রাজস্থানের লোকসংস্কৃতি: নৃত্য, সঙ্গীত ও ঐতিহ্যের এক অপূর্ব সমাহার

🎧 Listen in Audio
0:00

রাজস্থানের রঙিন পোশাক, উট, দুর্গ এবং মরুভূমির সৌন্দর্যের পাশাপাশি যা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এনে দিয়েছে, তা হল – এর লোকনৃত্য ও সঙ্গীত। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়া অনেক ঐতিহ্যকে বদলে দিলেও, রাজ্যের লোককলা আজও জীবন্ত। এটাই কারণ ভারত সরকার এবং ইউনেস্কো উভয়েই রাজস্থানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশেষ মর্যাদা দান করে।

রাজস্থানের লোকনৃত্য ও সঙ্গীত শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি সমৃদ্ধ লোককাহিনী ও সামাজিক ঐতিহ্যের বাহক। এই নৃত্য ও গান প্রায়শই প্রাকৃতিক জীবন, বীরত্বের গাথা, প্রেমকাহিনী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে জড়িত।

লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন ঐতিহ্য

রাজস্থানী লোকসঙ্গীতের সবচেয়ে বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য হল এর ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং আবেগপ্রবণ প্রকাশ। এখানকার লোকগান সাধারণতঃ আঞ্চলিক উপভাষায় – মারোয়াড়ি, মেওয়ারি, ঢুঁঢাড়ি, শেখাওয়াটি – গাওয়া হয়।

রাজস্থানে দুটি প্রধান লোকসঙ্গীত ঐতিহ্য রয়েছে

  • মাঙ্গানিয়ার সম্প্রদায়
  • লাঙ্গা সম্প্রদায়

উভয় সম্প্রদায়ই ঐতিহ্যগত গানের উপস্থাপনে পারদর্শী এবং প্রজন্ম ধরে এই কাজ করে আসছে। তাদের গানে প্রায়শই রাজা-মহারাজাদের বীরত্ব, প্রেমকাহিনী, ভক্তিভজন এবং ঋতুভিত্তিক লোকগান অন্তর্ভুক্ত থাকে।

প্রধান বাদ্যযন্ত্র

  • রাভণহস্তা: প্রাচীন তন্ত্রী বাদ্য, যা কথানুসারে রাভণ নিজেই তৈরি করেছিলেন।
  • কামায়চা: শুধুমাত্র মাঙ্গানিয়াররা বাজায় এমন একটি বাদ্যযন্ত্র।
  • খড়তাল, মঞ্জিরা, ঢোলক, বাঁশি এবং নগারা যেসব বাদ্যযন্ত্র দৈনন্দিন উপস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়।

লোকনৃত্য – দৃশ্যমান ঐতিহ্যের প্রতীক

রাজস্থানী লোকনৃত্য রাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রত্যক্ষ প্রমাণ। প্রতিটি অঞ্চল ও সম্প্রদায়ের নিজস্ব নৃত্য রয়েছে, যা তাদের জীবনযাত্রা এবং বিশ্বাসকে তুলে ধরে।

প্রধান নৃত্যশৈলী

  • ঘুমর: নারীদের দ্বারা দলবদ্ধভাবে করা এই বৃত্তাকার নৃত্য এখন রাজস্থানের পরিচয় হয়ে উঠেছে। ইউনেস্কো এটিকে অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
  • কালবেলিয়া: সাপের সাথে সম্পর্কিত কালবেলিয়া সম্প্রদায়ের নারীরা সাপের গতির অনুকরণ করে এই নৃত্য পরিবেশন করে। এই নৃত্যও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
  • ভবাই: নারীরা মাথায় একাধিক মটকা রেখে, তলোয়ার বা কাঁচের উপর নৃত্য করে। এই নৃত্য সাহস এবং ভারসাম্যের প্রতীক।
  • গড়: পুরুষদের দ্বারা কাঠের লাঠি নিয়ে করা এই নৃত্য হোলি ও গঙ্গাউরের মতো উৎসবে বিশেষভাবে পরিবেশিত হয়।
  • চড়ি নৃত্য: এতে নারীরা মাথায় জ্বলন্ত চিরাগ নিয়ে নৃত্য করে। এটি অলওয়ার ও কিষাণগড় অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রচলিত।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে জনপ্রিয়তা

রাজস্থানী লোকশিল্পীদের প্রতিভা এখন শুধুমাত্র ভারতে নয়, বিদেশেও প্রশংসিত হচ্ছে। ডেজার্ট ফেস্টিভ্যাল (জয়সালমের), জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল, পুষ্কর মেলা ইত্যাদি অনুষ্ঠানে লোকনৃত্য-সঙ্গীত প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও স্পিক ম্যাকের মতো সংগঠনের মাধ্যমে এই লোককলাগুলি বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

রাজ্য সরকার লোকশিল্পীদের উৎসাহিত করার জন্য, বৃত্তি এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচীও পরিচালনা করছে যাতে এই ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের কাছে সুরক্ষিত থাকে।

Leave a comment