সস্তা ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবায় উৎসাহ যোগানোর জন্য প্রতি বছর ৭ই মার্চ জনঔষধি দিবস পালিত হয়। এই দিবস কেবলমাত্র জেনেরিক ঔষধের গুরুত্বকেই তুলে ধরে না, বরং সরকারের সেই উদ্যোগকেও তুলে ধরে যা সাধারণ জনগণকে ব্যয়বহুল ব্র্যান্ডেড ঔষধের বিকল্প হিসেবে উচ্চমানের ও সাশ্রয়ী মূল্যের ঔষধ সরবরাহ করার জন্য নিবেদিত।
জনঔষধি দিবসের সূচনা কীভাবে?
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দিবসের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন, এর পর থেকে প্রতি বছর ৭ই মার্চ এটি জাতীয় পর্যায়ে পালিত হয়ে আসছে। এই অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য হল প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনঔষধি পরিকল্পনা (PMBJP)-এর আওতায় সস্তা জেনেরিক ঔষধের প্রচার এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পৌঁছনো নিশ্চিত করা।
জনঔষধি পরিকল্পনা: দরিদ্রদের জন্য আশীর্বাদ
প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনঔষধি পরিকল্পনা (PMBJP) ২০০৮ সালে একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় শুরু হয়েছিল। এই পরিকল্পনার আওতায় প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনঔষধি কেন্দ্র (PMBJK) স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ব্র্যান্ডেড ঔষধের তুলনায় ৫০% থেকে ৯০% পর্যন্ত সস্তায় জেনেরিক ঔষধ পাওয়া যায়।
জনঔষধি কেন্দ্রের বর্তমান অবস্থা
• দেশজুড়ে ১০,০০০-এরও বেশি জনঔষধি কেন্দ্র কার্যকরী
• ১,৯৬৫ প্রকারের ঔষধ ও ২৯৩ প্রকারের সার্জিক্যাল পণ্য উপলব্ধ
• ৫০% থেকে ৯০% পর্যন্ত কম দামে উচ্চমানের ঔষধ বিক্রি
• ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ১০,৫০০ কেন্দ্রে সম্প্রসারণের লক্ষ্য
জনঔষধি কেন্দ্রের প্রভাব
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, PMBJP-এর মাধ্যমে গড়ে প্রতি পরিবারের বার্ষিক ৩,৬০০ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য বিনামূল্যে বা সস্তায় ঔষধ পাওয়া বড় স্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
জেনেরিক বনাম ব্র্যান্ডেড ঔষধ: গবেষণা কী বলে?
প্রায়শই ধারণা করা হয় যে ব্র্যান্ডেড ঔষধ বেশি কার্যকর, কিন্তু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে জেনেরিক ঔষধও সমানভাবে কার্যকর। এই ঔষধগুলিতে একই সক্রিয় উপাদান থাকে যা ব্যয়বহুল ব্র্যান্ডেড ঔষধে থাকে, কিন্তু খরচ কম হওয়ায় এগুলো সস্তায় বিক্রি করা হয়।
মান ও নিরাপত্তায় বিশেষ নজর
জনঔষধি কেন্দ্রে উপলব্ধ ঔষধ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (GMP)-এর মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়। সকল ঔষধের গুণগত পরীক্ষা ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরিজ (NABL)-এর দ্বারা প্রমাণিত পরীক্ষাগারে করা হয়।
জনঔষধি দিবস ২০২৫: বিশেষ আয়োজন ও সচেতনতা অভিযান
১ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত ‘জনঔষধি সপ্তাহ’ পালিত হয়, যার আওতায় দেশজুড়ে র্যালি, সেমিনার, স্বাস্থ্য শিবির ও জনসচেতনতা অভিযান পরিচালিত হয়। এই অভিযানে সরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে।
সুস্থ ভারতের দিকে একটি বৃহৎ পদক্ষেপ
জনঔষধি দিবস কেবলমাত্র সস্তা ঔষধের উপলব্ধতায়ই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভারতের স্বাস্থ্য নীতিতে আসা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলিকেও তুলে ধরে। এই দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে স্বাস্থ্যসেবা কেবলমাত্র ধনীদের জন্য নয়, প্রতিটি নাগরিকের জন্যই সহজলভ্য হওয়া উচিত। PMBJP-এর অবিরত সম্প্রসারণ ও সরকারের অঙ্গীকার থেকে আশা করা যায় যে আগামী বছরগুলিতে ভারত স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
"সস্তা ঔষধ, সুস্থ জীবন - এটাই জনঔষধি দিবসের প্রকৃত বার্তা"