প্রতিবেদনের মতে, ঋণদাতাদের সোনা-সমর্থিত ভোগ্যপণ্য ঋণের জন্য এখন কম মেয়াদী ঋণ প্রদানের বেশি স্বাধীনতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) সম্প্রতি সোনা ঋণের সাথে সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যা কেবল ঋণদাতাদের ব্যবসায়িক মডেলকেই প্রভাবিত করবে না, বরং নিম্ন থেকে মধ্যবিত্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্যও সুযোগ এনে দেবে। S&P গ্লোবাল রেটিংসের একটি প্রতিবেদনের মতে, নতুন নিয়মাবলী ঋণদাতাদের সোনার উপর ভিত্তি করে ছোট এবং কম মেয়াদী ভোগ্যপণ্য ঋণ প্রদানের বেশি স্বাধীনতা দেবে। এই পরিবর্তনের ফলে সোনা ঋণ খাতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে, ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী হবে এবং ঋণদাতাদের জন্য অপারেশনাল কৌশলও পরিবর্তিত হবে।
সোনা ঋণের নিয়মে কী পরিবর্তন হয়েছে
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক দুটি প্রধান পরিবর্তন করেছে, যা সোনা-সমর্থিত ভোগ্যপণ্য ঋণের ঋণ মূল্য এবং পুনঃপ্রদান মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কিত। প্রথম বড় পরিবর্তন হল, এখন ঋণ-টু-মূল্য (LTV) অনুপাতের হিসাব করার সময় পরিপক্কতা পর্যন্ত প্রদেয় সুদও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর অর্থ হল ঋণদাতা কর্তৃক প্রদত্ত অগ্রিম ঋণের পরিমাণ সীমিত হতে পারে।
দ্বিতীয় বড় পরিবর্তন হল, এখন 3,000 ডলার (প্রায় ₹2.5 লক্ষ) এর বেশি ভোগ্যপণ্য ভিত্তিক ঋণ এবং সমস্ত আয়-উৎপাদনশীল ঋণের জন্য নগদ প্রবাহের উপর ভিত্তি করে ঋণ মূল্যায়ন করা বাধ্যতামূলক হয়েছে। অর্থাৎ এখন শুধুমাত্র জামানত হিসেবে রাখা সোনার মূল্যের উপর ভিত্তি করে ঋণ প্রদান করা যথেষ্ট নয়।
ঋণদাতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ
এই নতুন ব্যবস্থার ফলে ঋণদাতাদের তাদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নীতিগুলিতে পরিবর্তন আনতে হবে। মুথুট ফিন্যান্স এবং মণিপ্পুরম ফিন্যান্সের মতো NBFC, যারা প্রধান সোনা ঋণ প্রদানকারী, এখন জামানতের মূল্যের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, ঋণগ্রহীতাদের আয় এবং নগদ প্রবাহের গভীর বিশ্লেষণ করতে হবে।
এর সাথে সম্পর্কিত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ঋণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে। এই পরিবর্তন প্রাথমিকভাবে খরচ এবং সময় উভয়েরই দাবী করবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি ঋণদাতাদের পোর্টফোলিওকে শক্তিশালী করবে।
প্রতিবেদন বলে যে, যারা দ্রুত তাদের ব্যবসায়িক মডেল পরিবর্তন করতে পারে, তাদের জন্য এই পরিবর্তন লাভজনক হতে পারে।
ছোট এবং মধ্যবিত্ত ঋণগ্রহীতারা উপকৃত হবে
RBI-এর নতুন নির্দেশিকা ছোট এবং মধ্যবিত্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। আগে যেখানে জামানত হিসেবে রাখা সোনার মূল্যের সীমিত অংশই ঋণ হিসেবে পাওয়া যেত, সেখানে এখন কম মেয়াদী পণ্য (যেমন 3 থেকে 6 মাস মেয়াদী ঋণ) এর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে ঋণগ্রহীতা তাদের সোনার সর্বোচ্চ মূল্য ব্যবহার করতে পারবে।
এই নতুন কাঠামোর অধীনে ছোট ঋণের অনুমোদন প্রক্রিয়াও সহজ হবে, যার ফলে সময় সাশ্রয় হবে এবং গ্রাহক দ্রুত সহায়তা পেতে পারবে। এটি বিশেষ করে সেই গ্রাহকদের জন্য উপকারী হবে, যাদের মাসিক আয় সীমিত এবং যারা জরুরী অবস্থায় অল্প সময়ের জন্য সোনা ঋণের আশ্রয় নেয়।
পুনর্নবীকরণের প্রক্রিয়া স্পষ্ট, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
RBI সোনা ঋণের পুনর্নবীকরণ নিয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। এখন কোনও সোনা ঋণ পুনর্নবীকরণ করার জন্য এটি বাধ্যতামূলক হবে যে, আগে সমস্ত বকেয়া সুদের পুরো পরিশোধ করা হবে। এই প্রবিধান ঋণদাতাদের সেই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে, যেখানে ঋণ বারবার পুনর্নবীকরণ হয়ে বকেয়া বৃদ্ধি পায়।
এই নতুন নিয়মের ফলে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে এবং ঋণ প্রক্রিয়া আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যাবে। পাশাপাশি, এটি ব্যাংকিং সিস্টেমে সম্ভাব্য NPA (Non-Performing Assets) এর চাপও কমিয়ে আনবে।
সোনা ঋণ ব্যবসায়িক মডেলে পরিবর্তন আসতে পারে
সোনা ঋণ কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেলে এই নিয়মের ফলে ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত যে মডেল জামানতের মূল্যের উপর কেন্দ্রীভূত ছিল, তা এখন ঋণগ্রহীতার আয়, প্রোফাইল এবং নগদ প্রবাহের বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে হবে। এই পরিবর্তন ঋণ ডিফল্টের ঝুঁকি কমিয়ে আনবে এবং ঋণদাতাদের সম্পত্তির মান উন্নত করবে।
এছাড়াও, NBFC-কে তাদের সফ্টওয়্যার সিস্টেম, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এবং কর্মচারী প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করতে হবে। এটি একটি স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ হবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি আর্থিক স্থায়িত্ব এবং ব্যবসায়িক বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।