৩০ বছরের পর নারীদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা

🎧 Listen in Audio
0:00

বয়স বাড়ার সাথে সাথে শারীরিক চাহিদাও বদলাতে থাকে। বিশেষ করে, ৩০ বছরের পর থেকেই নারীদের শরীরে অনেক অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন শুরু হয়। কিন্তু সমস্যা হয় যখন নারীরা নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করে। বাড়ি, অফিস ও সন্তানদের দায়িত্বের মধ্যে তারা নিজেদেরকেই পিছনে ফেলে রাখেন।

কিন্তু সত্যিটা হলো, যদি আপনি নিজে সুস্থ না থাকেন, তাহলে অন্যদেরও ভালোভাবে দেখাশুনা করতে পারবেন না। তাই ৩০ বছরের পর কিছু মৌলিক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়মিত করানো জরুরি। এতে শুধুমাত্র রোগের প্রাথমিক সনাক্তকরণই হয় না, বরং অনেক বড় স্বাস্থ্য সমস্যা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রার পরীক্ষা

আপনার কোনো লক্ষণ অনুভূত হোক বা না হোক, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে শরীরকে ভেতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই দুটো জিনিস হার্ট ডিজিজ, ব্রেন স্ট্রোক ও কিডনি সমস্যা যেসব গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। তাই বছরে একবার রক্তচাপ পরীক্ষা ও লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করা জরুরি। এই দুটি সহজ পরীক্ষা আপনার হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক কিছু জানাতে পারে।

প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট – সার্ভিক্যাল ক্যান্সার থেকে রক্ষা

এই টেস্ট গর্ভাবস্থার গ্রীবা (cervix) ক্যান্সার ধরা পড়তে সাহায্য করে। ৩০ বছরের পর এই টেস্ট তিন বছরে একবার অবশ্যই করানো উচিত। যদি আপনার পরিবারে কারো ক্যান্সার হয়ে থাকে, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এটি আরও ঘন ঘন করানো যেতে পারে। এই টেস্ট খুব সহজ এবং বেশি সময়ও লাগে না। কিন্তু এটি আপনার জীবন বাঁচাতে পারে।

ম্যামোগ্রাফি – স্তন ক্যান্সারের পরীক্ষা

স্তন ক্যান্সার নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু স্বস্তির বিষয় হল, যদি এটি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসা সহজ ও কার্যকরী হয়। ম্যামোগ্রাফি একটি ইমেজিং টেস্ট যা স্তনের টিস্যুতে যেকোনো সমস্যা সময়মতো ধরে ফেলে। যদি কোনো নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে এই টেস্ট আরও জরুরি হয়ে ওঠে। ডাক্তারের পরামর্শে এর ফ্রিকোয়েন্সি নির্ধারণ করা যেতে পারে।

বোন ডেনসিটি টেস্ট – হাড়ের শক্তির পরীক্ষা

৩০ বছরের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে, যার ফলে হাড় ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে। এর ফলাফল হল – অস্টিওপোরোসিস অর্থাৎ হাড়ের পাতলা ও দুর্বল হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে যদি আপনার খাদ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে বা আপনি খুব কম শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে এই টেস্ট অবশ্যই করান। DEXA স্ক্যানের মাধ্যমে বোন ডেনসিটি পরিমাপ করা হয় এবং হাড়ের সঠিক অবস্থা জানা যায়।

থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট – মেটাবলিজমের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য

থাইরয়েড হরমোন আমাদের শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। যদি এতে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে, ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে, মুড সুইং হতে পারে এবং চুলও পড়তে পারে। তাই ৩০ বছরের পর TSH, T3 এবং T4 টেস্ট করা জরুরি। এটি একটি খুব সাধারণ টেস্ট কিন্তু এর রিপোর্ট অনেক কিছু বলে দেয়।

নারীরা এখন নিজেদের উপেক্ষা করা বন্ধ করুন

অনেক সময় নারীরা ভাবেন যে যতক্ষণ না কোনো সমস্যা অনুভূত হয়, ততক্ষণ পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু মনে রাখবেন, রোগ ততক্ষণ পর্যন্ত নিঃশব্দ থাকে যতক্ষণ না তা বেড়ে ওঠে। এবং লক্ষণ প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই টেস্ট আপনার শরীরের ভেতরের গল্প বলে দিতে পারে।

```

Leave a comment