আন্তর্জাতিক ফেয়ারি দিবস: জাদু, কল্পনা এবং শৈশবের উৎসব

🎧 Listen in Audio
0:00

কখনও কি আপনি ফুলের বাগানে ঘুরতে ঘুরতে একটা ছোট্ট পরীর ডানা ফড়ফড় করতে দেখার কল্পনা করেছেন? নাকি মনে পড়েছে বইয়ে পড়া সেই জাদুকরী পরীদের গল্পের, যেগুলো ভালোবাসার বার্তা দেয় এবং শিশুদের দুনিয়ায় হাসি ছড়িয়ে দেয়? যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে ২৪শে জুনের দিনটি আপনার জন্য অত্যন্ত বিশেষ – কারণ এই দিনটি পালিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ারি ডে (International Fairy Day) হিসেবে।

এই দিনটি সেই রহস্যময়ী এবং মনোমুগ্ধকর পরীদের উৎসর্গ করা, যারা শতাব্দী ধরে লোককথা, শিশুদের গল্প এবং কল্পনায় অংশীদার। এই দিনটি আমাদের সেই জাদু, নির্মলতা এবং কল্পনাশক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়, যা আমাদের শৈশবের গল্পগুলিতে বসবাস করত।

ফেয়ারি ডে কেন পালিত হয়?

ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ারি ডে'র সূচনা করেছিলেন একজন ফ্যান্টাসি শিল্পী জেসিকা গ্যালব্রেথ (Jessica Galbreth)। তিনি তার শিল্পে জাদুকরী প্রাণীদের চিত্রিত করতেন, যার মধ্যে পরীরা ছিল প্রধান। এই দিনটি বিশেষ করে মিডসামার (গ্রীষ্ম সংক্রান্তি) এর আশেপাশে আসে, যখন পরী এবং প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক অনুভব করা আরও বিশেষ হয়ে ওঠে।

কিন্তু পরীদের গল্প মানুষের ইতিহাসের চেয়েও পুরোনো। আয়ারল্যান্ডের সেল্কি পরী হোক, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার গ্নোমস, নাকি ভারতীয় লোককথার অপ্সরা, প্রতিটি সংস্কৃতিতে পরী বা এমন জাদুকরী প্রাণীর উল্লেখ অবশ্যই পাওয়া যায়।

ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ারি ডে'র ইতিহাস

ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ারি ডে প্রতি বছর ২৪শে জুন পালিত হয়। এই দিনটিকে জাদুকরী পরী এবং তাদের গল্পের উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। পরীদের সবসময় জাদু, কল্পনা এবং শৈশবের গল্পের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ক্ষুদ্র জাদুকরী প্রাণীরা শিশুদের পাশাপাশি বড়দের কল্পনায়ও বাস করে।

এই দিনে মানুষ পরীদের মতো পোশাক পরে, শিশুদের জন্য ফেয়ারি পার্টি করে, গল্প পড়ে এবং প্রকৃতির সাথে সময় কাটায়। ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ারি ডে আমাদের কল্পনার দুনিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার এবং জীবনে কিছু জাদুকরী আনন্দ যোগ করার সুযোগ দেয়।

পরীদের বৈচিত্র্যময় দুনিয়া

যখন আমরা 'ফেয়ারি' শব্দটি শুনি, তখন আমাদের মনে প্রায়ই একটি ছোট্ট, ডানাওয়ালা, উজ্জ্বল পোশাক পরা পরীর ছবি তৈরি হয়। কিন্তু পরীদের দুনিয়া এর চেয়ে অনেক বেশি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময়:

  • গ্নোম এবং ডোয়ার্ফস: এই জাদুকরী প্রাণীরা পাহাড় এবং খনিপথে বাস করে এবং প্রায়শই মানুষের সাহায্য করে।
  • নকার্স: খনিপথে বাস করা এই প্রাণীরা দেয়ালে টোকা দিয়ে বিপদের সতর্কতা দেয়।
  • সেল্কি: এরা সমুদ্রের পরী, যারা সিলের রূপ ধারণ করে মানুষের দুনিয়ায় আসে।
  • প্রকৃতির আত্মা: পরীদের প্রকৃতির আত্মা বলে মনে করা হয় – গাছপালা, ফুল, নদী এবং বাতাসের সাথে যুক্ত আত্মা।

কিভাবে পালন করবেন ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ারি ডে?

