সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর হওয়ার পর থেকেই সীমান্তবর্তী এলাকায় নাগরিকত্ব নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। বিশেষ করে যাঁদের জন্মের শংসাপত্র নেই, তাঁদের জন্য সিএএ সনদ পাওয়া হয়ে উঠেছে কঠিন লড়াই। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই নদিয়ায় গড়ে উঠেছিল এক জালিয়াতি চক্র। সরকারি আধিকারিকদের নাম জড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি আরও চাঞ্চল্যকর হয়ে উঠেছে।
কীভাবে চলত প্রতারণার খেলা?
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, বগুলা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারি আধিকারিক-সহ চারজন— শ্যামাপ্রসাদ বিশ্বাস, বিকাশ ঘোষ, গোপাল ঘোষ ও তনয় মণ্ডল— সরাসরি এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সরকারি অনুমোদিত পোর্টালে নিজেদের অ্যাক্সেস ব্যবহার করে তাঁরা নকল শংসাপত্র তৈরি করতেন। তবে তার আগে হত দর-কষাকষি!
সুত্রের খবর, নথির পুরনোত্বের ওপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হত মূল্য।
- ৫ বছরের কম পুরনো হলে ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা।
- ১৫ বছরের বেশি পুরনো হলে দর হাঁকা হত ইচ্ছামতো!
এই চক্র এতটাই গভীরে পৌঁছে গিয়েছিল যে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪,৮৮৮টি জাল জন্ম শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে— এত বছর ধরে কীভাবে এই প্রতারণা চলল?
কারা জড়িত? তদন্তে উঠে এল আরও চমক!
শুধু প্রতারকরাই নন, জাল নথি সংগ্রহকারীরাও পুলিশের নজরে। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, তাঁরা ভারতের বৈধ নাগরিক কিনা। শুধু নদিয়া নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলায়ও এই চক্রের শিকড় ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
হাঁসখালি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিল্পী বিশ্বাস বলেন, "সরকারি নথিতে এত শিশু জন্মানোর কোনও রেকর্ড নেই। এসব পুরোপুরি জালিয়াতি।" রানাঘাটের পুলিশ সুপার সানি রাজ জানিয়েছেন, "প্রতারকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরও কেউ জড়িত আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"
এই জালিয়াতি চক্রের ফাঁস হওয়া প্রশাসনের নজর আরও কড়া করেছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় নাগরিকত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা যেন আর না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখার বার্তা দেওয়া হয়েছে।