UPI समेत বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিসের জন্য মোবাইল ভেরিফিকেশন-এর উপর এবার চার্জ লাগতে পারে। দূৰসংযোগ বিভাগ (DoT) এর জন্য নতুন নিয়ম আনতে চলেছে, যার মূল উদ্দেশ্য হল প্রতারণা (fraud) কমানো।
টেকনোলজি: দেশে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা অনলাইন ট্রানজাকশন ও ডিজিটাল পেমেন্ট-এর সুরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করতে দূৰসংযোগ বিভাগ (DoT) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে। এর অধীনে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন (Mobile Number Verification)-এর জন্য চার্জ আদায়ের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে যখনই কেউ UPI, ব্যাংক বা অন্য কোনো ডিজিটাল পরিষেবার জন্য মোবাইল নম্বরের সত্যতা যাচাই (verification) করবে, তখন তার জন্য চার্জ দিতে হতে পারে।
কী এই DoT-এর নতুন প্রস্তাব?
সূত্রের খবর অনুযায়ী, দূৰসংযোগ বিভাগ 24 জুন 2025 তারিখে একটি খসড়া (draft) তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন একটি আরও স্বচ্ছ ও সুরক্ষিত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করা হবে। এই খসড়াতে এই বিধান রাখা হয়েছে যে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন (mobile number verification) করা সমস্ত কোম্পানি বা সংস্থাকে এর জন্য চার্জ দিতে হবে। যেহেতু বেশিরভাগ কোম্পানি এই চার্জ গ্রাহকদের থেকেই আদায় করে, তাই গ্রাহকদের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী একটি MNV প্ল্যাটফর্ম (Mobile Number Verification Platform) তৈরি করা হবে, যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে যে বর্তমানে একটি মোবাইল নম্বর কে ব্যবহার করছে এবং সেই নম্বরটি বৈধভাবে সক্রিয় আছে কিনা। এর ফলে জাল সিম কার্ড, প্রতারণামূলক কল এবং ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনা কমানো সম্ভব হবে।
কত হবে চার্জ?
খসড়া নিয়ম অনুযায়ী, যদি মোবাইল ভেরিফিকেশন-এর অনুরোধ কোনো কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সংস্থা দ্বারা পাঠানো হয়, তাহলে প্রতি মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশনের জন্য 1.5 টাকা চার্জ লাগবে। অন্যদিকে, যদি প্রাইভেট কোম্পানিগুলি এই অনুরোধ করে, তাহলে তাদের প্রতি মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশনের জন্য 3 টাকা চার্জ দিতে হবে। অর্থাৎ, উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো UPI অ্যাপ বা ব্যাংক আপনার মোবাইল নম্বরের ভেরিফিকেশন করে, তাহলে তার পরিবর্তে তারা আপনার কাছ থেকে এই চার্জ আদায় করতে পারে।
কোন পরিষেবাগুলির উপর প্রভাব পড়বে?
এই প্রস্তাবটি কার্যকর হলে UPI, নেট ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড, ডিজিটাল ওয়ালেট, ই-কেওয়াইসি (e-KYC) –এর মতো সমস্ত পরিষেবাগুলিতে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশনের সময় এই চার্জ প্রযোজ্য হবে। এর ফলে ডিজিটাল লেনদেন (digital transaction) করা কোটি কোটি গ্রাহকের উপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। DoT-এর এই নতুন প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হল সাইবার নিরাপত্তা (cyber security) আরও শক্তিশালী করা। বিভাগটি জানিয়েছে যে অনেক সময় মানুষ একই সিম-কে বারবার আলাদা নামে সক্রিয় করে প্রতারণা করে থাকে। এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে এই ধরনের কার্যকলাপের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা সহজ হবে।
কীভাবে কাজ করবে নতুন প্ল্যাটফর্ম?
MNV প্ল্যাটফর্ম মোবাইল নম্বরের বর্তমান অবস্থা, মালিকানা স্বত্ব এবং ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাই করবে। এর জন্য সমস্ত অনুমোদিত KYC সত্তাকে এই প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত করা হবে। যদি কোনো নম্বরের উপর প্রতারণার সন্দেহ হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে তা চিহ্নিত করা হবে এবং 90 দিনের জন্য ব্লক করে রাখা হবে। এমনকি, সেই নম্বরের ইতিহাস (history) 90 দিন পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে ফেলা হবে, যাতে নতুন ব্যবহারকারীকে নম্বর বরাদ্দ করার সময় কোনো সমস্যা না হয়।
ব্যাংকগুলি প্রস্তুতি শুরু করেছে
জানা গেছে, অনেক ব্যাংক ইতিমধ্যেই এই নতুন সিস্টেমটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের (pilot project) মাধ্যমে পরীক্ষা করছে। তারা সেই মোবাইল নম্বরগুলি সনাক্ত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে যেগুলি থেকে প্রতারণামূলক কার্যকলাপের সম্ভাবনা বেশি। দূৰসংযোগ বিভাগ এই খসড়ার উপর স্টেকহোল্ডার (stakeholder) এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে 30 দিনের মধ্যে পরামর্শ ও আপত্তি চেয়েছে। এর পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং নিয়মগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে।
কি লাভ হবে?
এই নিয়ম থেকে মোবাইল ভিত্তিক প্রতারণা, জাল UPI ট্রানজাকশন এবং জালিয়াতির ঘটনা হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এর ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীকে প্রতি ভেরিফিকেশনের জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হতে পারে, যা থেকে সামান্য অসন্তুষ্টিও দেখা যেতে পারে। আপাতত, সকলের নজর থাকবে পরামর্শ ও আপত্তির পর সরকার এই প্রস্তাবটি কিভাবে কার্যকর করে।