১৮ই মে শুরু হতে চলেছে ষড়াষ্টক যোগ: মেষ, কর্কট ও কুম্ভ রাশির উপর এর প্রভাব

🎧 Listen in Audio
0:00

১৮ই মে রাহু গ্রহ মীন রাশি থেকে বেরিয়ে কুম্ভ রাশিতে প্রবেশ করবে, এবং একই সাথে মঙ্গল তার নিচ রাশি কর্কতে অবস্থান করবে। জ্যোতিষে এই জ্যোতিষ্কীয় অবস্থাকে 'ষড়াষ্টক যোগ' বলা হয়। রাহু ও মঙ্গল যখন এই অবস্থানে থাকে, তখন তাকে ক্রুর গ্রহের মিলন বলে মনে করা হয়, এবং এটি দেশ-বিশ্বে সংঘর্ষ ও জটিলতার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি, এই যোগ রাশিচক্রের তিনটি রাশির জন্যও সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে। জেনে নিন, এই রাশিগুলিতে এর কি প্রভাব পড়বে এবং কীভাবে আপনি এই সমস্যাগুলি থেকে বাঁচতে পারেন।

ষড়াষ্টক যোগ গঠনের অবস্থা

ষড়াষ্টক যোগ তখন গঠিত হয় যখন দুটি ক্রুর গ্রহ রাহু ও মঙ্গল পরস্পরের ষষ্ঠ ভাবে অবস্থান করে। এটিকে একটি বিশেষ জ্যোতিষীয় যোগ বলে মনে করা হয়, যা কোনো ব্যক্তির জীবনে সংঘর্ষ ও কঠিনতার ইঙ্গিত দেয়। এই যোগ গঠনের ফলে জীবনে চাপ, মানসিক জটিলতা এবং সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এই যোগ তখন গঠিত হয় যখন

রাহুর অষ্টম ভাবে মঙ্গলের সাথে সম্পর্ক: যখন রাহু ও মঙ্গল পরস্পরের অষ্টম ও ষষ্ঠ ভাবে অবস্থান করে, তখন তাকে ষড়াষ্টক যোগ বলা হয়। এই অবস্থা ব্যক্তির জীবনে সংকট ও বিপদের কারণ হতে পারে।

মঙ্গলের ষষ্ঠ ভাবে রাহুর সাথে সম্পর্ক: একইভাবে, মঙ্গলের রাহুর ষষ্ঠ ভাবে থাকাও এটিকে ষড়াষ্টক যোগে পরিণত করে, যার ফলে ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

ষড়াষ্টক যোগের প্রভাব

ষড়াষ্টক যোগ একটি জ্যোতিষীয় যোগ যা জীবনে সংঘর্ষ ও মানসিক চাপের ইঙ্গিত দেয়। যখন রাহু ও মঙ্গল পরস্পরের ষষ্ঠ ভাবে থাকে, তখন এই যোগের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব জীবনের বিভিন্ন দিকে পড়তে পারে।

  • কঠিন সময়: এই যোগের প্রভাবে থাকার ফলে জীবনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। মানসিক শান্তি কমতে পারে, যার ফলে ব্যক্তিকে মানসিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়।
  • স্বাস্থ্য সমস্যা: এই যোগ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে। ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতে পারে।
  • আত্মবিশ্বাসের অভাব: ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসের অভাব হতে পারে, যার ফলে কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও বিপদ বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • সম্পর্কে চাপ: এই যোগের কারণে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কেও চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে পারিবারিক জীবন প্রভাবিত হতে পারে।

মেষ রাশি

রাহু ও মঙ্গলের ষড়াষ্টক যোগ মেষ রাশির জাতকদের জন্য কিছুটা কঠিন হতে পারে। এই যোগের প্রভাবে আপনার জীবনে সংঘর্ষ ও বিপদ বৃদ্ধি পেতে পারে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে আত্মবিশ্বাসের অভাব। যখন আপনার আত্মবিশ্বাস দুর্বল হয়, তখন আপনার কাজে ভুল হতে পারে, বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে। অফিসে সহকর্মীদের সাথে ঝগড়া হতে পারে এবং আপনার পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন নাও হতে পারে। এছাড়াও, পারিবারিক জীবনেও চাপ সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে মাতার স্বাস্থ্য নিয়ে। গাড়ি চালানোর সময়ও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

কর্কট রাশি

কর্কট রাশির জাতকদের জন্যও ষড়াষ্টক যোগ একটি চ্যালেঞ্জিং সময় নিয়ে আসতে পারে। এই যোগের প্রভাবে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে। আপনাকে কোনো অজানা ভয়ের মুখোমুখি হতে হতে পারে, যা আপনাকে মানসিক শান্তি থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি, রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখাও জরুরি হবে, কারণ এই সময়ে আপনার রাগের প্রভাব পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের সাথে সম্পর্কে পড়তে পারে। যদি আপনি আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণে না রাখেন, তাহলে এটি আপনার সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে।

