পাকিস্তানের চীন থেকে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু চীন রপ্তানি করতে রাজি হয়নি। এর ফলে ভারতের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার সমতা আনার পাকিস্তানের পরিকল্পনা বড় ধাক্কা খেয়েছে।
Pakistan Setback Hypersonic Missiles: চীন পাকিস্তানকে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং এর নির্মাণ প্রযুক্তি (Technology of Transfer) দিতে অস্বীকার করেছে। এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের জন্য একটি কৌশলগত ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ তারা ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির মোকাবিলায় নিজেদের শক্তিশালী করতে চেয়েছিল। খবর অনুযায়ী, চীন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তাদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বর্তমানে রপ্তানির জন্য উপলব্ধ নেই এবং তারা এই ধরনের কোনো রপ্তানি সংস্করণ তৈরি করেনি।
পাকিস্তান কেন এই প্রযুক্তি চেয়েছিল?
পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার মোকাবিলা করা। ভারত ইতিমধ্যে Hypersonic Technology Demonstrator Vehicle (HSTDV)-এর মতো উচ্চ গতি এবং অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর কাজ করছে। পাকিস্তান চেয়েছিল চীন থেকে এই স্তরের প্রযুক্তি পেতে, যাতে তারা কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। পাকিস্তানের উদ্দেশ্য শুধু এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কেনা ছিল না, বরং তারা সেগুলি নিজেরাই তৈরি করতে শিখতে চেয়েছিল।
পাকিস্তানের দুর্বল ভাবমূর্তি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে
চীনের এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি হল, পাকিস্তানকে আগে চীন থেকে যে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল, সেগুলির কার্যকারিতা প্রত্যাশা অনুযায়ী ছিল না। এর ফলে চীনের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে এই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে এত সংবেদনশীল প্রযুক্তি পাকিস্তানের হাতে নিরাপদ নাও থাকতে পারে।
এছাড়াও, চীনের আশঙ্কা রয়েছে যে পাকিস্তান এই প্রযুক্তি অন্য কোনো দেশ বা পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি চীনের কৌশলগত স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
সংবেদনশীল প্রযুক্তির উপর চীনের কঠোরতা
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র, যেমন J-10CE যুদ্ধবিমান এবং HQ-9 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বিশেষ রপ্তানি সংস্করণ তৈরি করে। কিন্তু যখন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা আসে, তখন চীনের নীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র অত্যন্ত দ্রুতগামী এবং বিধ্বংসী, যা কয়েক মিনিটের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। এই প্রযুক্তি এতটাই সংবেদনশীল যে চীন এটিকে তাদের কৌশলগত সুরক্ষার একটি প্রধান অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। এই কারণেই তারা এটি কোনো দেশকে রপ্তানি করতে চায় না এবং এর প্রযুক্তিও ভাগ করে নিতে রাজি নয়।
চীনের কৌশলগত চিন্তা
চীন বর্তমানে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার এবং বৃহৎ আকারে এর উৎপাদনের দিকে কাজ করছে। চীন মনে করে যে এই প্রযুক্তি কেবল ভারতের বিরুদ্ধেই নয়, বরং আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধেও তাদের প্রতিরক্ষা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
অতএব, যতক্ষণ না এই প্রযুক্তি সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ক হচ্ছে এবং এর কৌশলগত ঝুঁকিগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে, ততক্ষণ চীন এটি কোনো দেশকে দিতে প্রস্তুত নয়, তা সে পাকিস্তান-এর মতো পুরনো মিত্রই হোক না কেন।
ভারতের অগ্রযাত্রায় পাকিস্তানের উদ্বেগ বৃদ্ধি
ভারত গত কয়েক বছরে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে। ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র, অগ্নি সিরিজ, এবং সম্প্রতি HSTDV-এর মতো হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে অগ্রগতি পাকিস্তানকে চিন্তায় ফেলেছে। পাকিস্তানের মনে হয় ভারতের কৌশলগত সুবিধা বাড়ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অসাম্য সৃষ্টি করতে পারে।