পাকিস্তানে চালু হল মানুষের মতো AI রিপোর্টার

পাকিস্তানে চালু হল মানুষের মতো AI রিপোর্টার
সর্বশেষ আপডেট: 2 দিন আগে

পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো মানুষের মতো আচরণ ও কণ্ঠস্বর সম্পন্ন একটি AI রিপোর্টার চালু করা হয়েছে, যা উর্দুতে রিয়েল টাইমে খবর পড়তে পারে।

AI রিপোর্টার: প্রযুক্তি ও সাংবাদিকতার মিলনের নতুন অধ্যায় এখন পাকিস্তানে উন্মোচিত হয়েছে। দেশের একটি প্রধান নিউজ চ্যানেল ৯২ নিউজ সম্প্রতি একটি এমন AI নিউজ অ্যাঙ্কর চালু করেছে, যা উর্দু ভাষায় কেবলমাত্র স্ক্রিপ্টেড বুলেটিন পড়তে পারে না, বরং মানুষের মতো চেহারা, কণ্ঠস্বর ও আচরণের সাথে ব্রেকিং নিউজও রিয়েল টাইমে উপস্থাপন করার ক্ষমতা রাখে। এই প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ কেবলমাত্র একটি পরীক্ষা নয়, বরং পাকিস্তানের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে AI প্রযুক্তির আসল সূচনা বলেও মনে করা হচ্ছে।

এই AI রিপোর্টারের বিশেষত্ব কী?

৯২ নিউজ চ্যানেল কর্তৃক উপস্থাপিত এই AI অ্যাঙ্করের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল এটি সম্পূর্ণরূপে উর্দুতে প্রশিক্ষিত, এবং এর নকশা, আচরণ, কথাবার্তার ধরণ ও মুখের অভিব্যক্তি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে প্রথম নজরে এটি একটি মানব অ্যাঙ্করের মতোই দেখায়।

AI রিপোর্টার কেবলমাত্র একটি প্রস্তুত স্ক্রিপ্ট পড়তে পারে না, বরং এটি রিয়েল টাইম আপডেট দেওয়ারও ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ, কোনও বড় ঘটনা বা ব্রেকিং নিউজের সময় এটি নিজেকে আপডেট করে দর্শকদের কাছে খবর পৌঁছে দিতে পারে, ঠিক ঐতিহ্যগত নিউজরুমের মতো উপস্থাপন করে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়

এই AI রিপোর্টার প্রথমে Instagram-এ উপস্থাপিত হয়, যেখানে এর ক্লিপ দ্রুত নজর কেড়ে নেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষ এর আচরণ, ভাষার ধরণ এবং উপস্থাপনায় বিস্মিত হয়েছে। অনেকে এটিকে ‘সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ’ বলে অভিহিত করেছে, অন্যদিকে কিছু কিছু এটিকে সাংবাদিকতার মৌলিকতার উপর ঝুঁকি হিসেবে দেখছে।

আগে কোথায় কোথায় AI রিপোর্টার ব্যবহার করা হয়েছে?

AI রিপোর্টিং বিশ্বের জন্য নতুন নয়, তবে প্রতিটি দেশের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এই দিকে ভিন্ন ভিন্ন। এর আগে:

  • চীন ২০18 সালে তার প্রথম AI নিউজ অ্যাঙ্কর উপস্থাপন করেছিল।
  • কুয়েতেও ‘Fedha’ নামক AI অ্যাঙ্কর ডিজিটাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে চালু করা হয়েছিল।
  • ভারতেও কিছু নিউজ প্ল্যাটফর্ম AI অ্যাঙ্করের সীমিত ব্যবহার করেছে।

কিন্তু পাকিস্তানে এটিই প্রথমবার যখন AI রিপোর্টারকে কেবলমাত্র স্ক্রিপ্ট পড়ার জন্য নয়, বরং ব্রেকিং নিউজ এবং লাইভ আপডেট দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি এটিকে অন্যান্য উদাহরণ থেকে আলাদা করে।

কী AI অ্যাঙ্কর মানুষের জায়গা নেবে?

এই প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। একদিকে যেখানে মিডিয়া হাউস এই প্রযুক্তিকে দক্ষ, 24x7 উপলব্ধ এবং ত্রুটি-মুক্ত বলে বর্ণনা করছে, অন্যদিকে সাংবাদিক ও দর্শকরা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন যে, কি মানব অ্যাঙ্কর ধীরে ধীরে মিউজিয়াম স্টুডিও থেকে বের করে দেওয়া হবে?

AI রিপোর্টারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটির কখনও বিরতির প্রয়োজন হয় না, এটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দরকার হয় না, এবং এটি যেকোনো সময় লাইভ হতে পারে। কিন্তু এর পরেও একটি বড় প্রশ্ন হল, কি AI কখনও মানবিক সংবেদনশীলতা, অভিজ্ঞতা এবং রিপোর্টিং এর গভীরতা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারবে?

কী হবে পরবর্তী পদক্ষেপ?

এখন প্রশ্ন উঠছে, কি এই AI অ্যাঙ্কর ভবিষ্যতে কেবলমাত্র পর্দায় সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি এটিকে গ্রাউন্ড রিপোর্টিং, লাইভ ডিবেট এবং সাক্ষাৎকারের মতো ক্ষেত্রেও নামানো হবে?

এর উত্তর সম্ভবত আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে, কারণ প্রযুক্তির গতি যেমন বেড়ে চলেছে, সেই দিন আর দূরে নয় যখন নিউজ স্টুডিও থেকে শুরু করে ফিল্ড রিপোর্টিং পর্যন্ত সর্বত্র ডিজিটাল অবতার দেখা যাবে।

মিডিয়ার পরিবর্তিত রূপের সূচনা

এই AI রিপোর্টার পাকিস্তানে কেবলমাত্র একটি প্রযুক্তিগত পরীক্ষা নয়, বরং মিডিয়ার পরিবর্তিত রূপ এবং ডিজিটাল সাংবাদিকতার নতুন যুগের সূচনাও। বিশেষ করে উর্দু ভাষায় এটি উপস্থাপন করা এটি দেখায় যে প্রযুক্তি এখন কেবলমাত্র ইংরেজি বা শহুরে জনসংখ্যার কাছে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি স্থানীয় ভাষায়ও প্রবেশ করছে।

Leave a comment