এই বার হনুমান জয়ন্তী ১২ এপ্রিল, শনিবার পালিত হচ্ছে, যা এক বিরল সংযোগ। একদিকে এটি ভগবান হনুমানের আবির্ভাবের উৎসব, অন্যদিকে এটি ন্যায়ের দেবতা শনির প্রতিও উৎসর্গিত। এই সংযোগ পৌরাণিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ শনি দেব এবং হনুমানজীর মধ্যে দুটি রোমাঞ্চকর ও শিক্ষাপ্রদ কাহিনী এই দিনটিকে আরও বিশেষ করে তোলে।
যখন হনুমানজী শনি দেবকে করেছিলেন বিনম্র
প্রচলিত কথার মতে, একবার শনি দেব তার শক্তির উপর অত্যধিক গর্বিত হয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে তার বক্রদৃষ্টির প্রভাবে কেউ বাঁচতে পারবে না। কিন্তু যখন তিনি ধ্যানস্থ হনুমানজীর উপর দৃষ্টিপাত করলেন, তখন তার সব অহংকার চুরমার হয়ে গেল। হনুমানজীর উপর শনির দৃষ্টির কোন প্রভাব পড়েনি, যার ফলে শনি দেব ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন এবং হনুমানজীর ধ্যান ভঙ্গ করতে লাগলেন। যখন তিনি হনুমানজীর বাহু ধরার চেষ্টা করলেন, তখন হনুমানজী তাকে তার লেজে জড়িয়ে ভালো করে ঘুরিয়ে দিলেন এবং অবশেষে শান্তভাবে ধ্যানে মগ্ন হয়ে রইলেন।
তার পরাজয় ও আঘাতে ব্যথিত শনি দেব হনুমানজীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন যে তিনি কেবলমাত্র হনুমানজী নয়, তাঁর ভক্তদের কখনোই কষ্ট দেবেন না। তখন থেকেই বিশ্বাস করা হয় যে হনুমানজীর ভক্তদের উপর শনির দুর্দৃষ্টি পড়ে না।
যখন হনুমান শনি দেবের রক্ষক হয়েছিলেন
আরেকটি কথার মতে, যখন রাবণ নবগ্রহদের বন্দী করেছিলেন, তখন তিনি শনি দেবকে উল্টে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। সেই সময় হনুমানজী লঙ্কায় সীতা মাতার সন্ধানে এসে লঙ্কা দাহ করেন। নবগ্রহরা রাবণের বন্দিগৃহ থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেল, কিন্তু উল্টে ঝুলন্ত শনি দেব বের হতে পারেননি। তখন হনুমানজী তাঁর করুণ কান্না শুনে তাঁকে মুক্ত করলেন।
হনুমানজী তাকে কেবলমাত্র রাবণের বন্দিদশা থেকে মুক্তই করেননি, বরং তার পোড়া শরীরে সরিষার তেলও লাগিয়েছিলেন যাতে তিনি আরাম পান। সেই থেকেই এই প্রথা চালু আছে যে শনিবার শনি দেবকে সরিষার তেল অর্পণ করলে তিনি প্রসন্ন হন এবং ভক্তদের দুঃখ দূর করেন।
শনির দৃষ্টি থেকে রক্ষা করেন হনুমান
পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, হনুমানজীর আরাধনা করার ফলে ভক্তদের উপর শনির দশা বা সাড়েসাতি প্রভাব কম হয়। এই কারণেই হনুমানজীকে “শনি পীড়া নিবারক”ও বলা হয়। হনুমান জয়ন্তী এবং শনিবারের মিলন এই বার তাঁর ভক্তদের জন্য বিশেষ ফলদায়ক বলে মনে করা হচ্ছে।
উপসংহার
হনুমান জয়ন্তী কেবলমাত্র তাঁর জন্মোৎসব নয়, এটি সেই অগণিত কারণের স্মরণ করিয়ে দেয় যার জন্য হনুমানজীকে সংকটমোচন বলা হয়। এই দিনে হনুমানজীর ভক্তির সাথে সাথে শনি দেবের কৃপা লাভেরও বিশেষ সুযোগ থাকে। সরিষার তেল দান, সুন্দরকান্ড পাঠ এবং শ্রীরাম নাম জপ—এই সব উপায়ে এই বিশেষ দিনটিকে আরও শুভ করে তোলা যায়।