তেনালীরামের গল্প: অপরাধী ছাগল। বিখ্যাত মূল্যবান গল্পসমূহ Subkuz.Com-এ!
এখানে উপস্থাপন করা হলো বিখ্যাত এবং প্রেরণাদায়ক তেনালীরামের গল্প: অপরাধী ছাগল
প্রতিদিনের মতো রাজা কৃষ্ণদেব রায় তাঁর রাজসভায় বসে ছিলেন। এমন সময় এক রাখাল তার অভিযোগ নিয়ে সেখানে এসে পৌঁছাল। রাখালকে দেখে রাজা কৃষ্ণদেব তাকে রাজসভায় আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন রাখাল বলল, ‘মহারাজ, আমার সাথে বড় অন্যায় হয়েছে। আমার বাড়ির কাছে থাকা এক ব্যক্তির বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ে আর তার নিচে চাপা পড়ে আমার ছাগলটি মারা গেছে। আর, আমি যখন তাকে আমার মরা ছাগলের ক্ষতিপূরণ দিতে বললাম, তখন সে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হচ্ছে না।’ রাখালের কথা শুনে মহারাজ কিছু বলার আগেই তেনালীরাম নিজের জায়গা থেকে উঠে বললেন, ‘অবশ্যই মহারাজ, দেওয়াল ভেঙে যাওয়ার কারণে ছাগলটি মারা গেছে, কিন্তু এর জন্য শুধু সেই প্রতিবেশীকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।’
রাজার সাথে সভায় উপস্থিত সকল মন্ত্রী ও সভাসদ তেনালীরামের এই কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন। রাজা তেনালীরামকে তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাহলে তোমার মতে দেওয়াল ভাঙার জন্য আর কে দোষী?’ এতে তেনালীরাম বললেন, ‘তা আমি জানি না, তবে আপনি যদি আমাকে একটু সময় দেন তাহলে আমি এর সন্ধান করে সত্য আপনার সামনে নিয়ে আসব।’ রাজার তেনালীরামের প্রস্তাব ভালো লাগল। তিনি তেনালীরামকে আসল অপরাধীকে খুঁজে বের করার জন্য সময় দিলেন। রাজার আদেশ পেয়ে তেনালীরাম রাখালের প্রতিবেশীকে ডাকলেন এবং মরা ছাগলের বদলে কিছু টাকা রাখালকে দিতে বললেন। এতে রাখালের প্রতিবেশী হাত জোড় করে বলল, ‘আমি এর জন্য দায়ী নই। দেওয়াল বানানোর কাজ তো মিস্ত্রি করেছে। তাই আসল অপরাধী তো সেই।’
তেনালীরামের রাখালের প্রতিবেশীর এই কথা সঠিক মনে হলো। তাই তেনালীরাম সেই মিস্ত্রিকে ডাকলেন যে দেওয়ালটি বানিয়েছিল। মিস্ত্রিও সেখানে এসে পৌঁছাল, কিন্তু সেও নিজের দোষ স্বীকার করল না। মিস্ত্রি বলল, ‘আমাকে অকারণে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। আসল দোষী তো সেই শ্রমিকরা যারা মশলায় জল বেশি মিশিয়ে মশলা খারাপ করে দিয়েছে, যার কারণে দেওয়াল শক্ত হতে পারেনি আর ভেঙে পড়েছে।’ মিস্ত্রির কথা শুনে শ্রমিকদের ডাকার জন্য সৈন্যদের পাঠানো হলো। যখন সেখানে গিয়ে শ্রমিকরা সবকিছু জানতে পারল, তখন শ্রমিকরা বলল, ‘এর জন্য আমরা দায়ী নই, বরং সেই ব্যক্তি দায়ী যে মশলায় বেশি জল মিশিয়েছিল।’
এরপর মশলায় বেশি জল মেশানো ব্যক্তিকে রাজার সভায় আসার বার্তা পাঠানো হলো। জল মেশানো ব্যক্তি সভায় পৌঁছানো মাত্রই বলল, ‘যে মানুষটি মশলায় জল মেশানোর জন্য আমাকে পাত্র দিয়েছিল, আসল দোষ তার। সেই পাত্রটি অনেক বড় ছিল। এই কারণে জলের অনুমান করা যায়নি এবং মশলায় বেশি জল পড়ে যায়।’ তেনালীরাম জিজ্ঞাসা করলে মশলায় বেশি জল মেশানো ব্যক্তি বলল, ‘সেই বড় পাত্রটি তাকে রাখালই দিয়েছিল। তার কারণেই মিশ্রণে বেশি জল পড়ে যায় এবং দেওয়াল দুর্বল হয়ে যায়।’ আর কি, তেনালীরাম রাখালের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এতে দোষ তোমারই। তোমার কারণেই ছাগলের প্রাণ গেছে।’ যখন কথা ঘুরে রাখালের ওপর এলো, তখন সে আর কিছু বলতে পারল না এবং চুপচাপ নিজের বাড়ির দিকে রওনা হলো। সেখানেই সভায় উপস্থিত সকল সভাসদ তেনালীরামের বুদ্ধিমত্তা ও ন্যায়ের প্রশংসা করতে লাগলেন।
এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে - নিজের সাথে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা সঠিক নয়। এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে সমস্যার সমাধান করা উচিত।
বন্ধুরা, subkuz.com একটি এমন প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত এবং বিশ্ব সম্পর্কিত সকল প্রকার গল্প এবং তথ্য সরবরাহ করি। আমাদের চেষ্টা থাকে যে এইরকম আকর্ষণীয় এবং প্রেরণাদায়ক গল্প সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এইরকম প্রেরণাদায়ক গল্প-কাহিনিগুলোর জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com