লফঙ্গে ওয়েব সিরিজ: ছোট শহরের যুবকদের বাস্তবতার প্রতিফলন

লফঙ্গে ওয়েব সিরিজ: ছোট শহরের যুবকদের বাস্তবতার প্রতিফলন
সর্বশেষ আপডেট: 07-06-2025

একটি প্রাচীন কথা আছে, 'স্বপ্ন দেখবে না, তাহলে পূর্ণ হবে কি করে।' এই চিন্তাভাবনার সাথেই 'লফঙ্গে' নামক ওয়েব সিরিজের গল্প শুরু হয়, কিন্তু এটি শুধুমাত্র স্বপ্ন পূর্ণতার কথা বলে না, বরং অপূর্ণ স্বপ্ন থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা এবং তাদের গভীরতাও উন্মোচন করে। এই চিন্তাকে জীবন্ত করে তুলেছে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিরিজ 'লফঙ্গে', যা একসাথে অনেকগুলো মানসিক ও সামাজিক স্তরকে স্পর্শ করে।

পরিচালক প্রেম মিস্ত্রী এবং অভিষেক যাদব কর্তৃক নির্মিত এই সিরিজ বন্ধুত্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বেকারত্ব এবং মধ্যবিত্তের সংগ্রামগুলিকে অত্যন্ত আন্তরিকতা এবং বাস্তবতার সাথে তুলে ধরে।

গল্প যা প্রতিটি ছোট শহরের যুবকের সাথে জড়িত

'লফঙ্গে'র গল্প তিনজন বাল্যবন্ধু চৈতন্য (অনুদ সিং ঢাকা), কমলেশ (হর্ষ বেনিওয়াল) এবং রোহন (গগন অরোরা) কেন্দ্রিক, যারা নয়ডার নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজের সাথে সম্পর্কিত। এই তিনজনেই নিজ নিজ স্বপ্নের পিছনে ছুটছে, কিন্তু তাদের পথে আর্থিক সংকট, পারিবারিক দায়িত্ব এবং সামাজিক প্রত্যাশা প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

চৈতন্য পড়াশোনায় মেধাবী এবং সরকারি চাকরি পেতে চায়, যাতে তার পরিবারের উপর থেকে ঋণের বোঝা কমাতে পারে। প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হওয়া অনিয়ম এবং বারবার ব্যর্থতা তাকে ঝুঁকিপূর্ণ পথে নিয়ে যায়—জুয়ায়।

কমলেশ, যে একজন অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তার বাবার কিরানার দোকান থেকে মুক্তি পেয়ে মায়ানগরীর দিকে ছুটে যেতে চায়। কিন্তু যখন সে তার বাবার সংগ্রামী জীবনের বাস্তবতা বুঝতে পারে, তখন তার চিন্তাভাবনায় গভীরতা আসে। রোহন, যে তার কলেজের প্রেমিকা ইশিতা (বর্ষা সিং)-এর সাথে লিভ-ইন-এ থাকতে চায়, একটি বিক্রয়ের কাজ পায়। কিন্তু ইশিতার বেশি আয় এবং তাদের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীনতা এই সম্পর্ককে অস্থির করে তোলে।

বাস্তবতার কাছাকাছি 'লফঙ্গে'

'লফঙ্গে' ওয়েব সিরিজের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর প্রামাণিকতা। এটি এমন কিছু বিষয় উত্থাপন করে যা আজকের যুবকদের জীবনে সাধারণ:

  • সরকারি চাকরির অস্থিরতা
  • বেকারত্বের বর্ধমান প্রভাব
  • ছোট শহরের যুবক এবং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা
  • পারিবারিক আর্থিক অবস্থার মধ্যে পুষে রাখা স্বপ্ন
  • সম্পর্কে আর্থিক বৈষম্যের প্রভাব

অভিনয় এবং চিত্রনাট্য

অনুদ সিং ঢাকা চৈতন্যের চরিত্রে দক্ষ। তার মুখে সংকোচ, হতাশা এবং অস্থিরতার মিশ্রণ গল্পটিকে তীব্র করে তোলে। হর্ষ বেনিওয়াল, যার কমিক টাইমিং ইন্টারনেটে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়, এখানে গুরুতর ও আবেগঘন দৃশ্যেও প্রভাব ফেলে। গগন অরোড়াও রোহনের চরিত্রটিকে বাস্তবতার কাছাকাছি রেখেছেন, বিশেষ করে যখন সে তার আত্মসম্মান এবং ইশিতার মধ্যে দোদুল্যমান হয়ে পড়ে। বর্ষা সিং এবং সলোনি গৌরের মতো শিল্পীরাও সহায়ক ভূমিকায় তাদের ছাপ রেখেছেন।

পরিচালনা এবং প্রযুক্তিগত দিক

প্রেম মিস্ত্রী এবং অভিষেক যাদবের পরিচালনা সংবেদনশীল এবং গভীর। তারা নাটকীয়তার থেকে দূরে থেকে গল্পটিকে বাস্তব জীবনের সুরে তুলে ধরেছেন। চিত্রগ্রহণে ছোট শহরের রাস্তাঘাট, ভাড়া বাড়ি, সরকারি অফিস এবং সংকীর্ণ চিন্তাধারার সামাজিক স্তরগুলি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সঙ্গীত এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর গল্পের মেজাজের সাথে মিলে যায়। কোনো আড়ম্বরপূর্ণ গান নেই এবং কোনো জোরপূর্বক রোমান্স নেই—সবকিছু গল্পের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ।

যদিও সিরিজটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ, তবে কিছু জায়গায় এর গতি কিছুটা ধীর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মিডিল এপিসোডগুলিতে, যেখানে চরিত্রের আভ্যন্তরীণ সংঘাত কিছুটা বেশি টানাটানি মনে হয়। পাশাপাশি, কিছু দর্শক এর শেষটিকে 'ওপেন এন্ডেড' মনে করতে পারে, যা সবার কাছে সন্তোষজনক নাও হতে পারে।

Leave a comment