পাকিস্তান পাচ্ছে চীনের J-35A স্টিলথ ফাইটার: ভারতের জন্য নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ?

পাকিস্তান পাচ্ছে চীনের J-35A স্টিলথ ফাইটার: ভারতের জন্য নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ?
সর্বশেষ আপডেট: 6 ঘণ্টা আগে

এই অঞ্চলে ভারত ইতিমধ্যেই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, উপগ্রহ-ভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থা এবং এআই-ভিত্তিক সামরিক সরঞ্জামের মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের এই প্রচেষ্টাগুলিকে একটি কৌশলগত ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে, তবে এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্রের প্রতিযোগিতা এবং অস্থিতিশীলতার ঝুঁকিও বাড়ে।

বিশ্বের পরিবর্তিত কৌশলগত পরিস্থিতির মধ্যে এখন সামরিক শক্তিই দেশগুলির কূটনীতির সবচেয়ে বড় ভিত্তি হয়ে উঠছে। এই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান তার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে আধুনিকীকরণের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তান শীঘ্রই চীন থেকে পরবর্তী প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেট J-35A পেতে পারে। এই বিমানটি কেবল তার বিমান শক্তিকে নতুন মাত্রা দেবে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করতে পারে।

এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ চীন ও পাকিস্তানের সামরিক অংশীদারিত্ব ক্রমাগত গভীর হচ্ছে এবং এই সহযোগিতা সরাসরি ভারতের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলির সাথে জড়িত।

J-35A স্টিলথ ফাইটার জেট কী?

J-35A একটি পঞ্চম প্রজন্মের মাল্টিরোল স্টিলথ ফাইটার জেট যা চীনের প্রধান অ্যারোস্পেস সংস্থা AVIC (Aviation Industry Corporation of China) তৈরি করেছে। এটি 'FC-31 Gyrfalcon' নামেও পরিচিত, এবং এই বিমানটিকে আমেরিকার F-35 লাইটনিং II-এর চীনা জবাব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এই বিমানটির প্রধান উদ্দেশ্য হল স্টিলথ মিশন, অর্থাৎ এমন অভিযান যেখানে শত্রুর রাডার ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে তাদের সীমার গভীরে আক্রমণ করা যেতে পারে। J-35A-এর ডুয়াল ইঞ্জিন ডিজাইন, উন্নত অ্যাভিওনিক্স এবং উচ্চতর অ্যারোডাইনামিক ক্ষমতা এটিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক যুদ্ধবিমান করে তোলে।

কোন কোন প্রযুক্তি এটিকে বিপজ্জনক করে তোলে?

  • স্টিলথ প্রযুক্তি: J-35A-এর বডিতে রাডার-শোষণকারী উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে এটি শত্রুর রাডার ব্যবস্থা থেকে রক্ষা পেয়ে উড়তে পারে। এর ডিজাইন বিশেষভাবে এমন প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যা রাডার সিগন্যালকে প্রতিফলিত হতে দেয় না।
  • গতি এবং রেঞ্জ: এই বিমানটি প্রায় ১.৮ ম্যাক গতি অর্জন করতে পারে এবং এর অপারেশনাল রেঞ্জ ২০০০ কিলোমিটারের বেশি। অর্থাৎ এটি শত্রুর এলাকায় গভীরে প্রবেশ করে আক্রমণ করতে সক্ষম।
  • মাল্টি-রোল ক্ষমতা: এই ফাইটার জেট আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণ করতে সক্ষম। এটি টহল, আক্রমণ, রিকনসাঁস (গোয়েন্দা) এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের মতো অভিযানে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অস্ত্র ব্যবস্থা: আকাশ থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষমতা

J-35A-কে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থায় সজ্জিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে

  • PL-15 ক্ষেপণাস্ত্র: এটি একটি দীর্ঘ পাল্লার সক্রিয় রাডার-নির্দেশিত আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, যার রেঞ্জ প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বলে মনে করা হয়।
  • PL-10 ক্ষেপণাস্ত্র: এটি একটি স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যা নিকটবর্তী আকাশ যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
  • লেজার গাইডেড বোমা: ভূমির উপর থাকা লক্ষ্যবস্তুগুলিকে নির্ভুলভাবে আঘাত করার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
  • AESA রাডার: যা মাল্টিটার্গেট ট্র্যাকিং এবং ইলেকট্রনিক কাউন্টারমেজারে সক্ষম।

পাকিস্তানের জন্য কেন এটি গেমচেঞ্জার?

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা, চীন এবং ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি অর্জনের চেষ্টা করে আসছে। JF-17-এর মতো বিমানগুলি ইতিমধ্যেই তার বহরে রয়েছে, কিন্তু সেগুলি পুরোপুরি স্টিলথ নয় এবং অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। J-35A-এর আগমনে পাকিস্তান একটি পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ প্ল্যাটফর্ম পেয়ে যাবে, যা তার বিমান শক্তিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

J-35A ভারতের বিমানের তুলনায় আরও উন্নত স্টিলথ ক্ষমতা প্রদান করে। এটি ব্যবহার করে পাকিস্তান ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে, বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায়।

ভারতের জন্য কি এটি হুমকি হতে পারে?

ভারতের কাছে এই মুহূর্তে রাফাল, তেজস এবং সুখোই-৩০-এর মতো আধুনিক বিমান রয়েছে। রাফাল বিমানগুলি অত্যন্ত উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারে সজ্জিত। এরপরেও, J-35A-এর স্টিলথ প্রযুক্তি এবং দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে এটি ভারতের জন্য একটি নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষ করে যদি পাকিস্তান এই প্রযুক্তিকে চীনের ISR (ইন্টেলিজেন্স, সার্ভিল্যান্স, রিকনসাঁস) ক্ষমতার সাথে যুক্ত করে, তবে এটি LAC এবং LoC উভয় দিকেই ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

ভারতের কৌশলগত প্রস্তুতি কী?

ভারত ইতিমধ্যেই তার বিমানবাহিনীকে প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী করার দিকে কাজ করছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে

  • AMCA প্রকল্প: ভারতের নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার প্রোগ্রাম যা আগামী বছরগুলিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর শক্তি হবে।
  • রাফাল স্কোয়াড্রনগুলির মোতায়েন: রাফাল জেটগুলিকে ভারতের উভয় ফ্রন্টে মোতায়েন করা হয়েছে।
  • তেজস মার্ক-২ এবং ড্রোন প্রযুক্তি: ভারত আধুনিক হালকা যুদ্ধবিমান এবং ইউএভি (আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেলস) প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে।

Leave a comment