উপস্থাপনা বিখ্যাত এবং প্রেরণাদায়ক গল্প, অন্ধ নাকি দৃষ্টি সম্পন্ন
একদা, আকবর ও বীরবল কোনো বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় রাজা আকবর বললেন, ‘বীরবল, পৃথিবীতে প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে একজন অন্ধ ব্যক্তি থাকে।’ রাজার এই কথা শুনে বীরবল তাঁর সঙ্গে একমত না হয়ে বলেন, ‘মহারাজ, আমার মনে হয় আপনার ধারণাটি ভুল। সত্যি বলতে, পৃথিবীতে অন্ধের সংখ্যা দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।’ বীরবলের এই উত্তর শুনে রাজা আকবর বেশ অবাক হন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন চারপাশে দেখি, তখন তো অন্ধের চেয়ে দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বেশি দেখতে পাই। তাহলে অন্ধের সংখ্যা দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের চেয়ে বেশি কী করে হতে পারে?’
রাজা আকবরের এই কথা শুনে বীরবল বলেন, ‘মহারাজ, কোনো একদিন আমি আপনাকে এই কথাটি প্রমাণ করে দেখাব যে, পৃথিবীতে অন্ধের সংখ্যা দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের চেয়ে বেশি।’ বীরবলের উত্তরে রাজা আকবর বলেন, ‘ঠিক আছে, যদি তুমি প্রমাণসহ এই কথাটি প্রমাণ করতে পারো, তাহলে আমি অবশ্যই তা মেনে নেব।’ প্রায় দুই দিন পর রাজা আকবর এই কথাটি সম্পূর্ণ ভুলে যান। কিন্তু, বীরবল তাঁর কথা প্রমাণ করার জন্য কৌশল ভাবতে থাকেন। প্রায় চার দিন পর বীরবলের মাথায় একটি পরিকল্পনা আসে এবং তিনি দুজন হিসাবরক্ষককে নিয়ে বাজারের দিকে রওনা হন।
মাঝ-বাজারে পৌঁছে বীরবল সৈন্যদের দিয়ে একটি খাটের কাঠামো আনান এবং সেটি বোনার জন্য দড়িও আনান। এরপর বীরবল তাঁর সঙ্গে আনা দুই হিসাবরক্ষককে নির্দেশ দেন, তারা যেন তাঁর ডান ও বাঁয়ে চেয়ার পেতে বসে। সেইসঙ্গে এও বলেন, ডানে বসা হিসাবরক্ষক তাঁর রাজ্যে থাকা অন্ধদের তালিকা তৈরি করবেন এবং বাঁয়ে বসা হিসাবরক্ষক দৃষ্টি সম্পন্নদের তালিকা। বীরবলের আদেশ মেনে নিয়ে দুই হিসাবরক্ষক কাজে লেগে পড়েন এবং বীরবল খাট বোনার কাজ শুরু করেন। বীরবলকে বাজারের মাঝে খাট বুনতে দেখে ধীরে ধীরে সেখানে মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে। ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন লোক নিজেকে থামাতে না পেরে বীরবলকে জিজ্ঞাসা করে, ‘আপনি এটা কী করছেন?’
বীরবল এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেন না এবং তাঁর ডান দিকে বসা হিসাবরক্ষককে ইশারা করেন, যাতে তিনি লোকটির নাম তাঁর তালিকায় লিখে নেন। সময় যত গড়াতে থাকে, ভিড় ততই বাড়তে থাকে এবং সেখানে আসা প্রত্যেকেই তাদের কৌতূহল মেটানোর জন্য বীরবলকে একই প্রশ্ন করতে থাকে যে, তিনি এখানে কী করছেন? এর সাথে সাথে বীরবল তাঁর ডান দিকের হিসাবরক্ষককে ইশারা করে প্রশ্ন করা লোকদের নাম অন্ধদের তালিকায় যুক্ত করতে থাকেন। হঠাৎ সেখানে একজন লোক এসে বীরবলকে জিজ্ঞাসা করে, এত রোদে বসে আপনি খাট কেন বুনছেন? তখনও বীরবল কিছু বলেন না এবং বাঁ দিকে বসা হিসাবরক্ষককে প্রশ্ন করা লোকটির নাম লিখতে ইশারা করেন। এই ভাবে চলতে থাকে এবং ধীরে ধীরে পুরো দিন কেটে যায়।
তখন এই খবর রাজা আকবরের কাছে পৌঁছয় এবং তিনিও বিষয়টি বোঝার জন্য বাজারে যান, যেখানে বীরবল খাট বোনার কাজ করছিলেন। রাজাও বীরবলের এই সব করার পেছনের কারণ জানতে চান। তাই, তিনি বীরবলকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘বীরবল, তুমি এটা কী করছ?’ রাজার প্রশ্ন শুনেই বীরবল তাঁর ডান দিকে বসা হিসাবরক্ষককে নির্দেশ দেন, তাঁর অন্ধদের তালিকায় মহারাজ আকবরের নামও যোগ করতে। বীরবলের এই কথা শুনে রাজা আকবর একটু রেগে যান এবং অবাকও হন। রাজা আকবর বলেন, ‘বীরবল, আমার চোখ সম্পূর্ণ ঠিক আছে এবং আমি সবকিছু ভালোভাবে দেখতে পাই। তাহলে কেন তুমি আমার নাম অন্ধদের তালিকায় তুলছ?’ রাজা আকবরের এই প্রশ্নের উত্তরে বীরবল মুচকি হেসে বলেন, ‘মহারাজ, আপনি দেখছেন যে আমি খাট বুনছি। তবুও আপনি জিজ্ঞাসা করছেন যে আমি কী করছি? মহারাজ, এমন প্রশ্ন তো একজন অন্ধ মানুষই করতে পারে।’
বীরবলের এই উত্তর শুনে রাজা আকবর বুঝতে পারেন যে, তিনি কয়েক দিন আগে বলা কথাটি প্রমাণ করার জন্য এই সব করছেন। এই কথা বুঝতে পেরে রাজা আকবরও মুচকি হাসেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, ‘বীরবল, তাহলে বলো, তুমি তোমার এই প্রচেষ্টা থেকে কী জানতে পারলে? বলো, দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বেশি নাকি অন্ধের?’ রাজার প্রশ্নের উত্তরে বীরবল বলেন, ‘মহারাজ, আমি যা বলেছিলাম, সেটাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে যে, পৃথিবীতে দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের তুলনায় অন্ধের সংখ্যা বেশি। আমার তৈরি করা দুটি তালিকা মিলিয়ে দেখলেই আপনিও এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।’ বীরবলের উত্তর শুনে রাজা আকবর জোরে হেসে বলেন, ‘বীরবল, তুমি নিজের কথা প্রমাণ করার জন্য সবকিছু করতে পারো।’
এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে - আকবর বীরবলের অন্ধ বাবার এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে, সবকিছু দেখতে পাওয়ার পরেও যে ব্যক্তি বোকার মতো প্রশ্ন করে, সে অন্ধের মতোই হয়।
বন্ধুরা, subkuz.com একটি এমন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আমরা ভারত এবং বিশ্বের নানা ধরনের গল্প ও তথ্য সরবরাহ করে থাকি। আমাদের চেষ্টা হল, এই ভাবেই মজার এবং প্রেরণাদায়ক গল্পগুলি সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ধরনের প্রেরণাদায়ক গল্প ও কাহিনীর জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com
```