দিলজিৎ দোসাঞ্ঝ অভিনীত ‘সরদার জি ৩’ ছবিতে পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক, দিলজিৎ বললেন- ‘কলার কোনো সীমা নেই’।
সরদার জি ৩: পঞ্জাবী গায়ক ও অভিনেতা দিলজিৎ দোসাঞ্ঝ আবারও আলোচনায়, কিন্তু এবার কারণ কোনও নতুন ছবি নয়, বরং ছবিটি ঘিরে একটি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিতর্ক। দিলজিতের আসন্ন ছবি ‘সরদার জি ৩’-তে পাকিস্তানের অভিনেত্রী হানিয়া আমিরের উপস্থিতি ভারতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘#BoycottDiljit’ ট্রেন্ড করছে এবং চলচ্চিত্র সংগঠনগুলি তাঁর প্রজেক্টগুলি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে দিলজিৎ এই সমস্ত বিতর্কের প্রতি একটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছেন।
বিতর্কের মূল কারণ কি?
প্রকৃতপক্ষে, ‘সরদার জি ৩’ একটি পঞ্জাবী ছবি যেখানে দিলজিৎ দোসাঞ্ঝের সাথে পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমিরকে নেওয়া হয়েছে। এই খবর প্রকাশিত হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। অনেক ইউজার এটিকে ভারতের ‘জাতীয় স্বাতন্ত্র্যের বিরুদ্ধে’ বলে উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছেন যে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে একজন ভারতীয় শিল্পী কেন একজন পাকিস্তানী শিল্পীর সাথে কাজ করছেন।
FWICE তীব্র আপত্তি জানিয়েছে
FWICE (Federation of Western India Cine Employees)-এর সভাপতি বি.এন. তিওয়ারী এক বিবৃতিতে বলেছেন যে দিলজিৎ দোসাঞ্ঝ ‘ভারতীয় জওয়ান এবং তাদের শহীদদের’ অপমান করেছেন। তিনি বলেছেন:
‘একজন পাকিস্তানি অভিনেত্রীকে অগ্রাধিকার দেওয়া আমাদের দেশ ও সৈন্যদের প্রতি আনুগত্যের বিরুদ্ধে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে একজন ভারতীয় শিল্পী, যিনি এখানকার জনতার কৃপায় তারকা হয়েছেন, তিনি এখন শত্রু দেশের শিল্পীদের সুযোগ দিচ্ছেন।’
FWICE শুধুমাত্র ‘সরদার জি ৩’ নয়, দিলজিতের সকল প্রজেক্ট ভারতে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
দিলজিতের বক্তব্য: কলার কোনো সীমা নেই
যদিও দিলজিৎ সরাসরি এই বিতর্কের উপর কোনও মন্তব্য করেননি, তবে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি পরোক্ষভাবে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। গ্র্যামি প্রেসিডেন্ট প্যানোস এ. পানায়ের সাথে আলাপচারিতায় দিলজিৎ বলেছেন:
‘বিশ্ব বর্তমানে যুদ্ধের অবস্থায় আছে, কিন্তু এই পরিস্থিতির উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। সঙ্গীত এমন একটি শক্তি যা দেশ-দেশকে সংযুক্ত করে। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি যে আমি সেই কলার অংশ যা সীমানা পেরিয়ে মানুষকে একত্রিত করে।’
তিনি আরও বলেছেন:
‘আমাদের জাতিগুলোর উপরে উঠে পৃথিবী মাতার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত। সীমানা তো এই পৃথিবীরই অংশ। রাজনীতি একটি আলাদা ক্ষেত্র, এবং আমি তাতে কিছু না বুঝেই কিছু বলতে চাই না। আমার কাছে প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান এবং আমি তা ইতিবাচকতার সাথে কাটাতে চাই।’
ট্রেলার প্রকাশ এবং ভারতে বয়কটের দাবি
‘সরদার জি ৩’-এর ট্রেলার সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু ভারতে তা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ছবিটি ২৭ জুন ২০২৫-তে ভারতের বাইরে মুক্তি পাওয়ার কথা, কিন্তু ভারতে এর মুক্তির বিষয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ট্রেলার প্রকাশের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় #BoycottDiljit জোরদার হয়ে উঠেছে। যেখানে এক শ্রেণী দিলজিতের ‘সীমান্তহীন দর্শনের’ প্রশংসা করছে, সেখানে অন্য শ্রেণী তাঁকে জাতিবিরোধী মানসিকতার সাথে যুক্ত করছে।
দুই ভাগে বিভক্ত দর্শকদের মতামত
এই সমস্ত বিতর্কের উপর দর্শকদের মতামত দুই প্রান্তে বিভক্ত:
- একদিকে যেখানে কিছু লোক দিলজিতের ‘সীমান্তহীন দর্শনের’ প্রশংসা করছেন, সেখানে
- অন্যদিকে তাঁকে জাতিবিরোধী মানসিকতার পোষক বলে চিহ্নিত করে ছবি থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
এমনকি কিছু লোক তাঁকে আগামী দেশপ্রেমিক ছবি থেকেও বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
হানিয়া আমিরের ভূমিকা কী?
পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমির ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তবে, ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বিবেচনা করে একজন পাকিস্তানি শিল্পীকে ভারতীয় ছবিতে নেওয়া সবসময় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করে।
দিলজিৎ দোসাঞ্ঝের ছবিতে হানিয়ার উপস্থিতি এই বিতর্ক আবারও তীব্র করে তুলেছে।
দিলজিত পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্মান
এই সবের মধ্যে, কানাডার টরন্টো মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি দিলজিৎ দোসাঞ্ঝের নামে একটি কোর্স চালু করেছে। এই কোর্সটি তাঁর সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের উপর ভিত্তি করে, যা থেকে স্পষ্ট যে বিশ্বজুড়ে দিলজিতকে একজন গ্লোবাল আইকন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
```