সোনু হালুয়াইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু তার কাছে ছিল মাত্র এক টাকা, যার দিয়ে সে কিছুই কিনতে পারছিল না। দোকানে রঙিন মিষ্টান্ন আর গরম জলভিয়ের সুগন্ধ তাকে আরও বেশি লোভানো ছিল। হালুয়াই চন্দন তাকে হতাশ করে বলে দিল, এক টাকায় কিছুই পাওয়া যাবে না। সোনু দোকান থেকে বেরিয়ে এল, মনে মনে ভাবছিল আজ হয়তো ভোকেই ঘুমাতে হবে।
এক অপ্রত্যাশিত সাহায্যের সুযোগ
কিন্তু এরপর এমন একটা ঘটনা ঘটল, যা সোনুর জন্য কোনো বরদানের চেয়ে কম ছিল না। চন্দনের নোকর সমোসা নিয়ে দোকানে যাচ্ছিল, তখন দুটি সমোসা পড়ে গেল। চন্দন রেগে গিয়ে সেগুলো তুলে আনার জন্য বলল, আর তারপর সেই সমোসাগুলো সোনুকে দিয়ে দিল। সোনু আনন্দের সাথে সেগুলো খেল এবং তার ক্ষুধা নিবারণ করল।
দিন-রাতের পরিশ্রম ও সংগ্রাম
সোনুর কাছে এখন টাকা ছিল না, কিন্তু সে তার মায়ের যত্নের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করত। সে প্রতিদিন কাজ করত এবং সন্ধ্যায় ৭০ টাকা উপার্জন করত। তার মা উষা অসুস্থ ছিলেন, আর তার বাবা মোহন সিং জুয়ায় ব্যস্ত থাকতেন। সোনু তার পরিশ্রমের টাকায় মায়ের চিকিৎসার জন্য ওষুধ কিনেছিল, কিন্তু তার বাবা সেই টাকা নিয়ে নিল এবং তাকে হুমকি দিল যে পরের দিন আরও টাকা চাইবে।
মায়ের জন্য ত্যাগ
সোনু তার মায়ের যত্নে ব্যস্ত ছিল। একদিন সে তার মাকে বলল, "মা, আজ দুটি সমোসা পেয়েছিলাম, আর আমি সেগুলি খেয়ে ফেলেছি। এখনো ক্ষুধা লাগছে না।" কিন্তু উষা তাকে দশ টাকা দিয়ে বলল, "যাও, কিছু খেয়ে আয়।" সোনু তার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করল যাতে সে তার মায়ের সাহায্য করতে পারে। ক্লান্ত হয়ে রাতে সে মায়ের কাছে ঘুমিয়ে পড়ল।
পিতার মৃত্যু ও সোনুর সিদ্ধান্ত
পরের দিন সোনু জানতে পারল যে তার বাবার দুর্ঘটনা হয়েছে এবং তিনি আর এই পৃথিবীতে নেই। এই খবর তাকে কাঁপিয়ে তুলল, কিন্তু সে বুঝতে পারছিল না যে বাবার মৃত্যুতে সে কাঁদবে না কি আনন্দ করবে। এখন তাকে তার মায়ের চিকিৎসা এবং পরিবারের যত্ন নিতে হবে।
নতুন জীবনের সূচনা
সোনুর মা উষা যখন এই কথা শুনলেন, তার চোখে জল এলো, কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন যে এখন তাদের ছেলের জীবনে আর কোনো দুঃখ থাকবে না। সোনু বলল, "মা, এখন আমরা শান্তিতে থাকতে পারব। এখন আর কেউ আমাদের টাকা ছিনিয়ে নেবে না। বাবার কাছ থেকে আমরা সবসময় একটাই জিনিস পেয়েছি, সেটা হল টাকার কষ্ট। এখন সেই কষ্ট শেষ। এখন আমাদের কাছে আমাদের টাকা থাকবে, আর আমরা আমাদের জীবন আমাদের শর্ত অনুযায়ী জীবনযাপন করতে পারব।"
শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা
এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে জীবনে কষ্ট ও সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না, কিন্তু পরিশ্রম, সততা এবং সঠিক দিকে করা কাজ সবসময় আমাদেরকে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। কোনো পরিস্থিতিতেই কখনো হার মানা উচিত নয়, কারণ জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের কিছু না কিছু শেখায় এবং একদিন সেই পরিশ্রম সফল হয়।