মহাকাশ গবেষণায় নতুন বিপ্লব আনতে চলেছে রাশিয়া। দেশটির বিজ্ঞানীরা এমন একটি শক্তিশালী প্লাজ়মা ইঞ্জিন তৈরি করেছেন, যা ব্যবহার করলে মাত্র ৩০ দিনেই মঙ্গল গ্রহে পৌঁছনো সম্ভব হবে। ইঞ্জিনটি তৈরি করেছে রাশিয়ার পরমাণু গবেষণা সংস্থা রোসাটমের ট্রয়েটস্ক ইনস্টিটিউট। তাদের দাবি, এই প্রযুক্তি মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে।
নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার
এই ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ম্যাগনেটো প্লাজ়মা প্রপালশান সিস্টেম’। এটি হাইড্রোজেন আয়নের মাধ্যমে তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে, যা প্রচণ্ড শক্তিশালী থ্রাস্ট তৈরি করতে সক্ষম। ফলে মহাকাশযানের গতিবেগ অনেকটাই বাড়বে। রোসাটমের মতে, এই ইঞ্জিনের গতি হবে সেকেন্ডে ১০০ কিলোমিটার, অর্থাৎ ঘণ্টায় ৩.৬ লক্ষ কিলোমিটার। বর্তমানে প্রচলিত মহাকাশযানের সর্বোচ্চ গতিবেগ যেখানে ৪.৫ কিলোমিটার/সেকেন্ড, সেখানে এই ইঞ্জিন অনেকটাই এগিয়ে।
পরীক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই ইঞ্জিনের কার্যকারিতা যাচাই করতে ১৪ মিটার লম্বা ও ৪ মিটার চওড়া একটি বিশেষ ভ্যাকুয়াম চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। পরীক্ষার সময় ইঞ্জিনটি ৩০০ কিলোওয়াট শক্তিতে কাজ করেছে এবং টানা ২,৪০০ ঘণ্টা সচল ছিল। তবে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
রকেটের বিকল্প হতে পারে এই প্রযুক্তি
রুশ গবেষকদের মতে, ভবিষ্যতে রকেটের প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতে পারে। এর পরিবর্তে প্লাজ়মা ইঞ্জিন দিয়েই মহাকাশযান ও কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে। এটি মহাকাশযানের কক্ষপথ ঠিক রাখার পাশাপাশি ‘স্পেস টাগ’ হিসেবেও কাজ করতে পারবে।
পরিবেশবান্ধব ও কার্যকরী
এই প্রযুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো হাইড্রোজেন ব্যবহারের কারণে এটি পরিবেশবান্ধব। হাইড্রোজেন পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং এটি অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরী। তাছাড়া, প্রচলিত প্লাজ়মা ইঞ্জিনের তুলনায় এটি অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে না, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে নিরবিচারে কাজ করতে পারে।
২০২৬ সালে মিশন শুরুর সম্ভাবনা
রোসাটম জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই ইঞ্জিনের একটি ফ্লাইট মডেল তৈরি হবে এবং পরীক্ষামূলকভাবে মহাকাশে পাঠানো হবে। সফল হলে এটি ভবিষ্যতে দূরবর্তী গ্রহে অভিযানের পথ খুলে দেবে।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ
তবে এই প্রকল্পের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইঞ্জিনটিকে মহাকাশযানের সঙ্গে সংযুক্ত করার পদ্ধতি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এছাড়া, মহাকাশযানের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পারমাণবিক চুল্লি দরকার হতে পারে, যা এই ইঞ্জিন বহন করতে পারবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
নাসার নতুন পরিকল্পনা
এদিকে, মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলতে কাজ করছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসাও। তারা ক্যাটাপল্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে। এটি বিদ্যুত্চালিত হওয়ায় পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। ২০২৬ সালের মধ্যে নাসা ক্যাটাপল্ট ব্যবহার করে একাধিক কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে।
মহাকাশ গবেষণার এই নতুন দৌড়ে রাশিয়া ও আমেরিকা, উভয়েই নিজেদের প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তবে প্লাজ়মা ইঞ্জিন যদি সফল হয়, তাহলে তা মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে এক বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।