মোগলির গল্প: বিখ্যাত হিন্দি অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী

🎧 Listen in Audio
0:00

মোগলির গল্প। জাতক কাহিনী: বিখ্যাত হিন্দি গল্প। পড়ুন subkuz.com এ!

উপস্থিত, বিখ্যাত এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প, মোগলি

বহু বছর আগে গ্রীষ্মকালে, এক দিনে জঙ্গলের সমস্ত পশু বিশ্রাম নিচ্ছিল। ভালোভাবে বিশ্রাম নেওয়ার পর, সন্ধ্যায় একদল নেকড়ে শিকারের জন্য বের হয়। তাদের মধ্যে দারুকা নামের একটি নেকড়ে কিছুদূর যেতেই ঝোপ থেকে একটি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। নেকড়েটি ঝোপের কাছে গিয়ে দেখে, সেখানে একটি বাচ্চা শুয়ে আছে। বাচ্চাটির শরীরে কোনো কাপড় ছিল না। বাচ্চাটিকে দেখে নেকড়েটি অবাক হয়ে যায় এবং তাকে নিজের ডেরায় নিয়ে যায়। এভাবেই এক মানুষের বাচ্চা নেকড়েদের মাঝে চলে আসে। বাচ্চাটিকে নেকড়েদের মধ্যে দেখে শের খান রেগে যায়, কারণ সে-ই বাচ্চাটিকে মানুষের বসতি থেকে তুলে এনেছিল খাবার জন্য।

নেকড়েটি তার পরিবারের মতোই মানুষ বাচ্চাটিকেও লালন-পালন করে। তার পরিবারে কয়েকটি ছোট নেকড়ে এবং তাদের মা রক্ষা ছিল। রক্ষা বাচ্চাটির নাম দেয় মোগলি। মোগলি একটি পরিবার খুঁজে পায় এবং নেকড়েদের নিজের ভাই-বোন মনে করে তাদের সাথে থাকতে শুরু করে।

দারুকা তার স্ত্রী রক্ষাকে এও বলেছিল যে, এই বাচ্চাটিকে যেন শের খানের নজর থেকে বাঁচিয়ে রাখে, কারণ সে বাচ্চাটিকে খেতে চায়। রক্ষা এই বিষয়ে খুব খেয়াল রাখত। সে তার বাচ্চাদের এবং মোগলিকে কখনো চোখের আড়াল হতে দিত না। কিছু সময় পর জঙ্গলের সব পশু মোগলির খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়। অন্যদিকে, শের খান দূর থেকে মোগলির ওপর নজর রাখত। সে মোগলিকে শিকার করার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিল।

নেকড়ে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিল এক বুদ্ধিমান নেকড়ে। সেই দলে ভাল্লু নামের একটি ভাল্লুক এবং বাঘিরা নামের একটি চিতাও ছিল। সবাই একসাথে মিলিত হয়ে মোগলিকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। তারা বলে যে, মোগলিকে নেকড়ের মতোই বড় করতে হবে। তখন দলের সর্দার তার সঙ্গী বাঘিরা এবং ভাল্লুকে বলে, তোমরা দু'জন মোগলিকে জঙ্গলের নিয়মকানুন শেখাবে। সাথে মোগলির রক্ষা করবে। এভাবে জঙ্গলে থাকতে থাকতে মোগলির এক বছর কেটে যায়। মোগলি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং বড় হওয়া পর্যন্ত ভাল্লু ও বাঘিরা মোগলিকে সমস্ত নিয়মকানুনের সাথে নিজের রক্ষা করার উপায়ও শিখিয়ে দেয়। মোগলি বড় হওয়া পর্যন্ত অনেক পশুর ভাষা শিখে যায়। এছাড়াও, সে সহজেই গাছে চড়তে, নদীতে সাঁতার কাটতে ও শিকার করতেও শিখে যায়। বাঘিরা মোগলিকে মানুষের পাতা ফাঁদ ও জাল থেকে দূরে থাকতে এবং জালে আটকে গেলে তা থেকে বের হওয়ার উপায়ও শেখায়।

