ছোট্ট লাল টুপির গল্প: বিখ্যাত ও অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী

🎧 Listen in Audio
0:00

ছোট্ট লাল টুপি’র গল্প, বিখ্যাত অমূল্য গল্প subkuz.com-এ !

উপস্থাপিত, বিখ্যাত এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প, ছোট্ট লাল টুপি

এক ছিল ছোট্ট একটি মেয়ে, সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে একটি গ্রামে থাকত। সে তার বাবা-মায়ের চেয়ে বেশি ভালোবাসত তার ঠাকুমাকে। তার ঠাকুমা গ্রামের অন্য প্রান্তে জঙ্গলের ওপারে থাকতেন। ছোট্ট মেয়েটির ঠাকুমা এক বার তাকে লাল রঙের একটি হুডি উপহার দিয়েছিলেন, যেটা সে সবসময় পরে থাকত। এই কারণে লোকেরা তাকে লিটল রেড রাইডিং হুড অর্থাৎ ছোট্ট লাল টুপি নামে ডাকত। লিটল রেড রাইডিং হুড প্রায়ই তার ঠাকুমার সঙ্গে দেখা করতে যেত। সে বেশিরভাগ সময় সেখানেই থাকত এবং তারপর নিজের বাড়ি ফিরে আসত। ঠাকুমাও লিটল রাইডিং হুডকে খুব ভালোবাসতেন। একবার লিটল রেড রাইডিং হুডের ঠাকুমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই কারণে সে তার সঙ্গে বেশি দেখা করতে পারত না। এতে সে খুব দুঃখ পেত। তখনই সে জানতে পারে যে তার মা ঠাকুমার জন্য খাবার এবং ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন। সে দৌড়ে তার মায়ের কাছে যায় এবং জিজ্ঞাসা করে, “মা, তুমি এই খাবার আর ওষুধ কার জন্য নিয়ে যাচ্ছ?”

তখন লিটল রেড রাইডিং হুডের মা বলেন, “আমি এই খাবার আর ওষুধ তোর ঠাকুমার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।” এটা শুনে লিটল রেড রাইডিং হুড খুব খুশি হয়ে যায় এবং মাকে বলতে থাকে, “আমি কি এই খাবার আর ওষুধ ঠাকুমার জন্য নিয়ে যেতে পারি? আমার তার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করছে।” লিটল রেড রাইডিং হুডের মা রাজি হয়ে যান এবং তাকে খাবার ও ওষুধের থলি দিয়ে বলেন, “ঠিক আছে, তুই যা, কিন্তু মনে রাখিস যে সঠিক রাস্তা দিয়ে যাবি এবং রাস্তায় কোনও অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলবি না।” এটা শুনে লিটল হুড বলে, “ঠিক আছে মা। আমি সোজা ঠাকুমার বাড়ি যাব।” এই কথা বলে ছোট্ট মেয়েটি তার ঠাকুমার দেওয়া হুডি পরে মাকে বাই-বাই বলে জঙ্গলের ওপারে গ্রামের দিকে রওনা দেয়। সে জঙ্গলের পথ ধরে এগিয়ে যেতে থাকে। জঙ্গলে কিছুদূর যাওয়ার পরেই তার ঝুড়ি থেকে বের হওয়া গন্ধে একটি ঘুমন্ত নেকড়ে জেগে ওঠে। নেকড়েটির নজর ছোট মেয়েটির দিকে পড়ে। তাকে দেখে সে মনে মনে খুব খুশি হয় এবং ভাবে, “আরে বাহ! একটি ছোট শিকার, কিন্তু এটি কোন দিকে যাচ্ছে?”

নেকড়েটি সঙ্গে সঙ্গে লিটল হুডের কাছে গিয়ে বলে, “কেমন আছো মিষ্টি মেয়ে! তুমি কি আমাকে এই সুস্বাদু খাবার একটু চেখে দেখতে দেবে?” নেকড়েটির কথা শুনে ছোট মেয়েটি প্রথমে ভয় পেয়ে যায়, কিন্তু তারপর ভয়ে ভয়ে বলে, “আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি এই খাবার আপনাকে দিতে পারব না। এটা আমি আমার অসুস্থ ঠাকুমার জন্য নিয়ে যাচ্ছি, যিনি একা থাকেন।” এর পর লিটল রেড রাইডিং হুড একটু ভেবে তার থলি থেকে একটি আপেল বের করে নেকড়েকে দিয়ে বলে, “আপনি এটা খেয়ে নিন।” নেকড়েটি লিটল রেড রাইডিং হুডের হাত থেকে আপেলটি নিয়ে নেয় এবং মনে মনে ভাবতে থাকে, “বাহ! এর ঠাকুমাও একা থাকে, তাহলে প্রথমে এর ঠাকুমাকে গিলে ফেলি আর পরে একে, কিন্তু ততক্ষন একে আটকে রাখতে হবে।” এর পর নেকড়েটি লিটল রেড রাইডিং হুডকে বলে, “আরে শোনো! একটু দাঁড়াও আর আমার কথা শোনো, আমি জানি যে তোমার অসুস্থ ঠাকুমা কীভাবে সুস্থ হতে পারে।” এটা শুনে ছোট মেয়েটি খুশি হয়ে যায় এবং নেকড়েকে বলতে থাকে, “সত্যিই, কিন্তু কিভাবে? আপনি কি আমাকে বলতে পারেন যে তিনি কিভাবে তাড়াতাড়ি সুস্থ হবেন।”

