গৌতম বুদ্ধ ও অঙ্গুলিমানের গল্প: এক বিখ্যাত জাতক কথা

🎧 Listen in Audio
0:00

জাতক কথা: গৌতম বুদ্ধ এবং ডাকাত অঙ্গুলিমানের গল্প। বিখ্যাত হিন্দি গল্প। subkuz.com এ পড়ুন !

উপস্থাপিত করছি বিখ্যাত জাতক কথা: গৌতম বুদ্ধ ও অঙ্গুলিমান

মগধ দেশের জঙ্গলে এক নিষ্ঠুর ডাকাতের রাজত্ব ছিল। সেই ডাকাত যত মানুষের হত্যা করত, তাদের একটি করে আঙুল কেটে মালা বানিয়ে গলায় পরত। এই কারণে ডাকাতকে সবাই অঙ্গুলিমান নামে চিনত। মগধ দেশের আশেপাশের সব গ্রামে অঙ্গুলিমানের আতঙ্ক ছিল। একদিন সেই জঙ্গলের কাছে একটি গ্রামে মহাত্মা বুদ্ধ পৌঁছলেন। সাধুর রূপে তাঁকে দেখে সবাই খুব ভালোভাবে অভ্যর্থনা জানাল। কিছুক্ষন সেই গ্রামে থাকার পর মহাত্মা বুদ্ধের একটু অদ্ভুত লাগল। তখন তিনি লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'তোমরা সবাই এত ভীত এবং সন্ত্রস্ত কেন?'

সবাই একে একে অঙ্গুলিমান ডাকাতের করা হত্যা এবং আঙুল কাটার কথা বলল। সবাই দুঃখ করে বলল যে, যে কেউ ওই জঙ্গলের দিকে যায়, তাকে ধরে ওই ডাকাত মারে। এখনো পর্যন্ত সে ৯৯ জন মানুষকে মেরেছে এবং তাদের আঙুল কেটে মালা বানিয়ে গলায় পরে ঘোরে। অঙ্গুলিমানের আতঙ্কের কারণে এখন সবাই জঙ্গলের পাশ দিয়ে যেতে ভয় পায়। এই সব কথা শোনার পর ভগবান বুদ্ধ সেই জঙ্গলের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যখন ভগবান বুদ্ধ জঙ্গলের দিকে যেতে লাগলেন, তখন লোকজন বলল যে, সেখানে যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। ওই ডাকাত কাউকে ছাড়ে না। আপনি জঙ্গলে না গিয়েই কোনোভাবে আমাদের ওই ডাকাতের হাত থেকে বাঁচান।

ভগবান বুদ্ধ সব কথা শুনেও জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর বুদ্ধ ভগবান জঙ্গলে পৌঁছলেন। জঙ্গলে মহাত্মার বেশে একাকী একজন মানুষকে দেখে অঙ্গুলিমান খুব অবাক হল। সে ভাবল, এই জঙ্গলে আসার আগে মানুষ অনেকবার ভাবে। যদি আসেও, একা আসে না এবং ভীত থাকে। এই মহাত্মা তো কোনো ভয় ছাড়াই একা জঙ্গলে ঘুরছে। অঙ্গুলিমানের মনে হল, এখনই একেও মেরে এর আঙুল কেটে নিই। তখন অঙ্গুলিমান বলল, 'এই! সামনে এগিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? এবার থাম।' ভগবান বুদ্ধ তার কথা অগ্রাহ্য করলেন। আবার রেগে ডাকাত বলল, 'আমি বলেছি থাম।' তখন ভগবান ফিরে দেখলেন যে, লম্বা-চওড়া, বড়-বড় চোখ যুক্ত একজন মানুষ, যার গলায় আঙুলের মালা, তাঁকে তাকিয়ে দেখছে।

তাকে দেখার পর বুদ্ধ আবার হাঁটতে শুরু করলেন। রাগে কাঁপতে কাঁপতে অঙ্গুলিমান ডাকাত তার তলোয়ার নিয়ে তাঁর পিছনে দৌড়াতে লাগল। ডাকাত যত দৌড়াচ্ছিল, কিন্তু তাঁকে ধরতে পারছিল না। দৌড়ে-দৌড়ে সে ক্লান্ত হয়ে গেল। সে আবার বলল, 'দাঁড়া, না হলে আমি তোকে মারব এবং তোর আঙুল কেটে আমি ১০০ জন মানুষ মারার নিজের প্রতিজ্ঞা পূরণ করব।' ভগবান বুদ্ধ বললেন যে, তুমি নিজেকে খুব শক্তিশালী মনে করো তো, তাহলে গাছ থেকে কিছু পাতা আর ডাল ভেঙে নিয়ে এসো। অঙ্গুলিমান তাঁর সাহস দেখে ভাবল যে, যা বলছে তাই করি। সে অল্পক্ষণের মধ্যেই পাতা আর ডাল ভেঙে নিয়ে এসে বলল, 'এই নাও, আমি নিয়ে এসেছি।'

আবার বুদ্ধজি বলতে শুরু করলেন, 'এবার এগুলোকে আবার গাছে জুড়ে দাও।' এটা শুনে অঙ্গুলিমান বলল, 'তুমি কেমন মহাত্মা, তুমি জানো না যে, ভাঙা জিনিসকে আবার জোড়া যায় না।' ভগবান বুদ্ধ বললেন যে, আমি এই কথাই তোমাকে বোঝাতে চাই যে, যখন তোমার কোনো জিনিস জোড়ার ক্ষমতা নেই, তখন তোমার কোনো জিনিস ভাঙারও অধিকার নেই। কারোর জীবন দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তো মারারও অধিকার নেই।' এই সব শুনে অঙ্গুলিমানের হাত থেকে অস্ত্র পড়ে গেল। ভগবান বুদ্ধ বললেন, 'তুই আমাকে দাঁড়া-দাঁড়া বলছিলি, আমি তো কবে থেকে স্থির হয়ে আছি। অস্থির তো তুই।' অঙ্গুলিমান বলল, 'আমি তো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, তাহলে কিভাবে স্থির নেই, আর আপনি তো তখন থেকে হেঁটে যাচ্ছেন।' ভগবান বুদ্ধ বললেন, 'আমি মানুষজনকে ক্ষমা করে স্থির আছি আর তুই সবার পিছনে তাদের হত্যা করে দৌড়াচ্ছিস, তাই অস্থির আছিস।'

এই সব কথা শুনে অঙ্গুলিমান ডাকাতের চোখ খুলে গেল এবং সে বলল, 'আজ থেকে আমি কোনো অধর্মের কাজ করব না।' কাঁদতে কাঁদতে অঙ্গুলিমান ডাকাত ভগবান বুদ্ধের পায়ে লুটিয়ে পড়ল। সেই দিন অঙ্গুলিমান খারাপ পথ ছেড়ে দিল এবং সে এক মহান সন্ন্যাসী হয়ে গেল।

এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে - সঠিক পথ দেখালে মানুষ খারাপ পথ ছেড়ে ভালো পথ বেছে নেয়।

বন্ধুরা, subkuz.com এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত এবং বিশ্বের সাথে যুক্ত সব ধরনের গল্প এবং তথ্য সরবরাহ করে থাকি। আমাদের চেষ্টা থাকে যে, এই ধরনের আকর্ষণীয় এবং প্রেরণাদায়ক গল্পগুলি আপনাদের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিতে পারি। এই ধরনের প্রেরণাদায়ক গল্প-কাহিনিগুলির জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com

 

Leave a comment