লোক জনশক্তি পার্টি (LJP)-এর কার্যনির্বাহী সংস্থা তাদের সভাপতি চিরাগ পাশোয়ানকে আগামী বিহার বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার পরামর্শ দিয়েছে। দলের মতে, চিরাগের ‘বিহার ফার্স্ট, বিহারী ফার্স্ট’ স্লোগান জনতার মনে গভীরে বসে গেছে।
চিরাগ পাশোয়ান: বিহারে আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় লোক জনশক্তি পার্টি (LJP)-এর জাতীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাশোয়ানের নির্বাচনে লড়াই করার খবরে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দলের কার্যনির্বাহী সংস্থা সম্প্রতি সর্বসম্মতিক্রমে চিরাগ পাশোয়ানকে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার পরামর্শ দিয়েছে। দলের কৌশল এবং জনতার প্রত্যাশা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘বিহার ফার্স্ট, বিহারী ফার্স্ট’ স্লোগান বিশেষ পরিচয়
চিরাগ পাশোয়ান তার রাজনৈতিক জীবনে ‘বিহার ফার্স্ট, বিহারী ফার্স্ট’ স্লোগান তৈরি করেছেন, যা বিহারের মানুষের কাছে গভীরে পৌঁছে গেছে। এটাই কারণ LJP-এর কার্যনির্বাহী সদস্যদের বিশ্বাস, চিরাগকে এবার বিধানসভা নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত যাতে তিনি সরাসরি জনতার কাছে গিয়ে তাদের সমস্যা বুঝতে পারেন এবং আরও ভালো প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।
পাটনাতে অনুষ্ঠিত LJP-এর কার্যনির্বাহী বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয় এবং সার্ভে রিপোর্টও এই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছে যে বিহারের জনতা চিরাগকে বিধানসভায় দেখতে চায়।
সার্ভেতে চিরাগের পক্ষে ইতিবাচক ইঙ্গিত
LJP একটি ব্যাপক সার্ভে করেছে, যেখানে দেখা গেছে বিহারের ভোটাররা চায় চিরাগ পাশোয়ান বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। সার্ভেতে অধিকাংশ মানুষ বলেছে তারা চায় চিরাগ বিহারের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য বিধানসভায় কাজ করুন। এই সার্ভে দলের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে, যা নির্বাচনী কৌশল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে, নির্বাচনে লড়াই করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চিরাগ পাশোয়ানের উপর নির্ভর করবে।
চিরাগ পাশোয়ানের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার সম্ভাবনার আলোচনার সাথে সাথে এই প্রশ্নও উঠেছে যে তিনি কোন আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পাটনা, দানাপুর অথবা হাজিপুর বিধানসভা আসনে চিরাগের জন্য নজর রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে হাজিপুর আসন তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ তিনি লোকসভা সদস্য হিসেবেও এই অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন এবং এই অঞ্চলে তার ভিত্তি শক্ত। পাটনা এবং দানাপুর আসনও রাজনৈতিক দিক থেকে কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে।
লোকসভায় চিরাগের প্রভাবশালী কর্মকাণ্ড
চিরাগ পাশোয়ান লোকসভা নির্বাচনে তার শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার দল পাঁচটি আসনে নির্বাচন লড়ে এবং সবগুলো আসনে জয়লাভ করে ১০০ শতাংশ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখেছে। এই চমৎকার সাফল্য LJP-কে বিহারের রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর সাথে সাথে চিরাগ পাশোয়ান কেন্দ্রীয় সরকারে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রীর পদ পেয়েছেন, যা তার রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র। বিজেপি, জেডিইউ, আরজেডি, কংগ্রেসসহ অনেক দলই তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এই নির্বাচনে LJP-এর ভূমিকাও নির্ণায়ক হতে পারে। চিরাগ পাশোয়ানের বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণে দলকে শক্তিশালী করা এবং তার জনপ্রিয়তার সরাসরি সুবিধা পাওয়া যাবে।
চিরাগের দল এবারও মিত্রতার পক্ষে এবং এনডিএ-এর সাথে মিত্রতায় ভারসাম্য বজায় রাখার ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, তিনি বিহারের যুব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে তার পরিচিতি আরও গভীর করতে পারেন।
চিরাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ
যেখানে দলের কার্যনির্বাহী সংস্থা তাকে নির্বাচনে লড়াই করার পরামর্শ দিয়েছে, সেখানে চিরাগ পাশোয়ানের নিজের সিদ্ধান্ত হবে যে তিনি বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করবেন কি না। চিরাগ এ ব্যাপারে এখনও কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। কিন্তু দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে চিরাগ এই প্রস্তাবে গুরুত্বসহকারে ভাবছেন।
চিরাগের নির্বাচনী ময়দানে আসা LJP-এর জন্য রাজনৈতিক শক্তির সাথে সাথে বিহারের উন্নয়নে নতুন দিক নির্দেশকারী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। যদি তিনি বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেন তবে এটি কেবল তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ছবিটিকেই উন্নত করবে না, বরং দল বিহারে ব্যাপক জনসমর্থনও পাবে।