একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক WhatsApp গ্রুপের মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। স্ক্যামাররা জাল ওয়েবসাইট এবং বিনিয়োগের প্রস্তাবের মাধ্যমে তাকে ফাঁদে ফেলেছিল। প্রথমে মুনাফা দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন করা হয়েছিল।
WhatsApp Scam: আপনার WhatsApp শুধু চ্যাট করার মাধ্যম নয়, এখন সাইবার জালিয়াতদের সবচেয়ে বড় অস্ত্রও হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক ঘটনা এমন যে তা অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে—আন্ধ্রপ্রদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে প্রতারকরা WhatsApp গ্রুপের মাধ্যমে প্রায় ১.৯ কোটি টাকার প্রতারণা করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই প্রতারণায় জাল ওয়েবসাইট, আসল ব্র্যান্ডিং এবং সুপরিকল্পিত মনস্তাত্ত্বিক কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।
কীভাবে কোটি টাকার প্রতারণা হল?
আন্ধ্রপ্রদেশে বসবাসকারী ডক্টর এম. বাতমানেবানে মৌনিসামি, যিনি JIPMER (Jawaharlal Institute of Postgraduate Medical Education and Research), পুদুচেরির প্রাক্তন পরিচালক ছিলেন, তাকে একদিন WhatsApp-এ ‘H-10 Nuvama’ নামের একটি গ্রুপে যুক্ত করা হয়। এই গ্রুপটি দাবি করে যে এটি স্বাস্থ্য এবং বিনিয়োগ নির্দেশিকা সম্পর্কিত এবং এখানে Nuvama Funds (পূর্বে Edelweiss)-এর অভ্যন্তরীণ টিপস এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়া যাবে।
যেহেতু অধ্যাপক আগে থেকেই এই কোম্পানি সম্পর্কে জানতেন এবং তাদের ফান্ডে বিনিয়োগও করেছিলেন, তাই তিনি গ্রুপটিকে বৈধ মনে করে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
আসল কোম্পানির নাম, নকল বিশ্বাস
অধ্যাপক আগে থেকেই Nuvama (Edelweiss)-এর বিনিয়োগ ফান্ডে টাকা লাগিয়েছিলেন, তাই তিনি এই গ্রুপটিকে আসল ভেবেছিলেন। এই বিশ্বাসকে আরও মজবুত করতে "কঙ্গনা" নামের একজন মহিলা তার সাথে ব্যক্তিগত চ্যাটে কথা বলেন এবং নিজেকে কোম্পানির অনুমোদিত প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দেন।
কঙ্গনা তাকে একটি জাল ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পাঠায়, যা দেখতে হুবহু আসল কোম্পানির মতোই ছিল। অধ্যাপক ১০,০০০ টাকা প্রাথমিক বিনিয়োগ করেন এবং সাথে সাথেই তাকে ১৩,০০০ টাকা ফেরত দেখানো হয়। এটি ছিল স্ক্যামারদের প্রথম জয়—বিশ্বাসের বীজ বপন করা হয়েছিল।
১.৯ কোটি টাকার বিশ্বাস…এবং একটি বড় প্রতারণা
পরবর্তী ৫ সপ্তাহে অধ্যাপক ক্রমাগত বিনিয়োগ বাড়াতে থাকেন। জাল ওয়েবসাইটে তাকে শেয়ারের উচ্চ পারফরম্যান্স এবং বিশাল রিটার্ন দেখানো হয়। এমনকি তার অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স ৩৫ কোটি টাকা পর্যন্ত দেখানো হয়েছিল।
কিন্তু যখন তিনি ৫ কোটি টাকা তোলার চেষ্টা করেন, তখন স্ক্যামাররা জানায় যে তাকে প্রথমে প্রসেসিং ফি দিতে হবে। প্রথমে ফি-এর পরিমাণ ছিল ৩২ লক্ষ টাকা, পরে তা কমিয়ে ২৫% করা হয়। অধ্যাপক আরও ৭.৯ লক্ষ টাকা পাঠান, কিন্তু তাতেও তিনি কোনো টাকা পাননি।
মিথ্যার দ্বিতীয় রূপ: জাল অফিসার এবং নতুন অজুহাত
জালিয়াতরা এবার আরও একটি চালাকি করে—তাদের 'আশীষ কেহার' নামে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পরিচয় করানো হয়, যিনিও অনেক মিথ্যা আশ্বাস দেন। কিন্তু টাকা ফেরত দেননি।
তখন অধ্যাপকের পুরো বিশ্বাস হয় যে এটি একটি সুপরিকল্পিত সাইবার জালিয়াতির অপারেশন ছিল। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং ঘটনার তদন্ত চলছে।
এই স্ক্যাম কী শেখায়?
১. WhatsApp গ্রুপে যুক্ত হওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে
কোনও অজানা গ্রুপে যোগ দেওয়ার আগে তার উদ্দেশ্য, সদস্য এবং অ্যাডমিনের বিষয়ে ভালোভাবে যাচাই করুন।
২. সামান্য লাভ দেখিয়ে বড় ফাঁদ পাতা হয়
শুরুর দিকের লাভ প্রায়শই স্ক্যামারদের কৌশল। দ্রুত রিটার্নের লোভ আসলে বড় ধাক্কা দিতে পারে।
৩. জাল ওয়েবসাইটের প্রমাণ খুঁজুন
আসল ওয়েবসাইটের বানান, SSL সার্টিফিকেট (https://), এবং অফিসিয়াল অ্যাপের সাথে ক্রস-চেক করা জরুরি।
৪. প্রসেসিং ফি = প্রতারণার সতর্কবার্তা
বিনিয়োগ থেকে টাকা তোলার জন্য ফি চাওয়াটাই এক ধরনের প্রতারণার ইঙ্গিত।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই ধরনের স্ক্যামে এখন AI এবং ফেক চ্যাটবটও ব্যবহার করা হচ্ছে।
- ব্র্যান্ডেড ওয়েবসাইটের ক্লোনিং
- আসল নাম ব্যবহার করা
- WhatsApp-এ বিশ্বাসযোগ্য ভাষা ব্যবহার করা
এগুলো একত্রিত হয়ে যে কাউকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
কীভাবে এই ধরনের WhatsApp স্ক্যাম থেকে বাঁচবেন?
- অজানা গ্রুপ থেকে অবিলম্বে বের হয়ে যান
- কোনো বিনিয়োগের আগে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও অ্যাপ যাচাই করুন
- ত্বরিত লাভের লোভ থেকে নিজেকে বাঁচান
- Cyber Crime হেল্পলাইন ১৯৩০-এ দ্রুত অভিযোগ করুন
- যেকোনো আর্থিক লেনদেনের আগে পরিবার বা আর্থিক পরামর্শদাতার পরামর্শ নিন