১. একটি পরী বাগান তৈরি করুন

শিশুদের সাথে মিলে বাড়ির আঙিনা বা গামলায় একটি ছোট্ট জাদুকরী ফেয়ারি গার্ডেন তৈরি করুন। ছোট ছোট কাঠের ঘর, ফুল, পাথর এবং গ্লিটার দিয়ে এটিকে সাজিয়ে নিন। মনে হবে যেন কোনো পরী যখন তখন এসে বসবে।

২. ফেয়ারি চলচ্চিত্র রাত

সন্ধ্যায় আপনার পরিবার বা বন্ধুদের সাথে বসে কোনো সুন্দর ফেয়ারি চলচ্চিত্র দেখুন। Peter Pan, Tinker Bell, Maleficent বা Snow White এর মতো চলচ্চিত্রে পরী চরিত্রের ভীড় আছে। সাথে পপকর্ন এবং হালকা আলো – একটি পরীকথার মতো সন্ধ্যা!

৩. ফ্যান্সি ড্রেস ফেয়ারি পার্টি

শিশু এবং বড়দের জন্য একটি থিম পার্টি করুন – যেখানে সবাই পরীদের পোশাক পরবে, মুখে গ্লিটার থাকবে এবং পটভূমিতে জাদুকরী সংগীত বাজবে। এই পার্টি সবার শৈশবের স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ দেবে।

৪. আপনার পোষা প্রাণীদেরকেও দিন পরীর রূপ

যদি আপনার পোষা প্রাণী থাকে তাহলে তাদের ছোট ছোট পরী পোশাক পরান। যেমন কুকুরদের ইউনিকর্নের রূপ দিন অথবা বিড়ালদের ছোট পরী বানান। শিশুরা এই কার্যকলাপ খুব পছন্দ করবে।

৫. একটি পরীকথা পড়ুন বা লিখুন

শিশুদের সাথে বসে কোনো বিখ্যাত পরীকথা পড়ুন – যেমন Little Red Riding Hood, Cinderella বা Beauty & the Beast। ইচ্ছা করলে নিজেও কোনো নতুন পরীকথা লিখুন, যেখানে আপনার কল্পনার পরী তার জাদু দিয়ে কারো সাহায্য করবে।

৬. পরীদের জন্য মিষ্টান্ন এবং দুধ রাখুন

কথিত আছে, যদি আপনি পরীদের আশীর্বাদ চান তাহলে তাদের জন্য একটি ছোট থালায় কুকিজ এবং দুধ রাতে জানালার কাছে রাখুন। এটি একটি সুন্দর ঐতিহ্য, যা শিশুদের অত্যন্ত উত্তেজিত করে।

পরীদের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

পরীদের কেবল কল্পনার অংশ বলে মনে করা ঠিক হবে না। তারা শতাব্দী ধরে সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক গল্পগুলিতে উপস্থিত ছিল। আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, ভারত এবং এশিয়ার অনেক অঞ্চলে আজও লোককথায় পরীদের উল্লেখ আছে।

পরীকথার গল্পগুলিতে প্রায়শই নৈতিক বার্তা লুকিয়ে থাকে – যেমন ভালোর জয়, ধৈর্য্যের ফল, সত্যের শক্তি এবং প্রকৃতির প্রতি প্রেম। এই গল্পগুলি শিশুদের ব্যক্তিত্বকে শক্তিশালী করে তোলে এবং বড়দের মধ্যেও কল্পনাশক্তি জাগ্রত করে।

ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ারি ডে কেবল কল্পনার উড়ান নয়, এটি শৈশবের নির্মলতা এবং ভালোবাসার বার্তাকেও জীবন্ত করে তোলে। এই দিনটি পালন করে আমরা আমাদের ভেতরের সৃজনশীলতা, করুণা এবং প্রকৃতি প্রেমকে পুনরায় জাগ্রত করতে পারি। পরীকথার গল্পগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে পৃথিবীতে জাদু এখনও আছে – কেবল আমাদের তা দেখার দৃষ্টি দরকার।

Leave a comment