পৌষের সোমবতী অমাবস্যা: বিশেষ তাৎপর্য ও পালনের নিয়মকানুন

🎧 Listen in Audio
0:00

পৌষ মাসের অমাবস্যা এইবার সোমবার পড়েছে, যাকে সোমবতী অমাবস্যা বলা হবে। এই দিনে কিছু বিশেষ উপায় করলে ভগবানের কৃপা পাওয়া যায়, যা জীবন সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি বৃদ্ধি করে।

Somvati Amavasya

হিন্দু ধর্মে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে এবং বিশেষ করে অমাবস্যা তিথি পিতৃপুরুষদের কৃপা লাভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এই দিনে স্নান ও দান করলে শুভ ফল পাওয়া যায়, সেইসাথে পিতৃপুরুষদের তৃপ্ত করার জন্য শ্রাদ্ধ কর্ম করলে জীবনে আসা সমস্যাগুলি কম করা যায়। বর্তমানে পৌষ মাস চলছে, আর এই মাসের অমাবস্যা সোমবারের দিন পড়েছে, যাকে সোমবতী অমাবস্যা বলা হবে।

সোমবতী অমাবস্যায় কিছু বিশেষ উপায় অবলম্বন করে ভগবানের কৃপা লাভ করা যায় এবং জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। জেনে নিন, এই দিনে কোন উপায়গুলি করলে প্রভুর কৃপা পাওয়া যেতে পারে।

কবে সোমবতী অমাবস্যা

এই বছর পৌষ মাসের সোমবতী অমাবস্যা তিথি ৩০শে ডিসেম্বর, সোমবার ভোর ৪টা বেজে ১ মিনিটে শুরু হয়ে ৩১শে ডিসেম্বর, মঙ্গলবার ভোর ৩টে বেজে ৫৬ মিনিটে শেষ হবে। এই দিনে বিশেষভাবে সোমবতী অমাবস্যার উৎসব পালিত হবে, কারণ এই অমাবস্যা সোমবারের দিন পড়েছে।

স্নান-দানের মুহুর্ত

·       ব্রহ্ম মুহুর্ত: সকাল ৫টা বেজে ২৪ মিনিট থেকে ৬টা বেজে ১৯ মিনিট পর্যন্ত।

·       বৃদ্ধি যোগ: সকাল থেকে রাত ৮টা বেজে ৩২ মিনিট পর্যন্ত।

পিতৃপুরুষদের প্রসন্ন করার দিন

সোমবতী অমাবস্যার দিন পিতৃপুরুষদের প্রসন্ন করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এই দিনে বিশেষভাবে কিছু উপায় অবলম্বন করলে পিতৃপুরুষদের কৃপা লাভ করা যায়।

·       সোমবতী অমাবস্যায় পিতৃপুরুষদের প্রসন্ন করার জন্য বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানো উচিত।

·       পিতৃপুরুষদের পূজা করার সময় দক্ষিণ দিকে প্রদীপ রেখে বিশেষভাবে পূজা করা উচিত।

·       এই উপায়ে পিতৃ দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি আসে।

এই উপায়গুলি অবলম্বন করলে শুধু পিতৃপুরুষদের কৃপা পাওয়া যায় তাই নয়, জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনও আসে।

সোমবতী অমাবস্যায় প্রদীপ জ্বালানোর উপায়

সনাতন ধর্মে ঘরের প্রধান দরজায় সন্ধ্যায় ধন দেবী লক্ষ্মীর জন্য প্রদীপ জ্বালানোর প্রথাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অমাবস্যার দিনে এই উপায় আরও বেশি ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। অমাবস্যার দিনে ঘরের প্রধান দরজায় প্রদীপ জ্বালালে মা লক্ষ্মী প্রসন্ন হন এবং ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি ও ধনের আগমন হয়। এই উপায়ে ঘরে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার হয় এবং আর্থিক সমৃদ্ধির পথ খুলে যায়। এটি একটি সহজ এবং কার্যকরী উপায়, যা ঘরে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।

পিতৃপুরুষদের প্রসন্ন করার জন্য এই কাজগুলি করুন

·       স্নান ও সাদা বস্ত্র: সোমবতী অমাবস্যার দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে সাদা বস্ত্র পরিধান করুন। এরপর পিতৃপুরুষদের স্মরণ করে তর্পণ করুন। তর্পণের জন্য কালো তিল, সাদা ফুল ও কুশ ব্যবহার করুন।

·       অশ্বত্থ গাছের পূজা: স্নানের পর অশ্বত্থ গাছের মূলে জল অর্পণ করুন। এতে পিতৃ দোষ দূর হয়। সেই সাথে সাত বার গাছের পরিক্রমা করুন এবং সর্ষের তেলে কালো তিল মিশিয়ে প্রদীপ জ্বালান। অশ্বত্থ গাছে পিতৃপুরুষদের বাস বলে মনে করা হয়।

·       পিতৃ চালিসার পাঠ: এই দিনে পিতৃ চালিসার পাঠ করুন। এটি পিতৃপুরুষদের আত্মার শান্তি প্রদান করে এবং তাদের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।

·       ব্রাহ্মণদের ভোজন ও দান: ব্রাহ্মণদের ভোজন করান এবং দান করুন। এই দিনে দান করা বিশেষভাবে ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।

·       গরিব ও অভাবীদের দান: সোমবতী অমাবস্যার দিনে গরিব ও অভাবীদের কালো তিল, দই, দুধ, বস্ত্র, ফল এবং খাদ্যশস্য দান করুন। এতে জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক উন্নতির উপায়

সোমবতী অমাবস্যায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আরও ভালো করার জন্য কিছু বিশেষ উপায় করা যেতে পারে। এই দিনে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই উপবাস রাখার তাৎপর্য রয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর পূজা করুন। পূজায় বিশেষভাবে ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর কাছে দাম্পত্য জীবনে সুখ, সৌভাগ্য এবং প্রেমের জন্য প্রার্থনা করুন।

এই উপায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ককে মজবুত ও মধুর করতে সহায়ক। ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর কৃপায় দাম্পত্য জীবনে সুখ ও শান্তি বজায় থাকে। এই দিনে করা উপায় জীবনে ইতিবাচক শক্তির প্রবাহ ঘটায় এবং বৈবাহিক জীবনে সুখ-শান্তি আসে।

```

Leave a comment