রাজস্থানের পবিত্র নগর পুষ্করে অবস্থিত একটি রহস্যময় কুণ্ড ভক্ত ও আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসুদের জন্য আস্থার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে। একে নগ কুণ্ড বলা হয়, এবং বিশ্বাস করা হয় যে এখানে স্নান করলে কালসর্প দোষের নিরাময় হয়। বিশেষ করে নগপঞ্চমীর দিন এই কুণ্ডের ধর্মীয় গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, যখন হাজার হাজার ভক্ত এই পবিত্র জলে স্নান করে পুণ্য লাভ করেন।
নগ পাহাড়: নগ দেবতাদের ধাম
পুষ্করের কাছে অবস্থিত নগ পাহাড়কে নগ দেবতাদের বাসস্থান বলে মনে করা হয়। এই পর্বত কেবলমাত্র আজমের ও পুষ্করের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক বিভাজন রেখার কাজ করে না, বরং এটি হাজার হাজার দুর্লভ প্রজাতির সাপের প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থলও। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, এই স্থান নগবংশের উত্থানস্থলের প্রতীক এবং এখানে পাণ্ডবরা বনবাসের সময় বাস করেছিলেন।
নগ কুণ্ডের রহস্যময় প্রভাব
নগ পাহাড়ের তলায় অবস্থিত নগ কুণ্ড এবং অতি প্রাচীন নগ মন্দির আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্য বিশেষ শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। বলা হয় যে যে ব্যক্তি কালসর্প দোষে ভোগেন, যদি সে নগপঞ্চমীর দিন এই কুণ্ডে স্নান করে, তাহলে তার দোষ দূর হয়। স্থানীয় সর্পমিত্র সুখদেব ভট্ট জানান যে পুষ্কর ও আশেপাশের এলাকায় যদি কোনো সাপ দেখা যায়, তাহলে তাকে ধরে নগ পাহাড়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত হাজার হাজার সাপকে এই পাহাড়ে নিরাপদে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ঋষি-মুনিদের তপোভূমি
এই স্থান কেবলমাত্র নগ দেবতাদের আরাধনার জন্যই নয়, বরং এটি ঋষি-মুনিদের তপোভূমি হিসেবেও পরিচিত। অনেক সিদ্ধ সাধক আজও এখানে সাধনা করেন। আরাবল্লি পর্বতমালার এই অংশ আধ্যাত্মিক জাগ্রতের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
নগপঞ্চমীতে লাগে ভব্য মেলা
নগ কুণ্ডের তীরে প্রতি বছর নগপঞ্চমীর দিন ভব্য মেলার আয়োজন করা হয়, যেখানে ভক্তরা দূর-দূরান্ত থেকে এসে বিশেষ পূজন ও জলস্নান করেন। এই উৎসব শ্রদ্ধা, ভক্তি ও দিব্যতায় পরিপূর্ণ, যেখানে মানুষ নগ দেবতাদের আরাধনা করে তাদের দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়ার কামনা করে।
কেন এই স্থান অদ্বিতীয়?
কালসর্প দোষ নিরাময়ের জন্য ভারতের নির্বাচিত স্থানগুলির মধ্যে একটি
প্রাকৃতিকভাবে হাজার হাজার দুর্লভ সাপ প্রজাতির আশ্রয়স্থল
ঋষিদের তপোভূমি, যেখানে আজও সাধকরা সাধনা করেন
নগপঞ্চমীতে বিশাল মেলা এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন
আরাবল্লি পর্বতমালার অংশ, যেখান থেকে পুষ্করের অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়
পুষ্করের নগ কুণ্ড কেবলমাত্র একটি তীর্থস্থান নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক শক্তি কেন্দ্রও, যেখানে ভক্তরা এসে আত্মশান্তি ও পবিত্রতার অনুভূতি লাভ করেন।