এই সময় কর্মক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, কারণ কাজের চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং আপনি পরিশ্রমের যথাযথ ফল নাও পেতে পারেন। এছাড়াও, স্বাস্থ্যের দিকেও খুব মনোযোগ দেওয়া জরুরি হবে, কারণ শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় উত্থান-পতন হতে পারে।

কুম্ভ রাশি

কুম্ভ রাশির জাতকদের জন্যও এই ষড়াষ্টক যোগ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই সময় রাহু গ্রহ আপনার রাশিতে গোচর করবে এবং মঙ্গলের অষ্টম দৃষ্টি আপনার উপর থাকবে, যার ফলে পরিস্থিতি প্রতিকূল হতে পারে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হতে পারে অর্থ সংক্রান্ত সমস্যা। এই সময় আপনাকে আপনার টাকাপয়সা ও লেনদেনের বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ প্রতারণার সম্ভাবনা থাকতে পারে। আপনাকে কারো উপর অতিরিক্ত আস্থা রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এছাড়াও, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও অসাবধানতা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি আপনি আপনার স্বাস্থ্যের দিকে নজর না দেন তাহলে বড় স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। দাম্পত্য জীবনেও চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে সম্পর্কে ফাটল দেখা দিতে পারে। এই সময়ে আপনাকে বিশেষ করে মনোযোগ রাখতে হবে যাতে আপনি আপনার স্বাস্থ্য ও সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেন।

ষড়াষ্টক যোগ থেকে বাঁচার উপায়

  • হনুমান চালিসার পাঠ: হনুমানজিকে সংকটমোচন এবং হনুমান দেবতার পূজা দ্বারা জীবনে সমস্যার সমাধান হয়। হনুমান চালিসার নিয়মিত পাঠ ব্যক্তির মানসিক অবস্থাকে শক্তিশালী করে এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। যখন ব্যক্তি মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়, তখন সে যে কোনো বিপদের মুখোমুখি শান্তভাবে মোকাবেলা করতে পারে। এতে নেতিবাচকতা দূর হয় এবং ইতিবাচকতা বৃদ্ধি পায়।
  • ভগবান শিবের পূজা: ভগবান শিবের পূজা করা একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। শিবজীর আশীর্বাদে ব্যক্তি মানসিক শান্তি ও ভারসাম্য লাভ করে। শিব পূজা দ্বারা জীবনে আসা কঠিনতার মোকাবেলা করার শক্তি পাওয়া যায়। ভগবান শিবের উপাসনা দ্বারা শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না, বরং এটি মানসিক চাপও কমায়। শিবের আশীর্বাদে জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।
  • মঙ্গলবার দান: মঙ্গলবারের দিন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে মঙ্গল গ্রহ সংক্রান্ত সমস্যার জন্য। এই দিন দান করার ফলে ষড়াষ্টক যোগের নেতিবাচক প্রভাব কম করা যায়। দানের অর্থ কেবলমাত্র অর্থ দান করা নয়, বরং এটি যে কোনো ধরণের সাহায্য করা হতে পারে, যেমন দরিদ্রদের খাবার দেওয়া অথবা তাদের পোশাক প্রদান করা। এতে ব্যক্তির কর্মের পক্ষ শক্তিশালী হয় এবং জীবনে আসা সমস্যা কমে যায়।
  • স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন: ষড়াষ্টক যোগের প্রভাবে মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনার স্বাস্থ্যের বিশেষ যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম, যোগ ও ধ্যান দ্বারা মানসিক শান্তি ও শারীরিক শক্তি পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা না করলে, কারণ এটি আপনার জীবনের মানকে প্রভাবিত করবে।

১৮ই মে-র পর গঠিত হতে যাওয়া ষড়াষ্টক যোগ মেষ, কর্কট ও কুম্ভ রাশির জন্য কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে, প্রতিটি সমস্যারই সমাধান আছে। যদি আপনি সঠিক উপায়গুলি অবলম্বন করেন তাহলে আপনি এই সময়ের প্রভাব থেকে বাঁচতে পারেন। এই রাশির জাতকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয় যে তারা মানসিক শান্তি বজায় রাখার জন্য নিয়মিত হনুমান চালিসার পাঠ করুন, ভগবান শিবের পূজা করুন এবং আপনার অর্থ ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে সতর্ক থাকুন। এই সময়কালে শান্তি ও ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।

Leave a comment