বলিউডে ‘শক্তিমান’-এর রিমেক নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। ৯০-এর দশকে বাচ্চাদের মনে রাজত্ব করেছিল এমন সুপারহিরো চরিত্রটিতে এবার একটি বড় বাজেটের ছবি নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয় কে শক্তিমানের চরিত্রে অভিনয় করবেন।
মনোরঞ্জন: ৯০-এর দশকে ভারতীয় টেলিভিশনের জগতে এক নাম উঠে এসেছিল, যা বাচ্চা থেকে বড়দের সকলের মনে রাজত্ব করেছিল – ‘শক্তিমান’। কিন্তু জানেন কি এই কাল্ট শো তৈরির জন্য অভিনেতা মুকেশ খান্নাকে প্রচণ্ড আর্থিক সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছিল? শক্তিমানের সাফল্যের পেছনে একটা এমন গল্প লুকিয়ে আছে যেখানে আছে উৎসাহ, আস্থা, নিষ্ঠা, পাশাপাশি ঋণ এবং ঝুঁকি।
শক্তিমান: একটা শো যা ইতিহাস গড়েছে
১৯৯৭ সালে সম্প্রচারিত এই শোটি অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তার নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল। বাচ্চারা ‘গঙ্গাধরই শক্তিমান’ এই লাইনটির সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছিল এবং টেলিভিশনে সম্প্রচারের সময় রাস্তায় নীরবতা নেমে আসত। কিন্তু পর্দায় যে সুপারহিরো দেখা যেত তার পেছনে একজন সাধারণ মানুষের অসাধারণ সংগ্রামের গাথা লুকিয়ে ছিল – তিনি ছিলেন মুকেশ খান্না।
মুকেশ খান্না একটা পুরোনো সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করেছিলেন যে শক্তিমান তৈরির জন্য তার কাছে যথেষ্ট অর্থ ছিল না। তিনি প্রথমে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন, যার বিনিময়ে সেই বন্ধু শোতে ৫০ শতাংশ শেয়ার নিয়েছিল। কিছুদিন পর এই চুক্তি মুকেশকে অস্বস্তিকর মনে হতে শুরু করেছিল কারণ তিনি শোতে দিন-রাত পরিশ্রম করছিলেন আর লাভের অর্ধেক যাচ্ছিল অন্যের কাছে।
রণবীর সিংহ সম্পর্কে মন্তব্য এবং ছবির আলোচনা
মুকেশ খান্না তারপর একটা বড় সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বিখ্যাত শিল্পপতি অম্বু মুরারকার কাছ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন যাতে শোটির উপর তার পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকে। এটাই সেই ঝুঁকি ছিল যা ‘শক্তিমান’কে সম্পূর্ণরূপে মুকেশ খান্নার পরিচয় করে তুলেছিল। তিনি শুধু শক্তিমানের নির্মাণই করেননি, বরং নিজেই সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং গঙ্গাধরের মতো নিষ্পাপতাকেও পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন।
গত কয়েক বছরে ‘শক্তিমান’কে বড় পর্দায় আনার চেষ্টা চলেছে। তবে এখনও পর্যন্ত ছবি নিয়ে কোনো স্পষ্ট অগ্রগতি হয়নি। যখন ছবির নায়ক নিয়ে আলোচনা শুরু হয় তখন রণবীর সিংহ এবং আল্লু অর্জুনের নাম উঠে আসে। কিন্তু মুকেশ খান্না রণবীর সিংহ সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে “রণবীর শক্তিমান হতে পারবেন না।” এর বিপরীতে তিনি তেলেগু স্টার আল্লু অর্জুনকে উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে দেখেছেন।
কেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শক্তিমান?
অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেলেও ২০০৫ সালে ‘শক্তিমান’ শোটি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ ছিল – বাজেট এবং আর্থিক সংকট। একসময় এমন অবস্থা হয়েছিল যে মুকেশ খান্নাকে প্রতি পর্বের জন্য ৭.৮০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হত, যা ১০৪ পর্বের পর বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা করা হয়েছিল। পরে নির্মাতারা তাকে প্রতি পর্বের জন্য ১৬ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু শো-এর খরচ এবং আর্থিক চাপের কারণে এই যাত্রা আর বেশিদিন চলতে পারেনি।
যদিও শক্তিমান টেলিভিশনে বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু তার ঐতিহ্য আজও মানুষের মনে জীবিত। বাচ্চারা আজও শক্তিমানের কমিকস পড়ে, ইউটিউবে পর্ব দেখে এবং ‘সত্যের সাথে থাকো’র মতো বার্তা গ্রহণ করে।