করত। সে ছিল খুবই অহংকারী এবং নিষ্ঠুর। যখন সে তার গর্ত থেকে বের হত, তখন সমস্ত প্রাণী তাকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যেত। তার মুখ এতটাই বিশাল ছিল যে সে সহজেই একটি খরগোশকেও গিলে ফেলতে পারত। একবার, অজগরটি শিকারের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সমস্ত প্রাণী তাকে গর্ত থেকে বের হতে দেখেই পালিয়ে গিয়েছিল। যখন সে কিছুই খুঁজে পেল না, তখন সে রাগে ফোঁসফাঁস করতে লাগল এবং এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগল। ঠিক পাশেই, একটি হরিণী তার সদ্যোজাত বাচ্চাকে পাতার স্তূপে লুকিয়ে রেখে খাবারের সন্ধানে দূরে চলে গিয়েছিল।

অজগরের ফোঁসফাঁস শব্দে শুকনো পাতা উড়তে লাগল, এবং হরিণ শাবকটি দৃষ্টিগোচর হল। অজগর তাকে দেখে ফেলল। হরিণ শাবকটি ভয়ে কাঠ হয়ে গেল, তার চিৎকার করারও ক্ষমতা ছিল না। অজগরটি তৎক্ষণাৎ নবজাত হরিণ শাবকটিকে গিলে ফেলল। ততক্ষণে হরিণীও ফিরে আসে, কিন্তু সে কিছুই করতে পারেনি। সে দূর থেকে অশ্রুসিক্ত চোখে তার সন্তানকে গিলে ফেলতে দেখল। হরিণীর শোকের সীমা ছিল না এবং সে যে কোনও মূল্যে অজগরের প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। হরিণীর একটি বেজির সাথে বন্ধুত্ব ছিল। শোকে কাতর হরিণী তার বন্ধু বেজির কাছে গেল এবং কান্নায় ভেঙে পরে তার দুঃখের কাহিনি বলল। বেজিটিও দুঃখিত হল।

 

বেজি দুঃখ ভরা স্বরে বলল

বেজি দুঃখ-ভরা স্বরে বলল, "বন্ধু, আমার সাধ্য থাকলে আমি ওই নীচ অজগরের শত টুকরো করে দিতাম। কিন্তু কি করব, সে তো ছোটখাটো সাপ নয় যাকে আমি মারতে পারি। সে তো একটি অজগর। তার লেজের ঝাপটাতেই আমি আধমরা হয়ে যাব। কিন্তু কাছেই পিঁপড়েদের একটি ঢিবি আছে, সেখানকার রাণী আমার বন্ধু। তার কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত।" হরিণী হতাশ স্বরে বলল, "তোমার মত বড় প্রাণী যখন ওই অজগরের কিছুই করতে পারল না, তখন ওই ছোট্ট পিঁপড়ে কি করবে?" বেজি বলল, "এমনটা ভেবো না। তার কাছে পিঁপড়েদের বিশাল সেনাবাহিনী আছে। সংঘবদ্ধতায় অনেক শক্তি থাকে।"

হরিণী কিছুটা আশার আলো দেখল। বেজি হরিণীকে নিয়ে পিঁপড়ে রানীর কাছে গেল এবং তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। পিঁপড়ে রানী কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, "আমরা তোমাকে সাহায্য করব। আমাদের ঢিবির কাছে সরু একটি পথ আছে যা ধারালো পাথরে ভর্তি। তুমি যে কোনও উপায়ে অজগরটিকে ওই পথ দিয়ে আসতে বাধ্য করো। বাকি কাজ আমার সৈন্যদের উপর ছেড়ে দাও।" বেজির তার বন্ধু পিঁপড়ে রানীর উপর পুরো বিশ্বাস ছিল, তাই সে নিজের জীবন বাজি রাখতেও রাজি হয়ে গেল। পরের দিন বেজি অজগরের গর্তের কাছে গিয়ে চিৎকার করতে লাগল। নিজের শত্রুর আওয়াজ শুনে অজগর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাইরে এল।

বেজিটি সেই সরু পথের দিকে দৌড়াতে লাগল। অজগর তার পিছু নিল। অজগর থামলে বেজি ফোঁসফাঁস করত এবং তাকে রাগিয়ে আবার তাড়া করতে বাধ্য করত। এইভাবে বেজি তাকে সরু পথ দিয়ে যেতে বাধ্য করল। ধারালো পাথরের আঘাতে অজগরের শরীর ছড়ে যেতে লাগল। অজগর যখন সেই পথ থেকে বের হল, তখন তার শরীরের অনেকটা অংশ ছিলে গেছে এবং রক্ত ঝরছে। ঠিক সেই সময় পিঁপড়েরা তার উপর হামলা করল। পিঁপড়েরা তার শরীরে উঠে ছিলে যাওয়া অংশের মাংস কামড়াতে শুরু করল। অজগর ছটফট করতে লাগল এবং নিজের শরীর ছুঁড়তে লাগল, যার ফলে আরও মাংস ছিলে যেতে লাগল এবং পিঁপড়েরা নতুন নতুন জায়গা খুঁজে পেতে লাগল। অজগর পিঁপড়েদের কিছুই করতে পারল না। হাজার হাজার পিঁপড়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই নিষ্ঠুর অজগর ছটফট করতে করতে মারা গেল।

 

শিক্ষা

এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে, সংঘবদ্ধতার শক্তি বড়দেরও ধূলিসাৎ করতে পারে।

Leave a comment