এতে নেকড়েটি বলে, “হ্যাঁ, হ্যাঁ আমি তোমাকে সেই উপায় অবশ্যই বলব। এর জন্য তোমাকে জঙ্গল থেকে কিছু স্ট্রবেরি তুলতে হবে। এই স্ট্রবেরিগুলোর মধ্যে জাদুকরী শক্তি আছে, যা খেলে তোমার ঠাকুমা একেবারে সুস্থ হয়ে যাবে।” নেকড়েটির কথা শুনে লিটল হুড বলে, “আরে বাহ! আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি এখনই গিয়ে কিছু স্ট্রবেরি নিয়ে আসি।” এই কথা বলে লিটল হুড স্ট্রবেরি তুলতে চলে যায়। অন্যদিকে, চালাক নেকড়েটি পরিকল্পনা করে যে, প্রথমে ঠাকুমার বাড়ি যাবে। আসলে, নেকড়েটি ভালোভাবে ভেবে নিয়েছিল যে সে প্রথমে ঠাকুমাকে এবং তারপর ছোট্ট লিটল হুডকে গিলে ফেলবে। এর পর নেকড়েটি ঠাকুমার বাড়ির দিকে রওনা দেয়। ঠাকুমার বাড়ি পৌঁছে নেকড়েটি দেখে যে তিনি খাটে আরামে ঘুমাচ্ছেন। সে যেই ঘরে ঢোকে, ঠাকুমা জেগে ওঠে এবং নেকড়েকে দেখে চমকে যায়। সে নেকড়েকে জিজ্ঞাসা করে যে “তুমি এখানে কেন এসেছ?” এর উত্তরে নেকড়েটি বলে, “তোমাকে আর তোমার নাতনিকে খেতে।” এর পর ঠাকুমা তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু নেকড়েটি মানে না এবং সে ঠাকুমাকে গিলে ফেলে।

এদিকে, লিটল রাইডিং হুড স্ট্রবেরি নিয়ে গান গাইতে গাইতে ঠাকুমার বাড়ি পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছে সে দরজায় টোকা দেয় এবং বলে, “ঠাকুমা আমি এসেছি, তাড়াতাড়ি দরজা খোলো। আমি তোমার জন্য অনেক জিনিস নিয়ে এসেছি।” তখনই ভেতর থেকে আওয়াজ আসে, “আমার সোনা, দরজা খোলা আছে, তুমি সোজা ঘরে চলে এসো।” এই আওয়াজ শুনে লিটল হুডের একটু আশ্চর্য লাগে। আসলে, তার ঠাকুমার গলার স্বরটা যেন পাল্টে গেছে বলে মনে হয়, কিন্তু সে ভাবে যে হয়তো শরীর খারাপ থাকার কারণে তার গলার স্বর পাল্টে গেছে। তারপর সে দরজা খোলে এবং ঘরের ভেতরে ঢুকে যায়। এখানে সে দেখে যে ঘরের মধ্যে পুরো অন্ধকার। সে তার ঠাকুমাকে ডাকতে থাকে, “ঠাকুমা! ঠাকুমা! তুমি কোথায় আর ঘরের মধ্যে এত অন্ধকার কেন?” এর উত্তরে ঘর থেকে আওয়াজ আসে, “আরে আমার সোনা, আমি অনেক দিন ধরে অসুস্থ, এই কারণে আমার শরীর খুব দুর্বল হয়ে গেছে।” এটা শুনে লিটল রেড ভেতরে আসে, তারপর সে বলে, “আচ্ছা! কিন্তু, তোমার কানগুলো এত বড়ো হয়ে গেছে কিভাবে? আগে তো এগুলো এমন ছিল না।” এর উত্তরে আবার নেকড়েটি বলে, “আরে আমার সোনা, আমি তোমার কথা ভালোভাবে শুনতে পাই তাই আমি আমার কান বড়ো করিয়ে নিয়েছি।”

