শীতকালে সর্দি-কাশি হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু যদি হাঁচি, কাশি এবং হালকা জ্বর দীর্ঘদিন ধরে থাকে বা খারাপ হতে শুরু করে, তবে এটি সাধারণ সমস্যা নাও হতে পারে। এটি গুরুতর রোগ, এমনকি ক্যান্সারের লক্ষণও হতে পারে।
অনেক সময় সর্দি-কাশিকে আবহাওয়ার প্রভাব মনে করে আমরা এটিকে উপেক্ষা করি, তবে লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে এটিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া দরকার। সঠিক সময়ে এই লক্ষণগুলো সনাক্ত করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। যদি কাশি, জ্বর বা হাঁচি ভালো না হয়, তবে এটিকে হালকাভাবে না নিয়ে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নিন।
এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করবেন না
• ক্রনিক কাশি: যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, বিশেষ করে কাশির সঙ্গে রক্ত, শ্বাসকষ্ট বা গলা বসে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়, তবে এটিকে অবহেলা করবেন না। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, এই লক্ষণগুলো ফুসফুস, গলা বা খাদ্যনালীর ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। সময় মতো শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
• অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস: যদি কোনো চেষ্টা ছাড়াই আপনার ওজন কমতে থাকে, তবে এটি স্বাভাবিক নাও হতে পারে। ব্রিটিশ জার্নাল অফ জেনারেল প্র্যাকটিসের একটি গবেষণা অনুসারে, পেট, অগ্ন্যাশয়, ফুসফুস এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সারে হঠাৎ ওজন হ্রাস একটি সাধারণ লক্ষণ। তাই যদি কোনো কারণ ছাড়াই আপনার ওজন কমতে থাকে, তবে এটিকে উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থায় অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা জরুরি। সময় মতো চিকিৎসা করালে অনেক গুরুতর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
• বার বার সংক্রমণ বা জ্বর: যদি আপনার ঘন ঘন জ্বর বা সংক্রমণ হয়, তবে এটি আপনার দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার লক্ষণ হতে পারে। লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমার মতো রক্তের ক্যান্সার শরীরের শ্বেত রক্তকণিকাগুলোকে প্রভাবিত করে, যার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই লক্ষণগুলোকে হালকাভাবে নেবেন না। সময় মতো শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই গুরুতর রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি আপনি বারবার সংক্রমণের শিকার হন, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
• ক্রমাগত ক্লান্তি: মাঝে মাঝে ক্লান্তি অনুভব করা স্বাভাবিক, কিন্তু ক্যান্সার-সম্পর্কিত ক্লান্তি গভীর এবং একটানা থাকে। এই লক্ষণটি লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা এবং কলোরেক্টাল ক্যান্সারের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। যদি এই ক্লান্তি আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে, তবে এটিকে হালকাভাবে নেবেন না। এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
• গলা ব্যথা: যদি দীর্ঘ সময় ধরে গলা ব্যথা বা গিলতে অসুবিধা হয়, তবে এটি গলা, খাদ্যনালী বা থাইরয়েড ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ সময় মতো চিকিৎসা না করালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। যদি এই সমস্যাগুলো একটানা থাকে, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং সঠিক পরীক্ষা করান।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন
যদি গলা ব্যথা বা গিলতে অসুবিধার মতো লক্ষণ তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে বা খারাপ হতে শুরু করে, তবে এটিকে অবহেলা করবেন না। এই ধরনের লক্ষণ গলা, খাদ্যনালী বা থাইরয়েড ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে। সময় মতো চিকিৎসা করানো খুবই জরুরি, কারণ সাধারণ পরীক্ষা যেমন ইমেজিং স্ক্যান, বায়োপসি বা ব্লাডওয়ার্কের মাধ্যমে ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে গুরুতর সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
• ধূমপান ত্যাগ করুন: তামাক সেবন মুখ, গলা এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ। তামাক ত্যাগ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।
• স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: স্থূলতা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, যেমন কলোরেক্টাল, জরায়ু এবং স্তন ক্যান্সারের সাথে যুক্ত। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যায়।
• অ্যালকোহল সেবন সীমিত করুন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে লিভার এবং গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অ্যালকোহল সেবন সীমিত করে এই ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
• নিয়মিত ব্যায়াম করুন: শারীরিক কার্যকলাপ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কয়েক মিনিট ব্যায়াম করলে এই ঝুঁকি কমতে পারে।
• রুটিন পরীক্ষা করান: সময় মতো স্ক্রিনিং এবং পরীক্ষা ক্যান্সারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যার ফলে চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা সম্ভব।