একদিন দলের একটি ছোট নেকড়ে শিকারিদের পাতা জালে আটকে যায়। সেই আটকে থাকা নেকড়েটিকে শের খান খেতে চেয়েছিল, কিন্তু তার আগেই মোগলি সেখানে পৌঁছে ছোট নেকড়েটিকে বাঁচিয়ে নেয়। শের খান এই সব দেখে খুব রেগে যায়। তারপর শের খান কয়েকদিন পর মোগলিকে ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু সে তার হাতে ধরা দেয় না। রেগে গিয়ে শের খান সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে মোগলিকে ধরার জন্য বানরের সাহায্য নেবে। সব বানর জঙ্গলের অন্য অংশে থাকত। তারা খুবই বিপজ্জনক ছিল। শের খানের কথা শুনে বানরের রাজা মোগলিকে ধরতে রাজি হয়ে যায়। বানরের রাজা তার সব বানরকে মোগলিকে ধরার আদেশ দেয়। এক-দুদিন কিছু বানর মোগলির ওপর নজর রাখে এবং সুযোগ পেতেই মোগলিকে অপহরণ করে গভীর জঙ্গলের মধ্যে একটি পাহাড়ে নিয়ে যায়। মোগলি ভাবছিল, তার পাহাড়ে থাকার খবর বাঘিরা ও ভাল্লু যেন জানতে পারে। তখনই সে আকাশে একটি চিলকে উড়তে দেখে। মোগলি চিলটিকে ডেকে বলে, তুমি আমাকে সাহায্য করো। আমার এখানে থাকার খবর বাঘিরা ও ভাল্লুকে দাও, তাদের বলবে যে, বানরেরা আমাকে এখানে বন্দী করে রেখেছে। চিলটি মোগলির কথা শুনেই জঙ্গলের দিকে বাঘিরা ও ভাল্লুর কাছে যায়।

বাঘিরা ও ভাল্লু মোগলির খবর পেয়েই কালিয়া নামের এক অজগরের কাছে সাহায্য চাইতে যায়। প্রথমে কালিয়া সরাসরি বাঘিরা ও ভাল্লুকে না করে দেয়। তারপর তারা কালিয়াকে মোগলির ব্যাপারে জানায়। মোগলির কথা শুনে কালিয়া তাদের সাহায্য করতে রাজি হয়ে যায়। সবাই মোগলিকে বাঁচাতে বেরিয়ে পড়ে। খুব শীঘ্রই কালিয়া, বাঘিরা ও ভাল্লু বানরের এলাকায় পৌঁছে যায়। সেখানে পৌঁছে তিনজন লুকিয়ে দেখতে থাকে। তারা দেখে, সেখানে শত শত বানর রয়েছে। কিছুক্ষণ পর কালিয়া বলে, মোগলিকে বাঁচানোর সময় এসে গেছে। চলো, তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসি। তখনই তিনজন বানরের উপর হামলা করে দেয়। বাঘিরা তার থাবা দিয়ে বানরদের ওপর আঘাত করে, যার ব্যথায় বানরেরা চিৎকার করতে শুরু করে। তখন কিছু বানর ভাল্লুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটা দেখে কালিয়া অজগর আসে এবং বানরদের লেজ দিয়ে মারতে শুরু করে। তারপর বানরেরা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। তখন তিনজন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে এবং কালিয়া দরজা ভেঙে মোগলিকে বের করে আনে। মোগলি মুক্ত হয়েই গাছের আড়ালে দৌড়ে লুকায়।

