আজমগড়ে স্বাস্থ্য বিভাগে দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তের নির্দেশ

আজমগড়ে স্বাস্থ্য বিভাগে দুর্নীতির অভিযোগ, তদন্তের নির্দেশ
সর্বশেষ আপডেট: 12 ঘণ্টা আগে

উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। এখানে বিজেপি-র জেলা সভাপতি ধ্রুব কুমার সিং ডেপুটি সিএমও (CMO) ড. অরবিন্দ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে বেসরকারি হাসপাতালগুলির নোডাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ এবং তাঁদের থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ করেছেন। তিনি এই বিষয়ে জেলাশাসককে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে একটি অডিও প্রমাণও পেশ করেছেন, যেখানে কথিত অর্থ আদায়ের কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

ধ্রুব সিং অভিযোগ করেছেন যে, জেলায় লেভেল-৪-এর চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও নিয়ম লঙ্ঘন করে লেভেল-৩-এর একজন ডাক্তারকে নোডাল অফিসার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ড. চৌধুরী বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিং হোম এবং প্যাথলজিগুলিকে প্রথমে সিল করে দেন এবং পরে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সেগুলি পুনরায় চালু করার অনুমতি দেন। বিজেপি নেতা দাবি করেছেন, এই প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলছে এবং এর ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নিয়োগ এবং মেডিক্যাল রিপোর্টেও ঘুষের অভিযোগ

অভিযোগে শুধু নোডাল অফিসারের নিয়োগ নয়, চাকরি দেওয়া এবং মেডিক্যাল পরীক্ষায়ও ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ধ্রুব সিং দাবি করেছেন, স্বাস্থ্য বিভাগে ১০০ জনের বেশি আউটসোর্সিং কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ২.৫ থেকে ৩ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও, পুলিশে নিয়োগের মেডিক্যাল পরীক্ষার নামেও লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগে লালগঞ্জের নিউ আয়ুষ নার্সিংহোমের বিশেষ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, সিএমও-র নির্দেশে এটি সিল করা হয়েছিল, কিন্তু ড. চৌধুরী পরিচালক অভিষেক কুমার সরোজের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে এটি পুনরায় খোলার অনুমতি দেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, সরোজের কোনো মেডিক্যাল ডিগ্রি নেই, তবুও তাঁকে ডাক্তার বলে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে। এই পুরো ঘটনার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ডিএম-কে প্রমাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

১৮ বছর ধরে একই জেলায় পোস্টিং নিয়েও প্রশ্ন

বিজেপি জেলা সভাপতি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ড. চৌধুরীর মতো আধিকারিক গত ১৮ বছর ধরে একই জেলায় কর্মরত আছেন। তাঁর অভিযোগ, এত দীর্ঘ সময় ধরে একই স্থানে থাকার কারণে ওই আধিকারিক দুর্নীতি করার একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন, যা বিভাগের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করেছে। তিনি দাবি করেছেন, ড. চৌধুরীকে অবিলম্বে জেলা থেকে অপসারণ করা হোক এবং পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক।

জেলাশাসকের কড়া নির্দেশ

বিষয়টি সামনে আসার পর জেলাশাসক দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্য উন্নয়ন আধিকারিক পরীক্ষিত খাটানার নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে ডিডিও সঞ্জয় কুমার সিং এবং মুখ্য কোষাধ্যক্ষ অনুরাগ শ্রীবাস্তবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কমিটি শনিবার তাদের কার্যক্রম শুরু করে এবং সবার প্রথমে অভিযোগকারী ধ্রুব কুমার সিং-এর বয়ান রেকর্ড করা হয়। বিজেপি নেতা কমিটিকে জানান যে, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর এবং এই ক্ষেত্রেও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

প্রশাসনিক মহলে চাঞ্চল্য

অভিযোগ এবং অডিও প্রমাণ সামনে আসার পর স্বাস্থ্য বিভাগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আপাতত ড. চৌধুরীর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে পুরো ঘটনাটি প্রশাসনের ভাবমূর্তির ওপর প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে।

তদন্ত কমিটির সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল অভিযোগগুলির গভীরতা থেকে তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করা এবং যদি অভিযোগগুলি প্রমাণিত হয়, তবে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

Leave a comment