গুগল আমেরিকায় ‘সার্চ লাইভ’ ফিচার লঞ্চ করেছে, যা জেমিনি AI-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। এতে ব্যবহারকারীরা ভয়েস ইনপুটের মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারবেন এবং রিয়েল টাইমে উত্তর পেতে পারবেন।
Google Search Live: গুগল আবারও তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য সার্চ অভিজ্ঞতা আরও বুদ্ধিমান এবং ইন্টার্যাক্টিভ করার দিকে বড় ধাপ এগিয়েছে। কোম্পানি তাদের গুগল অ্যাপে একটি নতুন ফিচার ‘সার্চ লাইভ’ AI মোডের আওতায় লঞ্চ করেছে, যা বর্তমানে আমেরিকায় সীমিত পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। বিশেষ ব্যাপার হলো, এই নতুন ফিচারটি জেমিনির কাস্টম ভার্সনের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এতে উন্নত ভয়েস ইনপুট সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা টেক্সটের পরিবর্তে কণ্ঠের মাধ্যমে সার্চ করতে পারবেন, ফলো-আপ প্রশ্ন করতে পারবেন এবং স্ক্রিনে সংশ্লিষ্ট উত্তর এবং ওয়েবসাইট লিঙ্কও পেতে পারবেন।
কী হল Google Search Live?
সার্চ লাইভ, গুগলের জেমিনি AI টেকনোলজি দ্বারা পরিচালিত একটি নতুন ফিচার যা ভয়েস-ভিত্তিক ইন্টার্যাকশনকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যায়। পূর্বে যেখানে Google সার্চে আপনি প্রশ্ন টাইপ করতেন এবং রিজাল্ট দেখতেন, এখন সেই প্রক্রিয়ায় আপনার কণ্ঠও যুক্ত হয়েছে। আপনি বলুন এবং AI অবিলম্বে উত্তর দিক – তাও আলাপের ধাঁচে।
এই ফিচারটি অ্যান্ড্রয়েড এবং iOS উভয় প্ল্যাটফর্মের গুগল অ্যাপে উপলব্ধ। ব্যবহারকারী সার্চ বারের নিচে একটি নতুন ওয়েভফর্ম আইকন দেখতে পাবেন, যা ট্যাপ করলে ফুল-স্ক্রিন সার্চ লাইভ ইন্টারফেস খুলবে। এখানে দুটি বিকল্প থাকে: মিউট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট। মিউটে আপনি শুধুমাত্র টেক্সট ফরম্যাটে উত্তর দেখতে পারবেন, অন্যদিকে ট্রান্সক্রিপ্টে সম্পূর্ণ আলাপ রেকর্ড হতে থাকে।
এই AI ফিচারটি কী কী করতে পারে?
- ভয়েস দিয়ে আলাপ: ব্যবহারকারীরা সরাসরি AI-এর সাথে কথা বলে প্রশ্ন করতে পারবেন এবং গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো অবিলম্বে উত্তরও পেতে পারবেন। এতে আপনি ফলো-আপ প্রশ্নও করতে পারবেন, যার ফলে এই ফিচারটি একটি প্রাকৃতিক কথোপকথনের মতো অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
- স্মার্ট টেক্সট রিপ্লাই এবং লিঙ্ক শেয়ারিং: যখন কোন উত্তর দেওয়া হয়, তখন একই স্ক্রিনে সেই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ওয়েবসাইটের লিঙ্কও দেওয়া হয়, যাতে ব্যবহারকারী আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন।
- ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করার ক্ষমতা: গুগল এটাও নিশ্চিত করেছে যে, যদি ব্যবহারকারী অন্য কোন অ্যাপে সুইচ করে যান, তবুও সার্চ লাইভ ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ চালিয়ে যাবে এবং কথোপকথন অব্যাহত থাকবে।
- AI মোড হিস্ট্রি: সমস্ত কথোপকথনের ইতিহাস ‘AI মোড হিস্ট্রি’ সেকশনে দেখা যাবে, যাতে আপনি আপনার পুরানো প্রশ্ন-উত্তর আবার পড়তে পারবেন।
জেমিনি AI-এর ব্যবহার
‘সার্চ লাইভ’ ফিচার জেমিনির কাস্টম ভার্সনের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা বিশেষ করে গুগল সার্চকে আরও বেশি স্মার্ট করার জন্য বিকশিত হয়েছে। এই ফিচারটি ক্যোয়ারি ফ্যান-আউট টেকনোলজি ব্যবহার করে, অর্থাৎ যখন ব্যবহারকারী কোন প্রশ্ন করে, তখন এই টেকনোলজি ওয়েব থেকে সংশ্লিষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য উৎসগুলিকে স্ক্যান করে একটি ব্যাপক উত্তর তৈরি করে।
মাল্টিটাস্কিং-এও সাহায্যকারী
একটি বিশেষ ফিচার হলো, গুগল অ্যাপ বন্ধ করার পরেও সার্চ লাইভের ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ চালিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ আপনি চাইলে অ্যাপটি মিনিমাইজ করতে পারেন, কিন্তু আপনার আলাপ AI অ্যাসিস্ট্যান্টের সাথে চলতে থাকবে। এতটুকুই নয়, ব্যবহারকারী AI মোড হিস্ট্রিতে গিয়ে তাদের পূর্বের কথোপকথন আবার দেখতে পারবেন।
কী হল ক্যোয়ারি ফ্যান-আউট টেকনোলজি?
এই টেকনোলজি গুগল জেমিনি AI-কে অতিরিক্ত বুদ্ধিমত্তা দেয়। যখন কোন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করে, তখন গুগল সেই একটি প্রশ্নকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ডেটা সোর্স এবং সম্ভাব্য উত্তরের দিকে ‘ফ্যান আউট’ করে এবং তারপর সেই তথ্যগুলিকে একত্রিত করে ব্যবহারকারীকে সবচেয়ে উপযোগী এবং প্রাসঙ্গিক উত্তর দেয়।
এটি পুরোনো সার্চ অভিজ্ঞতা থেকে আলাদা, যেখানে শুধুমাত্র শীর্ষ ১০টি রিজাল্টের মধ্যে থেকে নির্বাচন করতে হতো। এখন AI আপনার প্রয়োজন বুঝে আপনাকে নিজেই উত্তর দেয়।
ভবিষ্যতে ক্যামেরা ভিত্তিক ইন্টার্যাকশনও
গুগল জানিয়েছে যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তারা এই ফিচারে আরও উন্নত ফিচার যোগ করবে। যেমন, আপনি আপনার ফোনের ক্যামেরা দিয়ে কোনো বস্তুর দিকে ইঙ্গিত করবেন এবং তার সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কোনো গাছের ছবি তুলেন এবং জিজ্ঞাসা করেন – ‘এর নাম কী?’ তাহলে সার্চ লাইভ AI মোড আপনাকে সঠিক উত্তর দেবে।
এখনও শুধুমাত্র আমেরিকায় সীমাবদ্ধ
উল্লেখযোগ্য যে, এই সুবিধাটি সার্চ ল্যাবসের অধীনে একটি অপ্ট-ইন এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে আমেরিকায় উপলব্ধ করা হয়েছে। এর অর্থ হল, যারা সার্চ ল্যাবসে নিবন্ধিত আছেন, শুধুমাত্র তারাই এই ফিচারের পরীক্ষা করতে পারবেন। গুগল এখনও অন্যান্য দেশে এটি রোল আউট করার পরিকল্পনার কোন তথ্য দেয়নি।