বিশ্ব রাজনীতির উত্তাল আবহে ভারতের সামরিক প্রস্তুতি আরও জোরদার
বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মানচিত্রে বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের মতো ঘটনাগুলি প্রমাণ করে দিচ্ছে, বিশ্ব দুই বিপরীত শক্তিতে ভাগ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত নিজেদের প্রতিরক্ষা কৌশলকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। স্থল, জল ও আকাশ—তিন ক্ষেত্রেই দেশ জোরকদমে আধুনিকীকরণের কাজ করছে। সেই তালিকায় এবার সংযোজন হতে চলেছে ভারতীয় নৌবাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র—K-6 Hypersonic Ballistic Missile।
চিন-পাকিস্তানের দুই দিকের চাপ মোকাবিলায় সমুদ্রে বাড়ছে ভারতের শক্তি
গত কয়েক বছরে ভারত মহাসাগর এবং আরব সাগর অঞ্চলে চিনের উপস্থিতি বাড়ছে চোখে পড়ার মতো। CPEC করিডরের মাধ্যমে বেইজিং পাকিস্তানের সঙ্গে আরব সাগরে প্রবেশের রাস্তা তৈরি করছে। চিনের এই সামুদ্রিক আগ্রাসনের পাশাপাশি পাকিস্তানের বারবার উস্কানিমূলক আচরণ নয়াদিল্লিকে বাধ্য করছে প্রতিরক্ষার খাতিতে আরও আক্রমণাত্মক হতে। এই পটভূমিতে DRDO তৈরি করছে K-6, যা সাবমেরিন থেকে লঞ্চ করার উপযোগী। শীঘ্রই দেশের উপকূলে হবে এই মহা-ক্ষমতাশালী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা।
দেশীয় উৎপাদনের পথে ভারত, নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াতে আসছে INS তমাল
বর্তমানে রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত ফ্রিগেটে ২৬ শতাংশ দেশীয় প্রযুক্তি থাকলেও এবার সম্পূর্ণভাবে দেশের মাটিতে তৈরি হবে উন্নতমানের দুটি স্টিলথ ফ্রিগেট। গোয়া শিপইয়ার্ডে এই দুটি যুদ্ধজাহাজের নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। ২১ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের পাশাপাশি সাবমেরিন এবং মিসাইল উন্নয়নে আরও হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে ভারত। অরিহন্ত ক্লাস সাবমেরিনকে আরও আধুনিক করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের আত্মনির্ভরতা আরও একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে।
৭.৫ ম্যাক স্পিডে তাণ্ডব! শত্রুর রাডার এড়িয়ে হানা দেবে K-6
K-6-এর সবচেয়ে বড় শক্তি তার গতি। ঘণ্টায় প্রায় ৯২৬১ কিলোমিটার! অর্থাৎ শত্রুপক্ষের রাডার ব্যবস্থা এক মুহূর্তের জন্যও প্রতিরোধের সুযোগ পাবে না। সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য এই মিসাইলের লক্ষ্যবস্তু হবে শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং সামরিক কেন্দ্রগুলি। পাকিস্তানের করাচির মতো বাণিজ্যিক শহর K-6-এর পাল্লার মধ্যে থাকবে। একঝটকায় শত্রুর মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র।
৮০০০ কিলোমিটার পাল্লা! K-6-এর আঘাতে ঘুম উড়বে শত্রুর
বিশেষজ্ঞদের মতে, K-6 এর পাল্লা হতে চলেছে অন্তত ৮০০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ গোটা পাকিস্তান, এমনকি আরও দূরের লক্ষ্যবস্তুকেও সহজেই ধ্বংস করতে সক্ষম হবে এটি। K-3, K-4, K-5 সফলভাবে পরীক্ষার পর এবার K-6 নিয়ে ভারতের পারমাণবিক নৌ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পৌঁছে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়। স্থল থেকে Agni-5 এবং সমুদ্র থেকে K-6—দুই মিলে ভারতের দ্বিতীয় স্ট্রাইক ক্ষমতা আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে।
বিশেষভাবে S-5 SSBN সাবমেরিনের জন্য তৈরি K-6, থাকছে MIRV প্রযুক্তি
DRDO-র হায়দরাবাদ ল্যাবরেটরিতে তৈরি হচ্ছে এই অত্যাধুনিক মিসাইল। S-5 সাবমেরিনের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এটি। অরিহন্তের তুলনায় বড় এবং বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন এই সাবমেরিন K-6 বহন করতে সক্ষম। সঙ্গে থাকবে দুই থেকে তিন টন ওয়ারহেড এবং অত্যাধুনিক MIRV প্রযুক্তি। অর্থাৎ, একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে K-6। ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলে এটি এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সূচনা।