ভারতীয় মহাকাশচারী শুভেন্দু শুক্লা স্পেস স্টেশনে পৌঁছেছেন। তিনি ১৪ দিন মহাকাশে থাকবেন এবং মাইক্রোগ্র্যাভিটি সম্পর্কিত সাতটি গবেষণা করবেন। এই মিশনটি ভারতের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য।
Axiom Mission: ভারতীয় মহাকাশচারী শুভেন্দু শুক্লা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি আমেরিকার বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা SpaceX-এর মাধ্যমে ২৮ ঘণ্টার যাত্রা করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ পৌঁছেছেন। এই মিশনের অধীনে তিনি ১৪ দিন মহাকাশে থাকবেন এবং সেখানে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাবেন। শুভেন্দু, ভারতের দ্বিতীয় নাগরিক যিনি মহাকাশ স্টেশনে পা রেখেছেন। এর আগে ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মা সোভিয়েত স্পেস স্টেশনে আট দিন কাটিয়েছিলেন।
শুভেন্দু শুক্লার ঐতিহাসিক মিশন
এই মিশনের সূচনা হয়েছিল যখন চারজন মহাকাশচারীর একটি দল, যার মধ্যে শুভেন্দুও ছিলেন, SpaceX-এর ড্রাগন ক্যাপসুলে চড়ে রওনা হন। প্রায় ২৮ ঘণ্টার মহাকাশ যাত্রার পর তাঁদের যানটি নির্ধারিত সময়ের ৩৪ মিনিট আগে ISS-এর সাথে যুক্ত হয়। এই ডকিং একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছিল।
ডকিংয়ের পরে দুই ঘণ্টার নিরাপত্তা পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। মিশনের সময় যখন গ্রাউন্ড টিম মহাকাশচারীদের সাথে যোগাযোগ করে, তখন শুভেন্দু উৎসাহের সাথে "নমস্কার ফ্রম স্পেস" বলেন। তিনি জানান যে তিনি তাঁর সহযাত্রীদের সাথে সেখানে থাকতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।
ভারতের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত
শুভেন্দুর এই মিশনটি কেবল ভারতের জন্য বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি দেশের মহাকাশ সাফল্যের বিষয়টিকে বিশ্ব মঞ্চে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি ভারতের সেই কয়েকজন মানুষের মধ্যে একজন, যিনি স্পেস স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন। তাঁর এই কৃতিত্ব আগামী দিনের মহাকাশ মিশনের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে।
শুভেন্দু শুক্লা মহাকাশে কী করবেন?
শুভেন্দু শুক্লা এই মিশনের সময় সাতটি ভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাবেন, যার উদ্দেশ্য হল মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব বোঝা এবং ভবিষ্যতে মহাকাশ মিশনের জন্য কোন কোন জৈবিক ও প্রযুক্তিগত উপায় কার্যকর হতে পারে তা জানা।
পেশীগুলির উপর মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব
শুভেন্দুর প্রথম গবেষণা মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে পেশীগুলির (Muscles) উপর প্রভাব সম্পর্কিত। মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানো নভোচারীদের পেশী দুর্বল হয়ে যায়। এর আগে সুনীতা উইলিয়ামসের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিল।
ভারতের Institute of Stem Cell Science and Regenerative Medicine এই গবেষণায় সহযোগিতা করছে। এই অধ্যয়নে বোঝা যাবে যে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে পেশীগুলির প্রতিক্রিয়া কেমন হয় এবং ভবিষ্যতে এর সাথে সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসার দিকে অগ্রগতি করা যেতে পারে।
বীজগুলির উপর মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব
শুভেন্দুর দ্বিতীয় পরীক্ষা শস্যের বীজ সম্পর্কিত। এই গবেষণায় পরীক্ষা করা হবে যে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে বীজগুলির জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের উপর কী প্রভাব পড়ে। এটি ভবিষ্যতে মহাকাশে চাষাবাদের সম্ভাবনাগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে।
টার্ডিগ্রেডস-এর উপর গবেষণা
তৃতীয় গবেষণায় শুভেন্দু টার্ডিগ্রেডস-এর উপর অধ্যয়ন করবেন। এইগুলি আধা মিলিমিটারেরও ছোট জীব, যাদের পৃথিবীর সবচেয়ে সহনশীল জীব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা ৬০ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে আছে। এই পরীক্ষায় দেখা হবে যে মহাকাশের কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের উপর কী প্রভাব পড়ে।
মাইক্রোআলগি অর্থাৎ ক্ষুদ্র শৈবালের অধ্যয়ন
চতুর্থ গবেষণায় মাইক্রোআলগি অর্থাৎ ক্ষুদ্র শৈবালের পরীক্ষা করা হবে। এই শৈবাল মিষ্টি জল এবং সমুদ্র উভয় পরিবেশেই পাওয়া যায়। এই গবেষণার উদ্দেশ্য হল, তারা পুষ্টির উৎস হিসেবে মহাকাশ মিশনে সাহায্য করতে পারে কিনা তা জানা।
মুগ এবং মেথির বীজ অঙ্কুরিতকরণ
শুভেন্দুর পঞ্চম গবেষণা মুগ এবং মেথির বীজ সম্পর্কিত। এই পরীক্ষায় দেখা হবে যে মাইক্রোগ্র্যাভিটির পরিস্থিতিতে বীজগুলির অঙ্কুরোদগম সম্ভব কিনা। এই গবেষণা মহাকাশে চাষাবাদের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্যাকটেরিয়ার দুটি প্রকারের উপর গবেষণা
ষষ্ঠ গবেষণা ব্যাকটেরিয়াগুলির দুটি প্রকারের উপর কেন্দ্রীভূত। এই অধ্যয়ন মহাকাশে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি, প্রতিক্রিয়া এবং আচরণ বোঝার জন্য করা হবে। এই পরীক্ষা স্পেস স্টেশনের পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার জন্য জরুরি।
চোখের উপর স্ক্রিনের প্রভাব
সপ্তম এবং চূড়ান্ত গবেষণায় শুভেন্দু পরীক্ষা করবেন যে মাইক্রোগ্র্যাভিটির পরিস্থিতিতে কম্পিউটার স্ক্রিনের আলো এবং তরঙ্গ চোখের উপর কী প্রভাব ফেলে। এই গবেষণাটি বিশেষ করে সেই নভোচারীদের জন্য জরুরি, যারা দীর্ঘ সময় ধরে ডিজিটাল ডিভাইসের সংস্পর্শে থাকেন।
