ভারতে প্রিমিয়াম টেক প্রোডাক্টের বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে অ্যাপল তাদের সম্প্রসারণের গতি আরও ত্বরান্বিত করেছে। কোম্পানি এখন বেঙ্গালুরুতে তাদের তৃতীয় রিটেল স্টোর খুলতে চলেছে, যা ফিনিক্স মল অফ এশিয়ায় অবস্থিত হবে। এর আগে অ্যাপল মুম্বাইয়ের বি কে সি এবং দিল্লীর সাকিয়েতে তাদের ফ্ল্যাগশিপ স্টোর খুলেছিল। বেঙ্গালুরুর উচ্চ প্রযুক্তি বাজারে প্রবেশ অ্যাপলের ভারতকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের ইঙ্গিত বহন করে।
বেঙ্গালুরুর স্টোর: আকার ও অবস্থান
অ্যাপলের এই নতুন রিটেল স্টোর বেঙ্গালুরুর হেব্বাল এলাকায় অবস্থিত আগামী ফিনিক্স মল অফ এশিয়ার প্রথম তলায় খোলা হবে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদনের মতে, এই স্টোরের আকার দিল্লীর সেলেক্ট সিটিওয়াক মলে অবস্থিত অ্যাপল স্টোরের সমান হবে। তবে, এটি এখনও মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড ড্রাইভে অবস্থিত ২০,৮০০ বর্গফুটের বিশাল স্টোর থেকে ছোট হবে।
স্টোরের সঠিক বর্গফুটের তথ্য এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবে সূত্রমতে, এটি একটি মাঝারি আকারের আউটলেট হবে, যা স্থানীয় গ্রাহক এবং টেক-প্রেমীদের অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে ডিজাইন করা হবে।
ভাড়া এবং লিজ চুক্তির বিস্তারিত
অ্যাপল এই স্টোরের জন্য যে লিজ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তার মতে কোম্পানি প্রতি বছর ২.০৯ কোটি টাকা ভাড়া হিসেবে প্রদান করবে। অর্থাৎ, প্রতি মাসে প্রায় ১৭.৪ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এছাড়াও, কোম্পানি রেভিনিউ শেয়ারিং মডেলের উপর কাজ করবে যেখানে প্রথম তিন বছর পর্যন্ত মোট বিক্রয়ের ২% এবং তার পরে ২.৫% অংশ মল ব্যবস্থাপনার কাছে যাবে।
রেভিনিউ ভিত্তিক ভাড়ার একটি সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বার্ষিক মূল ভাড়ার দ্বিগুণ পর্যন্ত হবে। এছাড়াও, কোম্পানি ১.০৪৬ কোটি টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট জমা করেছে। লিজের শর্ত অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর ভাড়া ১৫% বৃদ্ধি পাবে।
বেঙ্গালুরু কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বেঙ্গালুরু ভারতের টেক ক্যাপিটাল হিসেবে পরিচিত। এখানে বিপুল সংখ্যক আইটি পেশাদার, স্টার্টআপ এবং শীর্ষস্থানীয় টেক কোম্পানি রয়েছে। অ্যাপলের জন্য এখানে রিটেল স্টোর খোলা শুধুমাত্র ব্র্যান্ডের উপস্থিতিকে শক্তিশালী করবে না, বরং স্থানীয় বাজারে সরাসরি সংযোগের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করবে।
অ্যাপল ইতোমধ্যেই বেঙ্গালুরুতে তাদের ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের মাধ্যমে প্রযুক্তিগতভাবে সক্রিয়, কিন্তু এটি প্রথমবারের মতো তারা এখানে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য তাদের এক্সক্লুসিভ রিটেল অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।
ভারতে অ্যাপলের দ্রুত বর্ধমান উপস্থিতি
অ্যাপলের এই ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে যখন কোম্পানি সম্প্রতি তাদের ত্রৈমাসিক আয় কল ভারত সম্পর্কে বড় ইঙ্গিত দিয়েছে। সিইও টীম কুক ভারতকে "পরবর্তী বৃহৎ বাজার" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে কোম্পানি এখানে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তুত।
মুম্বাই এবং দিল্লীর পরে এখন বেঙ্গালুরুতে স্টোর খোলা এবং পুনে, হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি শহরে সম্ভাবনা অনুসন্ধান অ্যাপলের সেই কৌশলের অংশ, যার মাধ্যমে তারা ভারতে তাদের প্রিমিয়াম প্রোডাক্টের রিটেল অ্যাক্সেস উন্নত করতে চায়।
ভারতে রেকর্ড বিক্রয় এবং স্থানীয় উৎপাদনের প্রভাব
অ্যাপলের জন্য ভারত এখন শুধুমাত্র একটি সম্ভাবনাময় বাজার নয়, বরং এটি কোম্পানির বিশ্বব্যাপী বিক্রয় বৃদ্ধির একটি বড় অংশ হয়ে উঠছে। আইফোনের স্থানীয় উৎপাদন (বিশেষ করে আইফোন ১৫ সিরিজের সমাবেশ) এবং সাম্প্রতিক দামের স্থায়িত্ব ভারতীয় গ্রাহকদের অ্যাপলের দিকে আকৃষ্ট করেছে।
এছাড়াও, অ্যাপল অনলাইন স্টোরের সাফল্য এবং অ্যাপল পে যেমন পরিষেবার সম্প্রসারণ কোম্পানিকে ভারতে আরও শক্তিশালী করেছে। এখন কোম্পানি এই উদ্যোগগুলিকে অফলাইন রিটেল স্টোর দিয়ে সমর্থন করছে।
অ্যাপলের পরিকল্পনা এখানেই শেষ হয় না। প্রতিবেদনের মতে, কোম্পানি পুনেতেও স্টোর খোলার বিষয়ে বিবেচনা করছে। এছাড়াও, দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে এবং মুম্বাইতেও কিছু অন্যান্য প্রিমিয়াম অবস্থানের অধ্যয়ন করা হচ্ছে। এর সরাসরি অর্থ হল অ্যাপল ভারতে মেট্রো শহরগুলির সাথে সাথে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তরের শহরগুলির দিকেও ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে পারে।
অ্যাপল স্টোর: শুধুমাত্র বিক্রয় নয়, একটি অভিজ্ঞতা
অ্যাপলের রিটেল স্টোর শুধুমাত্র মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ বিক্রি করার জন্য নয়। এগুলো কোম্পানির 'টুডে অ্যাট অ্যাপল' যেমন ইন্টারঅ্যাক্টিভ সেশন, লাইভ ডেমো এবং গ্রাহক সহায়তা পরিষেবার কেন্দ্রও। ভারতে খোলা প্রথম দুটি স্টোরেও এই ধরনের ইভেন্টগুলিকে ব্যাপক প্রশংসা মিলিত হয়েছিল।
এই প্রেক্ষিতে বেঙ্গালুরুতে অ্যাপল স্টোর খোলা শুধুমাত্র একটি নতুন বিক্রয় কেন্দ্র হবে না, বরং এটি শহরের প্রযুক্তিগত এবং সৃজনশীল ব্যবহারকারীদের জন্য একটি অভিজ্ঞতা স্থলও হবে।