শ্রী সত্যনারায়ণ ব্রতকথা - দ্বিতীয় অধ্যায় কি? শোনা ও বলার উপকারিতা কি? জেনে নিন What is Shri Satyanarayan Vrat Katha - Chapter II? What are the benefits of listening and narrating? know it
শ্রী সত্যনারায়ণ ব্রতকথায় পাঁচটি অধ্যায় আছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের কথা নিচে দেওয়া হল। সত্যনারায়ণ কথার দ্বিতীয় অধ্যায়ের কথা ভক্তি ভরে এখানে পড়ুন এবং আনন্দ লাভ করুন।
সুতজী বললেন:
হে ঋষিগণ! পূর্বে যিনি এই ব্রত করেছিলেন তাঁর ইতিহাস বলছি, মনোযোগ দিয়ে শুনুন! সুন্দর কাশীপুরীতে এক অত্যন্ত দরিদ্র ব্রাহ্মণ বাস করতেন। ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে তিনি পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াতেন। ব্রাহ্মণদের প্রতি প্রেমপূর্ণ ভগবান একদিন ব্রাহ্মণের বেশ ধারণ করে তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে বিপ্র! তুমি কেন প্রতিদিন দুঃখিত হয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছ? দীন ব্রাহ্মণ বললেন: আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ। ভিক্ষার জন্য পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াই। হে ভগবান! যদি এর কোনো উপায় জানেন তবে বলুন।
বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বলেন যে, সত্যনারায়ণ ভগবান মনোকামনা পূরণ করেন, তাই তুমি তাঁর পূজা কর। এটি করলে মানুষ সকল দুঃখ থেকে মুক্তি পায়।
বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ রূপে আসা সত্যনারায়ণ ভগবান সেই দরিদ্র ব্রাহ্মণকে ব্রতের সমস্ত নিয়ম বুঝিয়ে দিয়ে অন্তর্হিত হলেন। ব্রাহ্মণ মনে মনে ভাবতে লাগলেন যে, বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ যে ব্রত করার কথা বলে গিয়েছেন, তা তিনি অবশ্যই করবেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রাতে তাঁর ঘুম এল না। তিনি সকালে উঠে সত্যনারায়ণ ভগবানের ব্রত করার সংকল্প করে ভিক্ষার জন্য বেরিয়ে গেলেন।
সেই দিন দরিদ্র ব্রাহ্মণ ভিক্ষায় অনেক ধন পেলেন। যা দিয়ে তিনি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিলিত হয়ে শ্রী সত্যনারায়ণ ভগবানের ব্রত সম্পন্ন করলেন।
ভগবান সত্যনারায়ণের ব্রত সম্পন্ন করার পর সেই দরিদ্র ব্রাহ্মণ সকল দুঃখ থেকে মুক্তি পেলেন এবং অনেক প্রকার সম্পত্তিতে সমৃদ্ধ হলেন। সেই সময় থেকে এই ব্রাহ্মণ প্রতি মাসে এই ব্রত করতে লাগলেন। এইভাবে সত্যনারায়ণ ভগবানের ব্রত যে মানুষ করবে, সে সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্তি পেয়ে মোক্ষ লাভ করবে। যে মানুষ এই ব্রত শুনবে, সেও সকল দুঃখ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।
সুতজী বললেন, এইভাবে নারদজীকে নারায়ণজী যে শ্রী সত্যনারায়ণ ব্রতের কথা বলেছিলেন, তা আমি তোমাদের বললাম। হে বিপ্রগণ! আমি আর কি বলব?
ঋষিগণ বললেন:
হে মুনিবর! সংসারে সেই ব্রাহ্মণের থেকে শুনে আর কে কে এই ব্রত করেছেন, আমরা সকলে সেই কথা শুনতে চাই। এর জন্য আমাদের মনে শ্রদ্ধার ভাব রয়েছে।
সুতজী বললেন:
হে মুনিগণ! যে যে এই ব্রত করেছে, সে সব শুনুন! এক সময় সেই ব্রাহ্মণ ধন ও ঐশ্বর্য অনুসারে তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে এই ব্রত করার জন্য প্রস্তুত হলেন। সেই সময় এক কাঠুরে বুড়ো লোক এসে কাঠ বাইরে রেখে ব্রাহ্মণের বাড়ির ভিতরে গেল। তৃষ্ণায় কাতর সেই কাঠুরে তাদেরকে ব্রত করতে দেখে ব্রাহ্মণকে প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা এটা কি করছেন এবং এটা করলে কি ফল পাওয়া যায়? দয়া করে আমাকেও বলুন।
ব্রাহ্মণ বললেন, সকল মনোকামনা পূরণকারী এই শ্রী সত্যনারায়ণ ভগবানের ব্রত। তাঁর কৃপাতেই আমার ঘরে ধন-ধান্য ইত্যাদি বৃদ্ধি হয়েছে।
বিপ্রের কাছ থেকে সত্যনারায়ণ ব্রতের বিষয়ে জেনে কাঠুরে খুব খুশি হলেন। চরণামৃত নিয়ে ও প্রসাদ খাওয়ার পরে তিনি নিজের বাড়ি গেলেন। কাঠুরে মনে মনে সংকল্প করলেন যে, আজ কাঠ বিক্রি করে যে টাকা পাবেন তা দিয়ে শ্রী সত্যনারায়ণ ভগবানের উত্তম ব্রত করবেন। মনে এই চিন্তা নিয়ে বুড়ো লোকটি মাথায় কাঠ রেখে সেই শহরে বিক্রি করতে গেলেন, যেখানে ধনী লোকেরা বেশি থাকেন। সেই শহরে তিনি তাঁর কাঠের দাম আগের চেয়ে চারগুণ বেশি পেলেন।
বুড়ো লোকটি আনন্দের সাথে দাম নিয়ে কলা, চিনি, ঘি, দুধ, দই এবং গমের আটা ও সত্যনারায়ণ ভগবানের ব্রতের অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে নিজের বাড়ি গেলেন। সেখানে তিনি তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের ডেকে বিধি-বিধান অনুসারে সত্যনারায়ণ ভগবানের পূজা ও ব্রত করলেন। এই ব্রতের প্রভাবে সেই বুড়ো কাঠুরে ধন পুত্র ইত্যাদি লাভ করে সংসারের সমস্ত সুখ ভোগ করে অন্তকালে বৈকুণ্ঠধামে গমন করলেন।
॥ইতি শ্রী সত্যনারায়ণ ব্রত কথার দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত॥
শ্রীমন্ন নারায়াণ-নারায়ণ-নারায়ণ।
ভজ মন নারায়ণ-নারায়ণ-নারায়ণ।
শ্রী সত্যনারায়ণ ভগবান কি জয়॥