তীব্র বিতর্কের পর লোকসভায় পাশ হল ওয়াকফ সংশোধনী বিল, কেন্দ্রের দাবি দেশের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

তীব্র বিতর্কের পর লোকসভায় পাশ হল ওয়াকফ সংশোধনী বিল, কেন্দ্রের দাবি দেশের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
সর্বশেষ আপডেট: 03-04-2025

দীর্ঘ রাজনৈতিক বিতর্ক ও মতবিরোধের পর লোকসভায় পাশ হয়ে গেল ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪। বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২৮৮ জন সাংসদ, বিপক্ষে ভোট পড়েছে ২৩২টি। বুধবার গভীর রাতে দীর্ঘ আলোচনার পর এই গুরুত্বপূর্ণ বিলটি পাস হয়। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার এই বিলকে দেশের স্বার্থে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে দাবি করেছে, বিরোধীরা একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে কটাক্ষ করেছে।

এই বিল পেশের আগে থেকেই সংসদের পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার এই সংশোধনীকে ওয়াকফ সম্পত্তির স্বচ্ছতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে, অন্যদিকে বিরোধী দলগুলি একে বিতর্কিত ও বিভাজন সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখিয়েছে।

সংসদে উত্তপ্ত বিতর্ক, কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করলেন রিজিজু

বিরোধীদের আক্রমণের মুখে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু পাল্টা জবাব দেন। তিনি বলেন, "আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। এই বিলের মাধ্যমে দেশের ওয়াকফ সম্পত্তির যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে এবং অনিয়ম বন্ধ হবে। যারা এই বিলের বিরোধিতা করছেন, তারা বিষয়টি সঠিকভাবে না বুঝেই সমালোচনা করছেন।"

তবে, বিরোধীদের অভিযোগ ভিন্ন। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব এই বিল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "বিজেপির মধ্যে এখন প্রতিযোগিতা চলছে, কে কতটা বেশি কট্টরপন্থী হতে পারে। এই বিল সংখ্যালঘুদের স্বার্থবিরোধী এবং ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা মাত্র।"

বিলের বিরোধিতায় কংগ্রেসও সরব হয়। দলটির একাধিক নেতার বক্তব্য, "ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে আগের আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা যেত, কিন্তু এই বিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে। এটি সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ।"

মমতার কড়া প্রতিক্রিয়া, বিরোধীদের প্রতিবাদ অব্যাহত

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলের বিরোধিতা করে বলেন, "কর্ম যার, ধর্ম তার। আমি সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করি। আমাদের সাংসদরা পার্লামেন্টে এই বিলের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং আমরা এর বিরোধিতা চালিয়ে যাব। আশা করি শুভবুদ্ধির উদয় হবে।"

তিনি আরও বলেন, "এই বিল বাস্তবায়িত হলে বহু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সরকারকে এই বিল নিয়ে আরও স্বচ্ছতা বজায় রাখা উচিত ছিল।"

এদিকে, সংসদের ভেতরে-বাইরে বিরোধীদের এই প্রতিবাদের মধ্যেও বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট করেছে যে, তারা এই বিলের বাস্তবায়ন চায় এবং এটি ওয়াকফ সম্পত্তির যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাজনৈতিক অস্থিরতার ইঙ্গিত, রাজ্যসভায় কঠিন পরীক্ষা

ওয়াকফ সংশোধনী বিলের পাশ হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সরকার একে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার উদ্যোগ বলে দাবি করলেও বিরোধীরা একে একপাক্ষিক ও রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ বলেই দেখছে।

এখন সকলের নজর রাজ্যসভার দিকে। সেখানে বিলটি পাশ করানো কেন্দ্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা এই বিলের বিরুদ্ধে সেখানে আরও কড়া অবস্থান নেবে। তাই এখন দেখার বিষয়, রাজ্যসভায় এই বিল কতটা সমর্থন পায় এবং দেশের রাজনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কতটা পড়ে।

Leave a comment