এর পর লিটল রেড রাইডিং হুড আবার জিজ্ঞাসা করে, “তাহলে ঠাকুমা তোমার চোখগুলো এত বড়ো হয়ে গেল কিভাবে?” এতে ঠাকুমা বলে, “সোনা, সেটা এই জন্য যাতে আমার তোমাকে দেখতে অসুবিধা না হয়।” এর পর আবার লিটল হুড জিজ্ঞাসা করে, “আচ্ছা! তাহলে এই হাতগুলো, এগুলো কেন এত লম্বা হয়ে গেছে?” এতে ঠাকুমা বলে, “এই হাতগুলো তোমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য লম্বা হয়েছে।” তারপর সে জিজ্ঞাসা করে, “তাহলে তোমার দাঁতগুলো, সেগুলো এত লম্বা হয়ে গেল কিভাবে?” এই প্রশ্নের উত্তরে নেকড়েটি তার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং বলতে থাকে, “যাতে আমি তোমাকে আমার শিকার বানাতে পারি।” এত কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই নেকড়েটি লিটল রাইডিং হুডের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ঠাকুমার মতো তাকেও গিলে ফেলে। এর পর দুষ্টু নেকড়েটি ঠাকুমার খাটে ঘুমিয়ে পড়ে এবং জোরে জোরে নাক ডাকতে শুরু করে। তখনই এক কাঠুরে ঠাকুমার বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। যেখানে সে জোরে জোরে নাক ডাকার আওয়াজ শুনতে পায়, যা শুনে সে দাঁড়িয়ে যায়। সে দেখে যে নাক ডাকার আওয়াজ ঠাকুমার বাড়ি থেকেই আসছে। সে ঘরের ভেতরে ঢুকে যায়। এখানে সে দেখে যে দুষ্টু নেকড়েটি ঠাকুমার খাটে ঘুমাচ্ছে। সে বুঝতে পারে যে ঠাকুমাকে নেকড়েটি গিলে ফেলেছে।

কাঠুরে সঙ্গে সঙ্গে দুষ্টু নেকড়েটিকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার উপায় বের করে। সে কাঁচি নিয়ে আসে এবং নেকড়েটির পেট কেটে ঠাকুমা এবং লিটল হুডকে নিরাপদে বাইরে বের করে আনে। এর পর কাঠুরে সঙ্গে সঙ্গে দুষ্টু নেকড়েটির পেটে বড়ো একটা পাথর ভরে দেয় এবং ঠাকুমা তার পেট সেলাই করে দেয়। নেকড়েটির পেট থেকে বেরিয়েই ছোট্ট লাল টুপি সবার প্রথমে তার ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা করে, “ঠাকুমা তুমি ঠিক আছো তো, ঐ নেকড়েটা তোমার কোনও ক্ষতি করেনি তো?” এতে ঠাকুমা বলেন, “না, আমার সোনা! আমি একদম ঠিক আছি। আমার কিছুই হয়নি।” এর পর ঠাকুমা, ছোট্ট লিটল হুড এবং কাঠুরে তিনজন ঘরের দরজার পিছনে লুকিয়ে দুষ্টু নেকড়েটির ঘুম থেকে ওঠার অপেক্ষা করতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর নেকড়েটি ঘুম থেকে জেগে ওঠে, তখন সে অনুভব করে যে তার পেটটা বেশ ভারী লাগছে। সে ভাবে যে হয়তো সে ঠাকুমা আর লিটল হুডকে গিলেছে, এই কারণে তার পেট ভারী হয়ে গেছে। এর পর সে নদীর ধারে জল পান করার জন্য বেরিয়ে যায়। যেই নেকড়েটি জল পান করার জন্য নদীর ধারে ঝুঁকে, সঙ্গে সঙ্গে সে নদীতে পড়ে যায়। এর পর ঠাকুমা, লিটল হুড এবং কাঠুরে খুব খুশি হয় এবং নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। বাড়ি পৌঁছে লিটল হুড তার ঠাকুমার কাছে প্রতিজ্ঞা করে যে সে এরপর থেকে কখনও কোনও অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলবে না এবং সেই সঙ্গে সে তার ও ঠাকুমার প্রাণ বাঁচানোর জন্য কাঠুরেকে ধন্যবাদ জানায়। তারপর তিনজন একসঙ্গে হাসি-খুশি পুরো দিন কাটায় এবং মজা করে বসে চকোলেট কেক খায়।

এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে - আমাদের সবসময় বড়দের কথা শোনা উচিত এবং অপরিচিত লোকেদের উপর কখনও ভরসা করা উচিত নয়। এমন না করলে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে।

বন্ধুরা subkuz.com এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত এবং সারা বিশ্বের সব ধরনের গল্প এবং তথ্য সরবরাহ করে থাকি। আমাদের প্রচেষ্টা হল, এই ভাবেই আরও আকর্ষণীয় এবং প্রেরণামূলক গল্প আপনাদের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দেওয়া। এই রকমই অনুপ্রেরণামূলক গল্প -কাহিনিগুলির জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com

 

```

Leave a comment