শিশুদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের বর্ধমান ঝুঁকি: সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

শিশুদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের বর্ধমান ঝুঁকি:  সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
🎧 Listen in Audio
0:00

আজকের যুগে ডায়াবেটিসের মতো রোগ বয়সের সীমা অতিক্রম করেছে। আগে একে বৃদ্ধদের রোগ বলে মনে করা হতো, পরে তরুণদের আক্রান্ত করতে শুরু করে এবং এখন শিশুদের উপরও বিপদ আসন্ন। ন্যাশনাল কমিশন ফর চাইল্ড প্রোটেকশন (NCPCR)-এর প্রতিবেদন বলেছে যে, শিশুদের মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সমস্যা ভারতে স্বাস্থ্য জরুরী অবস্থার ইঙ্গিত বহন করে। যদি সময় থাকতে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই মিষ্টি বিষ সমগ্র সমাজকে তার আওতায় নিয়ে আসতে পারে।

শিশুদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে?

টাইপ-২ ডায়াবেটিস একসময় বৃদ্ধদের রোগ বলে মনে করা হতো, কিন্তু আজকের আধুনিক জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাস একে তরুণ এবং শিশুদের মধ্যেও সাধারণ করে তুলেছে। শিশুরা এখন জাঙ্ক ফুড, প্যাকেজড স্ন্যাক্স, ফ্লেভারড দই, রস এবং ব্রেকফাস্ট সিরিয়ালের মতো চিনিতে ভরা খাবার বেশি খাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে শিশুদের জন্য চিনির পরিমাণ মোট ক্যালরির মাত্র ৫% হওয়া উচিত, কিন্তু আমাদের দেশের শিশুরা প্রায় ১৩% থেকে ১৫% ক্যালরি চিনি থেকে পাচ্ছে, যা তিনগুণ বেশি।

CBSE এবং সরকারের নতুন উদ্যোগ

CBSE স্কুলগুলিতে ‘শুগার বোর্ড’ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে। এতে চিনির পরিমাণের চার্ট এবং ইনফোগ্রাফিকসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হবে যে শিশুদের পছন্দের স্ন্যাক্সে কত পরিমাণে চিনি থাকে। এর সাথে সাথে স্বাস্থ্য কর্মশালা এবং BMI (বডি মাস ইন্ডেক্স)-এর তথ্য দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে যাতে করে শিশুদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়।

ডায়াবেটিসের লক্ষণ যা উপেক্ষা করা উচিত নয়

  • বারবার প্রস্রাব হওয়া
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা
  • অস্বাভাবিকভাবে বেশি ক্ষুধা লাগা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • ধোঁয়াশাযুক্ত দৃষ্টি
  • ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
  • চিড়চিড়ে ভাব

বাবা রামদেবের পরামর্শ: আয়ুর্বেদ দিয়ে ডায়াবেটিসের উপর আঘাত

যোগ গুরু বাবা রামদেবের মতে ডায়াবেটিসকে সম্পূর্ণভাবে দূর করার জন্য জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের সাথে সাথে আয়ুর্বেদিক প্রতিকার অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

যোগ এবং প্রাণায়াম:

কপালভাতি: প্রতিদিন ১৫ মিনিট করুন। এটি পেটের অঙ্গগুলিকে সক্রিয় করে এবং গ্লুকোজ মেটাবলিজমে উন্নতি সাধন করে।

মণ্ডুকাসন এবং যোগমুদ্রাসন: এই দুটি আসন অগ্নাশয় (প্যানক্রিয়াস)-কে সক্রিয় করে এবং ইনসুলিনের প্রবাহ উন্নত করে।

অনুলোম-বিলোম: এটি মনকে শান্ত করে এবং চাপ কমায়, যা ডায়াবেটিসের একটি বড় কারণ।

আয়ুর্বেদিক প্রতিকার:

  • শিম-করলা-টমেটোর রস: সকালে খালি পেটে পান করুন। এটি প্রাকৃতিকভাবে শুগার নিয়ন্ত্রণ করে।
  • গিলোয়ের ক্বাথ: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • মেথি গুঁড়ো: প্রতিদিন এক চা-চামচ গরম জলের সাথে খান।
  • রসুনের দুটি কোয়া: সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খান। এটি রক্ত ​​সঞ্চালনকে ঠিক রাখে।

শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোধ করার জন্য কী করবেন?

  • Total Diet Replacement: শিশুদের ধীরে ধীরে প্রসেসড খাবার থেকে সরিয়ে ফল, সবজি, অঙ্কুরিত শস্য, দালিয়া এবং ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবারের দিকে নিয়ে যান।
  • প্রতিদিন ৪০ মিনিট ব্যায়াম: যোগ হোক, সাইক্লিং হোক, দৌড়ানো হোক অথবা নাচ—শিশুদের প্রতিদিন শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখা জরুরী।
  • স্ক্রিন টাইম কমান: ডিজিটাল গ্যাজেটে কাটানো সময় সীমিত করুন এবং শিশুদের আউটডোর অ্যাক্টিভিটির জন্য উৎসাহিত করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম জরুরী: রাতে কমপক্ষে ৮-৯ ঘন্টা ঘুম তাদের মেটাবলিজমকে ঠিক রাখে।

ডায়াবেটিস এবং হার্ট ডিজিজের সম্পর্ক

ডায়াবেটিস শুধুমাত্র রক্তের শর্করার রোগ নয়। এটি ধীরে ধীরে হৃদয়, কিডনি, চোখ এবং স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষণার মতে:

  • ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৪ গুণ বেশি।
  • প্রায় ২২% ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগ হয়েছে।

তাই শিশুদের মধ্যে যদি ডায়াবেটিস শুরু হয়, তাহলে ভবিষ্যতে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যাবে।

শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটিকে উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে। বাবা রামদেবের পরামর্শ অনুযায়ী যোগ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা এবং সঠিক খাদ্যের মাধ্যমে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সাথে সাথে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে নিজের জীবনযাত্রা উন্নত করার প্রয়োজন, যাতে এই মিষ্টি বিপদ ঘর-পরিবার থেকে দূরে থাকে এবং সুস্থ জীবনের পথ সহজ হয়।

Leave a comment