বিক্রমাদিত্য ও বিদ্রুমার কাহিনী

🎧 Listen in Audio
0:00

রাজা বিক্রমাদিত্য আবার বটবৃক্ষের উপর বসে থাকা ভূতেটিকে নিয়ে আসার জন্য গেলেন। ভূতটি রাজাকে দেখে অবাক হয়ে বলল, “মহারাজ, কতবার আমাকে নিয়ে আসছেন, আমাকে বিরক্ত করছেন বলে মনে হচ্ছে?” রাজা কিছু বললেন না। শান্তভাবে ভূতটিকে দেখে আবার বললেন, “ঠিক আছে, আমি আরও একটি কাহিনী বলব। এটি তোমাকে বিরক্ত করবে না।” বলে রাজা ভূতটিকে একটি কাহিনী শোনাতে শুরু করলেন। কানৌজে একজন অত্যন্ত ধার্মিক ব্রাহ্মণ থাকতেন। তার একজন অত্যন্ত সুন্দরী কন্যা ছিল, বিদ্রুমা নামে। তার মুখ চাঁদের মতো ছিল, রূপ বর্ণ ছিল উজ্জ্বল সোনার মতো। একই শহরে তিনজন মেধাবী ব্রাহ্মণ যুবক থাকত। তারা তিনজনেই বিদ্রুমাকে অত্যন্ত ভালোবাসত, তার সাথে বিবাহ করতে চাইত। কিন্তু তারা বারবার বিবাহের প্রস্তাব দিলেও ব্রাহ্মণ তা প্রত্যাখ্যান করতেন।

একদিন বিদ্রুমা অসুস্থ হয়ে পড়লে ব্রাহ্মণ তাকে ভালোভাবে দেখাশোনা করেন, কিন্তু তার অবস্থা অবনতি হয় এবং সে মারা যায়। তিন যুবক ও ব্রাহ্মণ বহুদিন দুঃখে থাকে, এবং বিদ্রুমার স্মৃতি ধরে রেখে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম ব্রাহ্মণ তার অস্থিগুলোকে তার বিছানা বানিয়ে নেয়। সে প্রতিদিন ভিক্ষা করে এবং রাতে সেই বিছানায় শুয়ে থাকে। দ্বিতীয় ব্রাহ্মণ বিদ্রুমার হাড়গুলো একত্রিত করে গঙ্গা নদীতে প্রবাহিত করে এবং নদীর তীরে তারকা-ছায়ায় শুয়ে থাকে।

তৃতীয় ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসী হিসেবে জীবনযাপন শুরু করেন। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করে। একজন ব্যবসায়ী তাকে রাত কাটানোর জন্য তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায়। ব্রাহ্মণ আমন্ত্রণ গ্রহণ করে তার বাড়িতে যান। রাতে সবাই খাবার খাওয়ার জন্য বসে। তখন ব্যবসায়ীর ছেলে বেশ কাঁদতে শুরু করে। ব্যবসায়ী তার ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু ছেলেটি কাঁদতেই থাকে। অবশেষে রাগে ব্যবসায়ী তার ছেলেকে বেঁধে ফেলে। এক্ষণেই ছেলেটি ছাই হয়ে যায়। এসব দেখে ব্রাহ্মণ ভয় পেয়ে ঘোড়ার মতো কাঁদতে শুরু করে এবং তার খাবারের থালা ফেলে দিয়ে বলে, “তুমি অত্যন্ত নিষ্ঠুর। এক নিরপরাধ শিশুকে হত্যা করেছ। এটি একটি পাপ। আমি তোমার বাড়িতে খাবার খেতে পারব না।”

গৃহস্থ প্রার্থনা করে বলে, “ক্ষমা করবেন। আপনি এখানে থেকে দেখুন, কোনো নিষ্ঠুরতা ঘটেছে কিনা। আমার ছেলেটি এখনও ভালো আছে। আমি তাকে আবার জীবন দিতে পারি।” বলে সে প্রার্থনা করে, একটি ছোট্ট বই বের করে কিছু মন্ত্র পড়তে শুরু করে। ক্ষণমাত্র ছেলেটি জীবন্ত হয়ে ওঠে। ব্রাহ্মণ তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। হঠাৎ তার মনে একটি চিন্তা আসে। গৃহস্থ ঘুমিয়ে পড়ার পর ব্রাহ্মণ সেই মন্ত্রের বইটি নিয়ে গ্রাম থেকে বেরিয়ে তার নিজের জায়গায় চলে যায়।

এখন সে বিদ্রুমাকে জীবিত করতে চায়। তার জন্য তার অস্থি ও হাড়ের প্রয়োজন। সে অন্য দুই ব্রাহ্মণকে ডেকে বলে, “ভাইয়েরা, আমরা বিদ্রুমাকে আবার জীবন দিতে পারি, কিন্তু তার জন্য তার অস্থি ও হাড় দরকার।” তারা অস্থি ও হাড়গুলো নিয়ে তাকে দেয়। তৃতীয় যুবক মন্ত্র পাঠ করতে শুরু করলেই বিদ্রুমা ছাই থেকে উঠে দাঁড়ায়। সে আরও সুন্দরী হয়ে উঠেছে। তিন ব্রাহ্মণ খুব খুশি হয়। এখন তারা তিনজনেই তার সাথে বিবাহ করার জন্য প্রতিযোগিতা করে।

ভূতটি থেমে রাজাকে জিজ্ঞাসা করে, “মহারাজ, তাদের মধ্যে কে তার জন্য উপযুক্ত?” রাজা বিক্রমাদিত্য বলেন, “প্রথম ব্রাহ্মণ।” ভূতটি হাসে। রাজা আবার বলেন, “তৃতীয় ব্রাহ্মণ মন্ত্র দিয়ে তাকে জীবন দিয়েছে, যা একজন পিতার মতো। দ্বিতীয় ব্রাহ্মণ তার হাড়গুলো রক্ষা করেছে, যা একজন পুত্রের মতো। প্রথম ব্রাহ্মণ তার ছাইয়ের সাথে শুয়ে আছে, যা একজন প্রেমিকের মতো, তাই সেই বিবাহের জন্য উপযুক্ত।” “আপনি সঠিক।” বলে ভূতটি আবার বটবৃক্ষের উপর উড়ে যায়।

Leave a comment