বিহার-এ ই-ভোটিং-এর সূচনা হয়েছে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে, যেখানে ব্লকচেইন এবং ফেস রেকগনিশন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। এই সুবিধা প্রবীণ নাগরিক এবং দূর-দূরান্তে বসবাসকারী ভোটারদের জন্য শুরু করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে সারা দেশে চালু হতে পারে।
ই-ভোটিং: ভারতে গণতন্ত্রকে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করে বিহার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না, এমনকি ভোট কেন্দ্রে যাওয়ারও কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। বিহার দেশের প্রথম রাজ্য, যারা পৌর নির্বাচনের জন্য মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ই-ভোটিং ব্যবস্থা শুরু করেছে। শুক্রবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দীপক প্রসাদ এর উদ্বোধন করে বলেন, এই পরিবর্তন কেবল সুবিধা বাড়াবে না, বরং ভবিষ্যতের ডিজিটাল ভারতের ভিত্তি স্থাপন করবে।
বিহার-এ ই-ভোটিং-এর সূচনা: কোথায় এবং কিভাবে?
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার দীপক প্রসাদ শুক্রবার ঘোষণা করেন যে, এই সুবিধাটি বর্তমানে পাইলট প্রকল্পের অধীনে পাটনা, রোহতাস এবং পূর্ব চম্পারণ জেলার ৬টি নগর পরিষদে চালু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যদি এই মডেল সফল হয়, তাহলে এটি বিধানসভা নির্বাচনেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হল সেইসব ভোটারদের সুবিধা দেওয়া, যারা স্বাস্থ্যগত, ভৌগোলিক বা অন্য কোনো কারণে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন না — যেমন প্রবীণ নাগরিক, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা বা পরিযায়ী শ্রমিক।
ই-ভোটিং-এর এই প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে?
বিহারের এই নতুন প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা খুবই উন্নত। এতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি, ফেস রেকগনিশন এবং ডুয়াল অথেন্টিকেশন-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি নিশ্চিত করে যে প্রতিটি ভোট বৈধ, সুরক্ষিত এবং ট্র্যাক করার যোগ্য — ভোটার-এর পরিচয় প্রকাশ না করেই।
এই সিস্টেমের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি:
- ফেস ভেরিফিকেশন: ভোট দেওয়ার আগে ভোটারের মুখ স্ক্যান করা হবে এবং ভোটার আইডি-র সঙ্গে ক্রস-ভেরিফাই করা হবে।
- ব্লকচেইন নিরাপত্তা: সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ব্লকচেইনে নথিভুক্ত করা হবে, যাতে ডেটা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা না থাকে।
- মোবাইল লগইন নিরাপত্তা: একটি মোবাইল নম্বর থেকে সর্বাধিক দুইজন ভোটার লগইন করতে পারবে।
- হ্যাকিং-প্রুফ ডিজাইন: সিস্টেমটিকে সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য মাল্টি লেয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কারা এটি ব্যবহার করতে পারবে?
বর্তমানে, এই সেবার সুবিধা বিশেষভাবে নির্বাচিত ভোটার শ্রেণীর জন্য দেওয়া হয়েছে:
- প্রবীণ নাগরিক
- বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি
- গর্ভবতী মহিলা
- দূর-দূরান্তে বসবাসকারী পরিযায়ী ভোটার
- অস্থায়ীভাবে শহরের বাইরে বসবাসকারী মানুষ
ই-ভোটিং-এর জন্য কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন?
ই-ভোটিং-এ অংশ নিতে প্রথমে আপনাকে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দ্বারা উপলব্ধ মোবাইল অ্যাপ e-SECBHR আপনার স্মার্টফোনে ইনস্টল করতে হবে। এই অ্যাপটি বর্তমানে শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য উপলব্ধ।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া:
- Google Play Store থেকে e-SECBHR অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
- অ্যাপ খোলার পর আপনার মোবাইল নম্বর লিখুন।
- তারপর সেটিকে আপনার ভোটার আইডি-র সঙ্গে লিঙ্ক করুন।
- ওটিপি-র মাধ্যমে মোবাইল নম্বর যাচাই করুন।
- সফল যাচাইকরণের পর, আপনার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে।
- ভোটের দিন আপনি এই অ্যাপ বা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারণ করবে এই পাইলট প্রকল্প
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার আরও স্পষ্ট করেছেন যে, বর্তমানে এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র পৌর নির্বাচনগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদি এই পরীক্ষা সফল হয় এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও এর বিস্তার ঘটানো যেতে পারে।
এর মানে হল, বিহারের এই পদক্ষেপ আগামী বছরগুলিতে সারা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারে। এর ফলে ভোটদানের হার বৃদ্ধি, জাল ভোট কমানো এবং ভোটার-এর সুবিধা বাড়ানোর সম্পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলি কি কি?
যেখানে এই উদ্যোগ ডিজিটাল ভারতের দিকে একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ, সেখানে এর সাথে কিছু সতর্কতা এবং চ্যালেঞ্জের দিকেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি:
- সাইবার নিরাপত্তা: যদি ব্লকচেইন এবং সার্ভার অবকাঠামো পর্যাপ্ত শক্তিশালী না হয়, তবে এই প্রযুক্তি হ্যাকিং-এর সহজ লক্ষ্য হতে পারে।
- ডিজিটাল সাক্ষরতা: গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার এখনও সীমিত, যার ফলে কিছু মানুষের রেজিস্ট্রেশন এবং ভোট দিতে অসুবিধা হতে পারে।
- ফেস রেকগনিশনের অপব্যবহার: এটা নিশ্চিত করতে হবে যে ফেস ডেটা শুধুমাত্র ভোটদানের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।