ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার একটি ঐতিহাসিক এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টিকারী রায় দিয়েছে, যার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মে পোস্ট হওয়া কনটেন্টের জন্য দায়ী করা হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া: ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক রায়ে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর দায়িত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছে। তারা এখন থেকে তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত কনটেন্টের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী থাকবে। সুপ্রিম কোর্টে ৮-৩ ভোটে এই রায় পাস হয়, যার ফলে গুগল, মেটা, টিকটক-এর মতো বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর উপর বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, বর্ণবাদ এবং সহিংসতা ছড়ানো কোনোও কন্টেন্টের উপর নজরদারি রাখা এবং তা দ্রুত সরানোর বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে।
এতদিন ব্রাজিলে নিয়ম ছিল, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরেই আপত্তিকর বা অবৈধ কনটেন্ট সরানোর ব্যবস্থা নিত, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় প্রায়ই দেরি হতো এবং অনেক ক্ষেত্রে নির্দেশ সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হতো না। সুপ্রিম কোর্টের নতুন আদেশে এই ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং কোম্পানিগুলোকে সক্রিয়ভাবে নজরদারি ও ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অবৈধ কনটেন্ট নিয়ে নমনীয়তা
আদালত অবশ্য স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, কোন কনটেন্ট অবৈধ হবে, তা প্রতিটি মামলার তথ্যের উপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ, কোনো কনটেন্ট আপত্তিকর কিনা, তা কেস-টু-কেস ভিত্তিতে দেখা হবে। এরপরও, এই রায় সোশ্যাল মিডিয়ায় দায়বদ্ধতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত প্রতিকার পাবে।
যদি কোনো ব্যবহারকারী কোনো অবৈধ বা আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ে অভিযোগ করেন এবং সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি তা সরাতে ব্যর্থ হয়, তবে এখন সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
মার্কিন প্রতিক্রিয়ায় উত্তেজনা
ব্রাজিলের এই রায়ের আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রভাব দেখা যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই রায়ের প্রতি আপত্তি জানিয়ে সতর্ক করেছেন যে, যদি মার্কিন নাগরিকদের বাকস্বাধীনতার উপর সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলের কর্মকর্তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি হলো, এই রায় মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন করতে পারে, যেখানে ব্রাজিল এটিকে তাদের সার্বভৌমত্ব এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কিত একটি বিষয় হিসেবে উল্লেখ করছে।
কোম্পানিগুলোর বিকল্প কি?
সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে যে, যদি সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো প্রমাণ করতে পারে যে তারা অভিযোগ পাওয়ার পর সময়মতো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে, তাহলে তাদের দায়ী করা হবে না। অর্থাৎ, কোম্পানিগুলোর জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা আবশ্যক হবে। কোম্পানিগুলোর সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হবে তাদের মডারেশন সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করা এবং অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
গুগল, মেটা এবং টিকটকের মতো কোম্পানিগুলোর জন্য এই পরিবর্তন বড় ধাক্কা হতে পারে, কারণ ব্রাজিল তাদের একটি বড় বাজার এবং এখন তাদের স্থানীয় নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
পুরোনো নিয়ম থেকে নতুন রায় কিভাবে আলাদা?
ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট আইন (Marco Civil da Internet) অনুসারে, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে তখনই দায়ী করা হতো যখন কোনো আদালত অবৈধ কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিত। কিন্তু এতে অনেক ত্রুটি ছিল — নির্দেশের পরেও অনেক সময় ব্যবস্থা নেওয়া হতো না, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতো।
নতুন রায়ে আদালত বলেছে যে, কোম্পানিগুলোর প্রাথমিক দায়িত্ব হলো সহিংসতা, শিশু পর্নোগ্রাফি, বর্ণবাদী ভাষণ বা প্রতারণার মতো কনটেন্টগুলি নিজেরাই নিরীক্ষণ করা এবং তাৎক্ষণিকভাবে সরানো। এই আদেশের পটভূমিতে এমন অনেক ঘটনা ছিল, যেখানে কোম্পানিগুলো বারবার অভিযোগ সত্ত্বেও সহিংস ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী কনটেন্ট সরায়নি।