প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ, ৬ই জুন, জম্মু-কাশ্মীর সফরে আসছেন। এই সফরকালে তিনি কাটড়া থেকে শ্রীনগরের জন্য চালু হতে চলা ভারত মাতা এক্সপ্রেস ট্রেনকে সবুজ পতাকা দেখিয়ে উদ্বোধন করবেন, যার ফলে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত রেল যোগাযোগ পুরোপুরি নিশ্চিত হবে।
শ্রীনগর: আজ, ৬ই জুন ২০২৫, ভারতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জম্মু-কাশ্মীরের কাটড়া থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত চলাচলকারী ভারত মাতা এক্সপ্রেস ট্রেনকে সবুজ পতাকা দেখিয়ে উদ্বোধন করবেন। এই পদক্ষেপ কেবল কাশ্মীরকে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সংযুক্ত করার একটি বড় রেল সংযোগের সাফল্যই নয়, বরং জম্মু-কাশ্মীরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিশাও নির্ধারণ করবে।
এই ঐতিহাসিক উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ৪৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, যার মধ্যে শ্রী মাতা বৈষ্ণো দেবী ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল এক্সেলেন্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও অন্তর্ভুক্ত।
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত রেল সংযোগের অভূতপূর্ব বিস্তার
দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাটড়া-বনিহাল রেল লিঙ্কের প্রযুক্তিগত জটিলতা এবং কঠিন ভৌগোলিক অবস্থার কারণে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সরাসরি রেল সংযোগ বছরের পর বছর ধরে অসম্পূর্ণ ছিল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই ট্র্যাকের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলেও, প্রযুক্তিগত পরীক্ষা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়ার কারণে এর উদ্বোধন বিলম্বিত হচ্ছিল। ২০২৫ সালের এপ্রিলে কর্মসূচী নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু আবহাওয়ার প্রতিকূলতা এবং পরবর্তীতে পাহাড়গামে হামলার কারণে উদ্বোধন স্থগিত করা হয়।
এখন ৬ই জুন প্রধানমন্ত্রী মোদী এই দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দেশকে একটি নতুন উপহার দেবেন। কাটড়া থেকে শ্রীনগরের মধ্যে ভারত মাতা ট্রেন চালু হওয়ার ফলে কেবলমাত্র যাতায়াত সহজতর হবে না, বরং কাটড়ার পর জম্মু-শ্রীনগর পথেও স্থায়ী ও নিরাপদ সংযোগ নিশ্চিত হবে। এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভূমিধ্বস এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে সড়কপথ অনেক সময় ব্যাহত হয়, তবে ট্রেন পরিষেবা একটি স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে প্রমাণিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের অংশ হিসেবে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফরে কেবল ভারত মাতা ট্রেনের উদ্বোধনই নয়, তিনি জম্মু-কাশ্মীরের মৌলিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য ৪৬,০০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল লিঙ্ক (ইউএসবিআরএল) প্রকল্পকে জাতিকে উৎসর্গ করা হবে, যা প্রযুক্তিগত ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিক থেকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল।
এর মধ্যে ১১৯ কিলোমিটার ট্র্যাক সুড়ঙ্গের ভেতরে অবস্থিত এবং এই প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ৪৩,৭৮০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী এই সময় চিনাব নদীর উপর নির্মিত দেশের সর্বোচ্চ আর্চ সেতুরও পরিদর্শন করবেন, যা প্রযুক্তিগত সাফল্যের এক অনন্য উদাহরণ।
এছাড়াও, শ্রীনগরে জাতীয় মহাসড়ক-১-এ সংগ্রামা জংশন এবং জাতীয় মহাসড়ক-৪৪-এ বেমিনা জংশনে দুটি ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করা হবে, যার ফলে যানবাহনের চলাচলে উন্নতি এবং গতি সৃষ্টি হবে। জাতীয় মহাসড়ক-৭০১-এর রাফিয়াাবাদ থেকে কুপওয়ারা পর্যন্ত প্রশস্তকরণ এবং এনএইচ-৪৪৪-এ শোপিয়ান বাইপাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে, যার মোট ব্যয় প্রায় ১৯৫২ কোটি টাকা।
শ্রী মাতা বৈষ্ণো দেবী ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল এক্সেলেন্সের ভিত্তিপ্রস্তর
কাটড়ায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে চলা শ্রী মাতা বৈষ্ণো দেবী ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল এক্সেলেন্সের ভিত্তিপ্রস্তরও প্রধানমন্ত্রী স্থাপন করবেন। এটি রিয়াশি জেলার প্রথম মেডিকেল কলেজ হবে, যা আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং স্থানীয় তরুণদের উচ্চশিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বৃহস্পতিবার কাটড়ায় পৌঁছে প্রস্তুতির পর্যালোচনা করবেন। তিনি রেলস্টেশন, খেলাধুলার স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করবেন। এই সময় কাটড়ার সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও প্রধানমন্ত্রীর সম্মাননা জানাবে এবং তাঁর সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাবে।
বিশেষ করে উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল লিঙ্ক প্রকল্প, দেশের উন্নয়ন এবং অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত। এটি ইঙ্গিত করে যে তরুণ প্রজন্ম দেশের উন্নয়নের জন্য সচেতন এবং দায়িত্বশীল।
