প্রতি বছরের মতো এ বছরও নির্জলা একাদশীর পর্ব সমগ্র ভারতে শ্রদ্ধা ও তপস্যার সাথে পালিত হবে। এই ব্রত বিশেষভাবে কঠিন তপস্যার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ এতে জলও গ্রহণ করা হয় না। নির্জলা শব্দের অর্থই হলো “জল ছাড়া”, এবং এটাই এই একাদশীকে অন্যান্য সকল একাদশী থেকে আলাদা করে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে নির্জলা একাদশী ৬ জুন, শুক্রবার পড়ছে। এই দিনে ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করে ব্রত রাখলে অনেক যুগ ধরে কৃত পুণ্য লাভ করা যায়। এই ব্রত তাদের জন্যও অমূল্য সুযোগ যারা সারা বছর সকল একাদশী পালন করতে পারেন না। বিশ্বাস করা হয় নির্জলা একাদশীর ব্রত রাখলেই সকল একাদশীর পুণ্য লাভ করা যায়।
ব্রতের তিথি ও সময়
- একাষী তিথি আরম্ভ: ৬ জুন ২০২৫, শুক্রবার, রাত ০২:১৫ টা
- একাষী তিথি সমাপ্তি: ৭ জুন ২০২৫, শনিবার, প্রাতঃ ০৪:৪৭ টা
- ব্রত পারণ (উপবাস ভাঙ্গার) শুভ মুহূর্ত: ৭ জুন ২০২৫, দুপুর ০১:৪৪ টা থেকে বিকেল ০৪:৩১ টা পর্যন্ত
নির্জলা একাদশীর গুরুত্ব
এই একাদশীর ব্রত রাখলে ব্যক্তি এই জন্ম ও পরবর্তী জন্মে অত্যধিক পুণ্য লাভ করে। ভীমসেনের সাথে যুক্ত একটি কাহিনী আছে, যিনি সকল একাদশী পালন করতে পারতেন না। তখন মহর্ষি ব্যাস তাকে এই ব্রত রাখার পরামর্শ দেন, যার ফলে তিনি সকল একাদশীর ফল একসাথে পেতে পারেন। তাই এই ব্রতকে ভীমসেনী একাদশীও বলা হয়।
ব্রত রাখার পদ্ধতি
- ব্রতের পূর্ব রাত্রে হালকা সাধু ভোজন করুন এবং মনে সঙ্কল্প করুন যে পরের দিন সকালে ব্রত রাখবেন।
- ৬ জুন ব্রহ্মমুহূর্তে উঠে স্নান করুন এবং ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করুন।
- জল, অন্ন, ফল ইত্যাদি কিছুই গ্রহণ করবেন না। শুধুমাত্র অত্যন্ত প্রয়োজন হলে তুলসী জল দিয়ে মুখ ঠান্ডা করতে পারেন।
- সারাদিন বিষ্ণুসহস্রনাম, বিষ্ণু চালিসা, ভগবদ গীতা ইত্যাদির পাঠ করুন।
- দীপ জ্বালিয়ে “ॐ नमो भगवते वासुदेवाय” মন্ত্রের জপ করুন।
- রাত্রে বিষ্ণু ভগবানের আরতি করুন এবং ব্রত অব্যাহত রাখুন।
ব্রত পারণের পদ্ধতি (৭ জুন)
- প্রাতঃ উঠে স্নান করুন এবং সূর্য দেবকে অর্ঘ্য দিন।
- তারপর ভগবান বিষ্ণুর পূজা করে সাধু ভোগ অর্পণ করুন।
- আরতির পর গরিব ও ব্রাহ্মণদের অন্ন ও বস্ত্র দান করুন।
- নিজেও প্রসাদ গ্রহণ করে ব্রতের পারণ করুন।
- পারণে শুধুমাত্র সাধু ভোজন করুন, রসুন-পেঁয়াজ ব্যবহার নিষিদ্ধ।
দানের গুরুত্ব
নির্জলা একাদশীর ব্রত তখনই পূর্ণ বলে গণ্য হয় যখন পারণের দিন কোনো দরিদ্রকে কিছু দান করা হয়।
কী দান করবেন?
- শীতল জলের পাত্র
- ছাতা, চপ্পল, বস্ত্র
- ফল, অন্ন, গুড়
- তামার লোটা বা কলস
- দক্ষিণা (ধন)
বিশেষ সাবধানতা
- নির্জলা একাদশীর ব্রত যদি কোনো স্বাস্থ্যগত কারণে করা যায় না, তাহলে ফলাহার অথবা শুধুমাত্র জলব্রতও করা যায়।
- ব্রতের দিন ক্রোধ, মিথ্যা, প্রতারণা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।
- মানসিক ও শারীরিক পবিত্রতা বজায় রাখুন।
নির্জলা একাদশী শুধুমাত্র একটি ব্রত নয়, বরং আত্মসংযম, আস্থা ও তপস্যার প্রতীক। এই দিনটি আমাদের জীবনের ব্যস্ততার মাঝে থেমে আত্মাকে শুদ্ধ করার এবং ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণের সুযোগ দেয়।