তারপর হঠাৎ করে বানরেরা হামলা করে বাঘিরাকে ঘিরে ফেলে। বাঘিরাকে ঘেরাও করার পর বানরেরা মোগলিকে আবার ধরে ফেলে। মোগলি দেখে, বাঘিরা ঘেরাও হয়ে আছে, তখনই তার মনে পড়ে যে, বানরেরা জলকে ভয় পায়। সে বাঘিরাকে চিৎকার করে বলে, জলে ঝাঁপ দাও, বানরেরা জলকে ভয় পায়। বাঘিরা এটা শুনেই সঙ্গে সঙ্গে জলে ঝাঁপ দেয় এবং বানরদের কবল থেকে বেরিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর মোগলি বানরের বন্দী দশা থেকে পালিয়ে যায় এবং তারপর সে একটি মানুষের বসতিতে পৌঁছে। সেই বসতিতে পৌঁছানোর পর সে মেসুয়া নামের এক মহিলার সাথে দেখা করে। মেসুয়ার বাচ্চা বহু বছর আগে এক সিংহ জঙ্গলে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। মোগলি সেই মহিলার সাথেই গ্রামে থাকতে শুরু করে। গ্রামবাসীরাও মোগলিকে থাকতে দেয় এবং তাকে পশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়।

কয়েকদিন পর মোগলির নেকড়ে ভাই তাকে গ্রামে দেখে ফেলে। দেখেই নেকড়েটি সরাসরি মোগলির কাছে গিয়ে তাকে জানায় যে, শের খান তাকে মারার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মোগলি জানতে পেরেছিল যে, শের খান তাকে এত সহজে ছাড়বে না, তাই মোগলি তাকে শেষ করার একটা পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনায় মোগলি তার নেকড়ে ভাইদের সাহায্য নেয়। সে নেকড়েদের বলে, শের খানকে একটি উপত্যকায় নিয়ে আসতে। শের খান উপত্যকায় পৌঁছানোর পর মোগলি দুই দিক থেকে একপাল মোষ ছেড়ে দেয় এবং নিজেও একটি মোষের উপর বসে পড়ে। শের খান মোষের পালের পায়ের নিচে এসে পড়ে। তখনই শের খানের মৃত্যু হয়। তারপর মোগলি নির্ভয়ে গ্রামবাসীদের সাথে থাকতে শুরু করে। কিছু সময় পর গ্রামের কিছু লোক মোগলির উপর জাদু করার অভিযোগ করে এবং তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়।

ততদিনে মোগলি বড় হয়ে গেছে। সেখান থেকে বেরিয়ে সে সরাসরি জঙ্গলে যায়। সেখানে কিছু সময় কাটানোর পরই তার নেকড়ে ভাই ও বোনেরা মারা যায়। সে একা, বিষণ্ণভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তখনই তার সাথে আবার মেসুয়ার দেখা হয়। মোগলি তার জীবনের সব কথা মেসুয়াকে জানায়। মেসুয়ার বিশ্বাস হয় যে, তার যে ছেলেকে সিংহ তুলে নিয়ে গিয়েছিল, সে মোগলিই। মেসুয়া মোগলিকে তার গল্প বলে এবং তারপর দু'জন একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর মোগলি মানুষের বসতিতে সুখে-শান্তিতে থাকতে শুরু করে এবং সময় পেলে জঙ্গলে গিয়ে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করে।

এই গল্প থেকে আমরা শিখি যে - সাহস রাখলে সব বাধা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও, প্রতিটি মানুষের উচিত পশু-পাখিদের সাথে ভালোবাসার সাথে ব্যবহার করা। প্রয়োজনে তারা বন্ধু হয়ে সাহায্য করতে পারে।

বন্ধুরা, subkuz.com একটি এমন প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত এবং বিশ্বের সমস্ত ধরনের গল্প এবং তথ্য সরবরাহ করি। আমাদের প্রচেষ্টা হল, এভাবেই আকর্ষণীয় এবং প্রেরণামূলক গল্পগুলি আপনাদের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দেওয়া। এইরকমই অনুপ্রেরণামূলক গল্প-কাহিনীর জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com

```

Leave a comment